গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে এ তথ্য জানা গেছে।একসময় গাড়ির পুরোনো যন্ত্রাংশ ও সিএনজি পাম্প ব্যবসায় যুক্ত ছিলেন জসিম। পরে সোনা চোরাচালানের সঙ্গেও নাম জড়ায়। ২০১৯ সালের পর থেকে হঠাৎ করেই আজমানের আবাসন খাতে বড় বিনিয়োগ শুরু করেন তিনি।সেখানকার সরকারি নথি অনুযায়ী, ইউনুছ রিয়েল এস্টেট ও জেআর কন্ট্রাকটিং নামে দুটি প্রতিষ্ঠানের মালিক তিনি। আজমানে ২৬টি অভিজাত ভবনের মালিক জসিম, যার প্রতিটি ভবনেই রয়েছে ২০টির মতো ফ্ল্যাট। ফ্ল্যাটগুলো বিক্রি হচ্ছে ১৫–২৫ লাখ দিরহামে, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৫–৯ কোটি টাকা।স্থানীয়রা জানান, ওই এলাকায় এত বড় প্রকল্প তাঁর মালিকানায় থাকায় এলাকাটি মুখে মুখে জসিমের নামেই পরিচিত।বাংলাদেশ ব্যাংক অবশ্য জানিয়েছে, জসিম বৈধভাবে বিদেশে অর্থ পাঠানোর অনুমতি নেননি। ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান বলেন, বিদেশে ব্যবসার অনুমতি দেওয়া হলেও কারো ব্যক্তিগতভাবে ফ্ল্যাট বা বাড়ি কেনার অনুমতি নেই।বিশ্বব্যাপী আর্থিক বিশ্লেষণ সংস্থা ইইউ ট্যাক্স অবজারভেটরির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২০ পর্যন্ত ৪৫৯ জন বাংলাদেশি দুবাই ও আশপাশে ৯৭২টি সম্পদ কিনেছেন, যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা। এর পেছনে হুন্ডি ও সোনা চোরাচালানের অর্থ ব্যবহারের আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।চট্টগ্রামের রাউজানেও জসিমের দান–অনুদান আর সামাজিক কর্মকাণ্ড নিয়ে এলাকায় বেশ সুনাম আছে।বাবার নামে ‘ইউনুছ-আলমাস ফাউন্ডেশন’ গড়ে তুলে তিনি মসজিদ বানিয়েছেন, অসহায়দের ঘর দিয়েছেন, মেয়েদের বিয়েতে সহায়তা করেছেন। স্থানীয়রা জানান, এর ফলে এলাকায় তাঁকে ‘ভালো মানুষ’ বলেই চেনেন সবাই।তাঁর শ্যালক আশরাফুল হক ২০২২ সালে সাড়ে ১১ কেজি সোনা চোরাচালান মামলার আসামি হয়ে দেশ ছেড়েছেন। আর পরিবারের অন্য সদস্যরা রাউজানে সিএনজি পাম্প ও গাড়ির যন্ত্রাংশের ব্যবসা চালাচ্ছেন।ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, জসিমের বিদেশে এত সম্পদ বৈধ আয়ে হয়েছে কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। হুন্ডি বা স্বর্ণ চোরাচালানের মাধ্যমে অর্থপাচার হয়েছে কি না, তা তদন্ত করা জরুরি। বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) এ বিষয়ে সহযোগিতা চাইলে তথ্য বের করা সম্ভব।প্রবাসী আয়ের শীর্ষ এলাকা চট্টগ্রামের রাউজান থেকে বৈধ–অবৈধ পথে প্রচুর অর্থ বিদেশে গেছে বলে স্থানীয় ব্যাংক কর্মকর্তারাও জানান। এখানকার নোয়াপাড়ায় ২০টির বেশি ব্যাংকের শাখা রয়েছে। ইসলামী ব্যাংকের নোয়াপাড়া শাখার ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ নুরুল আফসার বলেন, ‘জসিম এলাকায় একাধিক সিএনজি পাম্পের মালিক। দানশীল মানুষ হিসেবেই পরিচিত।’২০১৯ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাত সাড়ে ছয় কোটি টাকা বিনিয়োগের শর্তে ‘গোল্ডেন ভিসা’ চালু করলে আজমান ও দুবাইয়ে বাংলাদেশিদের জমি–ফ্ল্যাট কেনার প্রবণতা বেড়ে যায়। এই সুযোগেই জসিম ও তাঁর পৃষ্ঠপোষকরা বিনিয়োগ বাড়িয়েছেন বলে ধারণা স্থানীয়দের।রাউজান থেকে প্রবাসী আয়ের স্রোত আর বিত্তশালীদের অর্থে আজমানের জসিমের আবাসন সাম্রাজ্য আজ আলোচনায়। তবে এর উৎস কীভাবে, তা এখনো অজানা।