চালের বাজারে অস্থিরতা চলছেই। রাজধানীর খুচরা বাজারে চিকন চালের (মিনিকেট) দাম কেজিতে ৮ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। মাঝারি ও মোটা চালও কেজিতে তিন থেকে পাঁচ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে। চট্টগ্রামেও চালের বাজার অস্থির।
চালের বাজারে অস্থিরতা চলছেই। রাজধানীর খুচরা বাজারে চিকন চালের (মিনিকেট) দাম কেজিতে ৮ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। মাঝারি ও মোটা চালও কেজিতে তিন থেকে পাঁচ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে। চট্টগ্রামেও চালের বাজার অস্থির।
চট্টগ্রামেও দাম বেড়েছে, প্রতিবাদে মানববন্ধন : চট্টগ্রামে চালের বড় পাইকারি আড়ত পাহাড়তলী ও চাক্তাই চালপট্টিতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কোরবানির ঈদের সময় মোটা চাল হিসেবে পরিচিত গুটি ও স্বর্ণা ৫০ কেজির বস্তা বিক্রি হয়েছে এক হাজার ৯০০ টাকা। এখন ১০০ টাকা দাম বেড়ে সেটি দুই হাজার টাকা। জিরাশাইল চাল ২৫ কেজির বস্তা ছিল এক হাজার ৯৫০ টাকা, সেটি ২০০ টাকা বেড়ে এখন দুই হাজার ১৫০ টাকা। বেতি আতপ চাল ৫০ কেজির বস্তা এখন তিন হাজার টাকা। কোরবানির আগে বস্তা বিক্রি হয়েছিল ১৫০ টাকা কমে। মিনিকেট ৫০ কেজির বস্তা তিন হাজার ৭০০ টাকা। জুনে দাম ৩০০ টাকা কম ছিল।পাইকারি ব্যবসায়ীদের দাবি, বর্তমানে গাড়িভাড়া বেড়েছে, ধানের দামও বেড়েছে। এ ছাড়া চালকলে খরচ বেশি পড়ায় দামে প্রভাব পড়েছে।চট্টগ্রামের পাহাড়তলী বণিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন বলেন, আগে যেখানে পরিবহন খরচ ২০ হাজার টাকা ছিল, সেখানে এখন ৩০ হাজার টাকা। মাঝে প্রায় ১৫ দিন ঈদের কারণে চালকল বন্ধ ছিল। তখন মিলে শ্রমিকরা কাজ করেননি। এর প্রভাব চালের সরবরাহ পড়েছে। ফলে সব মিলিয়ে দাম বেড়েছে।চট্টগ্রাম রাইস মিল মালিক সমিতির সভাপতি ফরিদ উদ্দিন আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, হঠাৎ করে চালের সরবরাহ কমার কারণে দাম বেড়েছে। করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো চাষিদের অগ্রিম টাকা দিয়ে চাল কিনে নিচ্ছে। এতে মিল মালিকরা ধান পাচ্ছেন না।চালের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে ‘ভাতের পাতে স্বস্তি ফেরাও’—স্লোগানকে সামনে রেখে মানববন্ধন করেছে চট্টগ্রাম নাগরিক সমাজ। গতকাল সকালে চট্টগ্রাম নগরীর জামালখান প্রেস ক্লাব চত্বরে এই মানববন্ধন হয়। এতে বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ ও সংগঠনের প্রতিনিধি অংশ নেন। মানববন্ধনে যৌথভাবে অংশ নেয় বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তা নেটওয়ার্ক (খানি), কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম, প্রাণ ও আইএসডিই বাংলাদেশ।
দিনাজপুরে বস্তায় বেড়েছে ৫০০ টাকা : দিনাজপুরে ৫০ কেজির চালের বস্তায় ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে। জুন মাসে চালের দাম ৫০ কেজির বস্তায় ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা বেড়ে যায়। পরে অবশ্য সামান্য দাম কমেছে।দিনাজপুর শহরের সবচেয়ে বড় চালের মোকাম বাহাদুর বাজারে মিনিকেট ৫০ কেজির বস্তা তিন হাজার ৩০০ থেকে বেড়ে তিন হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে তিন হাজার ২৫০ থেকে তিন হাজার ৭০০ টাকা। বিআর ২৭ জাতের চাল ৫০ কেজির বস্তা বেড়ে তিন হাজার ৫০ থেকে তিন হাজার ৩৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, যা বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার ৯৫০ থেকে তিন হাজার ২৫০ টাকায়।উপশহর খেড়পট্টি থেকে চাল কিনতে আসা রিকশাচালক সিদ্দিক হোসেন বলেন, মোটা চালের দাম প্রতি কেজিতে ছয় থেকে আট টাকা বাড়ায় সবজি কিনতে কষ্ট হচ্ছে।বাহাদুর বাজারের চাল ব্যবসায়ী সৌরভ ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী আশরাফ আলী ও এরশাদ ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী এরশাদ হোসেন বলেন, চালের দাম হঠাৎ করে মিল গেটে বেড়ে যায়। তাই আমাদের বেশি দামে বিক্রি করতে হয়েছে। এখন কিছুটা কম দামে পাচ্ছি। ৫০ কেজির বস্তাপ্রতি ৭০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত কমে বিক্রি করছি।বাংলাদেশ মেজর অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতির সহসভাপতি শহীদুর রহমান পাটোয়ারী মোহন বলেন, বাজারে ধানের দাম বাড়ায় চালের দাম বেড়েছে।
নওগাঁয় দাম বেড়ে আর কমছে না : নওগাঁয় সপ্তাহের ব্যবধানে প্রকারভেদে পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি চালের দাম বেড়েছে দুই থেকে চার টাকা। পাইকারিতে চালের দাম বাড়ায় খুচরায় কেজিতে বেড়েছে পাঁচ থেকে ছয় টাকা।নওগাঁ জেলার সবচেয়ে বড় চালের মোকাম শহরের পার নওগাঁর আলুপট্টির (আড়তদার পট্টি) চালের আড়তগুলোতে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, গত ১০ দিনের ব্যবধানে প্রকারভেদে প্রতি কেজি চালের দাম দুই থেকে চার টাকা পর্যন্ত বেড়ে জিরাশাইল ৬৮ থেকে ৭০ টাকা, শুভলতা ৬০ থেকে ৬২ টাকা, কাটারি ৭০ থেকে ৭২, ব্রিআর-২৮ চাল ৬২ থেকে ৬৪ টাকা এবং স্বর্ণা-৫ জাতের চাল ৫৫ থেকে ৫৬ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অথচ গত ১০ দিন আগেও জিরাশাইল ৬৪ থেকে ৬৬ টাকা, কাটারি ৬৬ থেকে ৬৮ টাকা, শুভলতা ৫৭ থেকে ৫৮ টাকা, ব্রি আর-২৮ জাতের চাল ৫৯ থেকে ৬০ টাকা এবং স্বর্ণা-৫ চাল ৫৩ থেকে ৫৪ টাকা দরে বিক্রি হয়েছিল।নওগাঁ জেলা চালকল মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার বলেন, বেশি দামে ধান কিনতে হচ্ছে, যার ফলে চালের দাম কিছুটা বেড়েছে। প্রকারভেদে দু-তিন টাকা বেড়েছে।