সে হিসাবে বছরে খরচ হচ্ছে অন্তত তিন কোটি ছয় লাখ টাকা।সরকারের ব্যয় সাশ্রয় করতে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর গত ৪ সেপ্টেম্বর সচিবালয়ে জায়গা চেয়ে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে আধা-সরকারিপত্র (ডিও) দেয় প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়টির অনুমোদিত ১৫০ জনবলের জন্য সচিবালয়ের নবনির্মিত ভবনে ৩০ হাজার বর্গফুট জায়গা বরাদ্দ চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, এই মন্ত্রণালয়ের বেশির ভাগ কাজ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, অর্থ, জনপ্রশাসন, স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র সংশ্লিষ্ট হওয়ায় সচিবালয়ের ভেতরে স্থানান্তর করা অত্যাবশ্যক।এটি করা হলে সরকারের প্রতিবছর সাশ্রয় হবে তিন কোটি ছয় লাখ টাকা। কিন্তু এখনো জবাব মেলেনি আবেদনের। শুধু প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় নয়, এ ধরনের অন্তত ৩০টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ অফিসকক্ষের জন্য জায়গা বরাদ্দ চেয়ে চিঠি দিয়েছে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে। নিজ দপ্তর ও মন্ত্রণালয়ের অফিস বরাদ্দ চেয়ে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে ডিও দিয়েছেন অন্তত চারজন উপদেষ্টা ও বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের আটজন সচিব।এ নিয়ে মহাবিপাকে পড়েছে পূর্ত মন্ত্রণালয়। জায়গা সংকটের সুরাহা করতে হিমশিম খাচ্ছেন মন্ত্রণালয়ের কর্তা ব্যক্তিরা। তবে তাঁরা নাম প্রকাশ করে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। জানা গেছে, প্রশাসনের পরিধি দিন দিনই বাড়ছে। অনুমোদিত পদ বাড়ানোর কারণে বাড়ছে জনবলও।জায়গা সংকটের কারণে অনেক মন্ত্রণালয় ও বিভাগের বিভিন্ন অনুবিভাগ ও দপ্তর সচিবালয়ের বাইরের বিভিন্ন ভবনে স্থানান্তর করা হয়েছে। চাহিদা বাড়ার কারণে প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র বাংলাদেশ সচিবালয়ের আকার আরো বড় করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ লক্ষে সচিবালয়সংলগ্ন গুলিস্তানের পুরনো জিপিও ভবনের প্রায় পাঁচ একর জায়গা নিতে যাচ্ছে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। তাতে নির্মাণ করা হবে নজরকাড়া সব ভবন। সচিবালয়ের সঙ্গে ওই সব ভবনে যাতায়াতের জন্য পূর্ব পাশের রাস্তার ওপর দিয়ে সংযোগ সেতু ও নিচ দিয়ে তৈরি করা হবে পাতাল পথ। এরই মধ্যে এসংক্রান্ত প্রস্তাবের সারসংক্ষেপ সম্মতি দিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর। গুলিস্তানের সাবেক ডাক অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কার্যালয় শেরেবাংলানগরে স্থানান্তর করা হয়েছে। সেখানে ডাকবক্সের আদলে দৃষ্টিনন্দন বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। সেখান থেকেই জিপিওর সব কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। পুরনো জিপিওর বিশাল জায়গা পরিত্যক্ত। সচিবালয়ে অর্থবিভাগ ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের জন্য দুটি সুউচ্চ বহুতল ভবন নির্মাণ করে সেখানে এই দুটি মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে স্থানান্তর করা হয়েছে। অনেক আগেই সচিবালয়ের কয়েকটি ভবনকে ব্যবহার অনুপযোগী ঘোষণা করা হয়েছে।কিন্তু জিপিও’র জায়গায় নতুন সচিবালয় নির্মাণ প্রস্তাবে আপত্তি জানিয়েছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ। তারা এখনো জমিটি গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে হস্তান্তর করছে না। বিষয়টি নিয়ে গত ৩০ জুন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগকে ডিও দিয়েছে পূর্ত মন্ত্রণালয়। এতে বলা হয়, বাংলাদেশ সচিবালয়ের জন্য নির্ধারিত ২০.৮৩ একর জমিতে বর্তমানে ৪১টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। প্রতিনিয়ত বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কার্যক্রম ও জনবল বৃদ্ধি পাচ্ছে। এরই মধ্যে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কাছে ৩০টি মন্ত্রণালয় অফিসকক্ষ বরাদ্দ চেয়ে পত্র দিয়েছে। এ ছাড়া চারজন উপদেষ্টা ও আটজন সচিব তাঁদের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের জন্য স্থান বরাদ্দ চেয়ে আধা-সরকারি পত্র দিয়েছেন। পর্যাপ্ত স্থান সংকুলান না হওয়ায় মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে প্রয়োজনীয় কক্ষ বরাদ্দ দেওয়া গহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। ফলে এসব মন্ত্রণালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এ বিষয়টি বিবেচনাপূর্বক জিপিওর স্থানে সচিবালয়ের কার্যক্রম সম্প্রসারণের জন্য বর্ণিত জমি বিনামূল্যে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে হস্তান্তরের প্রস্তাবে প্রধান উপদেষ্টা সদয় অনুমোদন দিয়েছেন। সরকার প্রধানের অনুমোদন ও অভিপ্রায় বাস্তবায়ন করা আবশ্যক।