নেতা-কর্মীদের মাঠে নামার আহ্বান জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, ‘আপনারা এখনই মাঠে নেমে পড়ুন। মাঠে না নামলে দেশ ধ্বংস হয়ে যাবে। ইতিহাস ঘেঁটে দেখুন, প্রতিবার দেশকে রক্ষা করেছে বিএনপি। এখন আবার দায়িত্ব কাঁধে এসে পড়েছে। মানুষের কাছে যান।’ মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে তারেক রহমান বলেন, ‘বিগত স্বৈরাচারের সময় রাজনৈতিক কর্মীদের পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মানবাধিকার হরণ করা হয়েছিল। দল হিসেবে বিএনপি সবচেয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয়েছিল। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে আগামীতেও ভিন্নমতাদর্শের মানুষ যাতে নিরাপদে মতামত জানাতে পারে, সেই ব্যবস্থা করবে।’ তারেক রহমান বলেন, ‘যার যার মতাদর্শ অনুযায়ী কথা বলবে। সিদ্ধান্ত নেবে জনগণ। আগামী দিনে বিএনপি চায় মতামত প্রকাশের জন্য আবরার ফাহাদের মতো যেন হত্যাকাণ্ডের শিকার হতে না হয়।’
এর আগে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন, ঢাকা মহানগরী উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক, বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি মীর শাহে আলম, যুবদল সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না, সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, কৃষক দল সভাপতি হাসান জাফির তুহিন, সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল প্রমুখ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। সঞ্চালনা করেন যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল।
১৬ বছর কালো মেঘের নিচে চাপা পড়ে ছিল বাংলাদেশ : এদিকে গতকাল আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তাঁর ফেসবুক স্ট্যাটাসে আওয়ামী লীগ আমলের গুমখুন, বিচারবহির্ভূত হত্যার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘১৬ বছর কালো মেঘের নিচে চাপা পড়ে ছিল বাংলাদেশ।’ তিনি বলেন, ‘বিএনপি আজ প্রতিশোধের রাজনীতি প্রত্যাখ্যান করছে। আমরা সমাধানের পথে বিশ্বাসী। আমরা এই প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি যে কোনো বাংলাদেশিকে রাষ্ট্রের ভয়ে বাঁচতে হবে না। তা সে সরকারের সমর্থক হোক বা বিরোধী।’ তারেক রহমান বলেন, ‘১৬টা বছর ধরে বাংলাদেশ একটা কালো মেঘের নিচে চাপা পড়ে ছিল। কেউ সেই অন্ধকারকে খুব তীব্রভাবে টের পেয়েছে, কেউ চুপচাপ বয়ে বেড়িয়েছে। কিন্তু যাদের রাজনৈতিক অবস্থান তখনকার পতিত সরকারের বিপরীতে ছিল, তাদের জন্য এই অন্ধকার ছিল নিত্যদিনের বাস্তবতা।’
তিনি বলেন, ‘রাতের বেলা দরজায় কড়া নাড়া, মিথ্যা মামলা, নির্যাতন, ভয়কে সংস্কৃতি বানিয়ে ফেলা, আর অসংখ্য পরিবার অপেক্ষা করেছে সেই প্রিয়জনদের জন্য, যারা আর কোনো দিন ঘরে ফিরে আসেনি।’
তিনি আরো বলেন, ‘এই বোঝা বিএনপির চেয়ে বেশি আর কেউ বহন করেনি। বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, হেফাজতে মৃত্যু, মিথ্যা মামলা সব জায়গায় বিএনপির নেতা-কর্মীরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। ২০২৪ সালের গণ অভ্যুত্থানেও সবচেয়ে বেশি রক্ত ঝরেছে বিএনপির ঘরেই। কিন্তু অত্যাচারের শিকার শুধু বিএনপি ছিল না; ছাত্র, সাংবাদিক, লেখক, পথচারী, সাধারণ মানুষ-সবাই সেই ভয়ংকর পরিবেশের ক্ষত বয়ে বেড়িয়েছে, ন্যূনতম মানবাধিকার হিসেবে বিবেচিত মর্যাদা, নিরাপত্তা, মত প্রকাশের অধিকারের মতো মৌলিক সব বিষয় ছিল হুমকির মুখে।’
তারেক রহমান আরো বলেন, ‘এই পুরো অন্ধকার সময়টায় দেশনেত্রী খালেদা জিয়া ছিলেন আমাদের ধৈর্য ও প্রতিরোধের সবচেয়ে বড় প্রতীক। মিথ্যা মামলা, কারাবাস, তাঁকে রাজনৈতিকভাবে নিঃশেষ করে দেওয়ার চেষ্টা এসবই পুরো দেশের ওপর চাপিয়ে দেওয়া এক কর্তৃত্ববাদী শাসনের প্রতিফলন। তবু তিনি তাঁর গণতান্ত্রিক আদর্শ থেকে কখনো সরে যাননি। তাঁর বিশ্বাস একটাই-অধিকার সবার; ভয় দেখিয়ে দেশকে এগোনো যায় না।’
তারেক রহমান বলেন, ‘১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার দিবস আমাদের মনে করিয়ে দেয় মানবাধিকারই মানুষের দৈনন্দিন বেঁচে থাকার মৌলিক শর্ত। আমরা আবরার ফাহাদ, মুশতাক আহমেদ, ইলিয়াস আলী, সাজেদুল ইসলাম সুমন, সাগর-রুনি- আর অসংখ্য শহীদের গল্প মনে রাখি, যেন ভবিষ্যতে এমন নিপীড়ন আর দায়মুক্তি আর কখনো ফিরে না আসে।’
তারেক রহমান আরো বলেন, ‘বিএনপি মারাত্মক ক্ষতি সহ্য করেছে, কিন্তু ভেঙে যায়নি। সত্য, ন্যায়, জবাবদিহি, পুনর্মিলন আর আইনের শাসনে বিশ্বাস রেখে আরো দৃঢ় হয়েছে। আমরা এমন একটি বাংলাদেশ গড়তে চাই যেখানে প্রতিটি মানুষের কণ্ঠ, অধিকার ও জীবন মূল্যবান; যেখানে মানবাধিকারই হবে আমাদের ভবিষ্যতের ভিত্তি।’