ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভে অংশ নেওয়ায় প্রায় ৮০ শিক্ষার্থীকে শাস্তি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়। গতকাল মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়টি ঘোষণা করেছে, ইসরায়েলবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে বহিষ্কার, ডিগ্রি বাতিল এবং বিভিন্ন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের সঙ্গে ৪০০ মিলিয়ন ডলারের ফেডারেল তহবিল পুনরুদ্ধারের জন্য আলোচনা করার সময় এই নিষেধাজ্ঞাগুলো জারি করেছে প্রতিষ্ঠানটি। বিশ্ববিদ্যালয় এক বিবৃতিতে জানায়, এই শাস্তির আওতায় প্রায় ৮০ জন শিক্ষার্থী পড়েছে বলে একটি ছাত্র সংগঠন দাবি করেছে।এসব পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে এক থেকে তিন বছর পর্যন্ত বরখাস্ত, প্রবেশন, ডিগ্রি বাতিল এবং স্থায়ী বহিষ্কার।বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়েছে, এই শাস্তিগুলো মূলত গত মে মাসে বাটলার লাইব্রেরিতে বিশৃঙ্খলা ও ২০২৪ সালের বসন্তে ‘অ্যালামনাই উইকেন্ড’-এ তাবু স্থাপন করে ক্যাম্পাসে অবস্থানের ঘটনার সঙ্গে যুক্ত। লাইব্রেরির বিক্ষোভের ফলে পরীক্ষার সময় শত শত শিক্ষার্থীর পড়াশোনা ব্যাহত হয়েছিল বলে তারা জানিয়েছে। বিবৃতিতে আরো বলা হয়, শিক্ষা কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটানো বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা ও নিয়মের লঙ্ঘন।এমন লঙ্ঘনের জন্য অবশ্যই পরিণাম ভোগ করতে হবে।গতকাল মঙ্গলবার শিক্ষার্থীদের সংগঠন কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি অ্যাপারথিড ডাইভেস্ট (সিইউএডি) জানিয়েছে, যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার কারণে এখন পর্যন্ত প্রায় ৮০ শিক্ষার্থীকে হয় বহিষ্কার করা হয়েছে, নয় তিন বছর পর্যন্ত তাদের শিক্ষা কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ইসরায়েলের সঙ্গে সব ধরনের আর্থিক সম্পর্ক ছিন্ন করার দাবি জানিয়ে আসছে এ সংগঠন।সিইউএডি আরো জানিয়েছে, লাইব্রেরি আন্দোলনের জন্য দেওয়া শাস্তিগুলো অতীতের যেকোনো আন্দোলনের তুলনায় ‘বহুগুণ বেশি কঠোর।আমাদের প্রতিরোধ চালিয়ে যাব। আমরা ফিলিস্তিনিদের মুক্তির পক্ষে সংগ্রামে অঙ্গীকারবদ্ধ।’ট্রাম্প বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে ‘অ্যান্টিসেমিটিজম মোকাবিলায় ব্যর্থতা’র অভিযোগ তুলে চাপ প্রয়োগ করছেন। ২০২৩ সালে গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধবিরোধী জাতীয় আন্দোলনের সময় কলম্বিয়া ছিল এই আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সরকারি তহবিল ফেরত পেতে একাধিক নীতিগত পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যা অনেক ছাত্রছাত্রী ও কর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে।ইতিমধ্যে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ও ট্রাম্প প্রশাসনের চাপের মুখে পড়েছে, যেখানে বিলিয়ন ডলারের ফেডারেল অর্থায়ন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে হার্ভার্ড এই চাপের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, কলম্বিয়া ও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপর চাপ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর হুমকি সৃষ্টি করতে পারে।