প্রায় চার দশক আইনি লড়াইয়ের পর গতবছর অর্থ আত্মসাতের মামলা থেকে রেহাই পেয়েছিলেন কুষ্টিয়ার খোকসার হেলালপুর গ্রামের বাসিন্দা হরেন্দ্রনাথ চন্দ্র (৭৮)। মামলার খরচ হিসেবে তাঁকে ২০ লাখ টাকা দিতে সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছিলেন সর্বোচ্চ আদালত।
ওই রায়ের পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে আবেদন করেছিল সোনালী ব্যাংক। বৃহস্পতিবার সেই আবেদন খারিজ করে আগের রায়ই বহাল রেখেছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন ছয় বিচারপতির আপিল বিভাগ বেঞ্চ।আদালতে হরেন্দ্রনাথের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ওমর ফারুক। তিনি সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইডের হয়ে হরেন্দ্রনাথকে আইনি সহায়তা দিয়েছেন। সোনালী ব্যাংকের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শামীম খালেদ।আইনজীবী ওমর ফারুক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সোনালী ব্যাংকের রিভিউ খারিজ করায় হরেন্দ্রনাথকে ২০ লক্ষ টাকা দিতেই হবে সোনালী ব্যাংককে।এই টাকা না দেওয়ার আর কোনো সুযোগ নেই।’
মামলা বৃত্তান্ত
বিএ পাস করে ১৯৭৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর ক্যাশিয়ার-কাম ক্লার্ক পদে সোনালী ব্যাংকে ঢাকার একটি শাখায় যোগ দেন হরেন্দ্রনাথ চন্দ্র। তিন বছর পর পদোন্নতি পেয়ে সিনিয়র ক্যাশিয়ার-কাম ক্লার্ক হন। এরপর ব্যাংক তাঁকে যাত্রাবাড়ী শাখায় বদলি করে।সেখানে যোগ দেওয়ার পর এই শাখা থেকে ১৬ লাখ ১৬ হাজার ১০০ টাকা আরেকটি শাখায় স্থানান্তর করেন হরেন্দ্রনাথ। সংশ্লিষ্ট শাখার কর্মকর্তা সিল-স্বাক্ষর দিয়ে পুরো টাকা বুঝে নেন। এর কিছুদিন পর ১৯৮৫ সালে ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ তদন্তে ওই টাকা পাওয়া যায়নি বলে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। পরে তহবিল তছরুপের অভিযোগে ওই বছরই হরেন্দ্রসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করে সোনালী ব্যাংক। ১৯৮৬ সালের মার্চ মাসে তাদের সবাইকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।এদিকে, গ্রাহকের টাকা আত্মসাতের অভিযোগে আরেক মামলায় ১৯৮৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে স্থাপিত সামরিক আদালতের বিচারে হরেন্দ্রনাথের সাত বছর কারাদণ্ড হয়। ১৯৯০ সালে হরেন্দ্রনাথ জেল খেটে বের হন। এর আগে ১৯৮৫ সালের ২৯ জুলাই হরেন্দ্রনাথসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ঢাকার বিশেষ আদালতে ফৌজদারি মামলা করে তৎকালীন দুর্নীতি দমন ব্যুরো। বিচারে ১৯৮৬ সালের ১৫ নভেম্বর বেকসুর খালাস পান হরেন্দ্রনাথসহ সবাই। মামলায় হেরে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ গোপনে ১৯৮৮ সালে হরেন্দ্রসহ সবার বিরুদ্ধে অর্থঋণ আদালতে মামলা করে। সেই মামলায় একতরফা রায়ে তাদের দোষী সাব্যস্ত করে পুরো অর্থ ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেন আদালত। এর বিরুদ্ধে আবেদন (মিস কেস) করেন হরেন্দ্রনাথ। ১৯৯২ সালের ১৯ আগস্ট ঢাকার যুগ্ম জেলা জজ আদালত আপিল গ্রহণ করে বিচারিক আদালতের আদেশ বাতিল করেন। এই রায়ের বিরুদ্ধে সোনালী ব্যাংক ২০১৯ সালে হাইকোর্টে আপিল করে। ২০২২ সালের ২৯ আগস্ট আপিল খারিজ করে দেন হাইকোর্ট। ২০২৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। সেই আবেদন খারিজ করে এবং হাইকোর্টের রায় বহাল রেখে গত বছর ৯ ডিসেম্বর রায় দেন আপিল বিভাগ। ওই রায় পুনর্বিবেচনা চেয়েই আবেদন করেছিল সোনালী ব্যাংক, যা বৃহস্পতিবার খারিজ করে দেওয়া হয়।