দৈনন্দিন আর্থিক লেনদেনের পাশাপাশি গ্রাহকরা এখন ঘরে বসে কোনো ঝামেলা ছাড়াই সহজে ও নিরাপদে এনজিও’র ঋণ ও সঞ্চয়ের কিস্তি পরিশোধ করতে পারছেন বিকাশ থেকেই। ব্র্যাক, টিএমএসএস, এসএসএস, পদক্ষেপ, ব্যুরো বাংলাদেশ, শক্তি ফাউন্ডেশনের মতো শীর্ষস্থানীয় প্রায় ৫৩টি এনজিওর গ্রাহকরা বিকাশ অ্যাপ থেকেই ঋণ ও সঞ্চয়ের কিস্তি পরিশোধ করতে পারছেন। এতে গ্রাহকদের সময় ও খরচ বাঁচার পাশাপাশি এনজিওগুলোর অর্থ ব্যবস্থাপনাও হয়েছে আরো নিরাপদ, স্বচ্ছ ও গতিশীল।
স্নাতকে পড়ার সময় থেকেই ব্যবসার প্রতি আগ্রহ চাঁদপুরের রুবেলের।ছাত্র অবস্থায় ছোট ছোট কিছু ব্যবসা করলেও পড়াশুনা শেষ করে নিজের একটা ব্যবসা দাঁড় করানোর চেষ্টা করেন। পরিবারের সহযোগিতা ও ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান ‘দিশা’ থেকে লোন নিয়ে নিজে বিভিন্ন পণ্যের ডিলারশিপের ব্যবসা শুরু করেন। বর্তমানে ব্যবসায় উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে নতুন করে বিনিয়োগও করছেন।একটা সময় রুবেলের মতো লাখ লাখ এনজিও সুবিধাভোগীদের সময় ব্যয় করে অফিসে গিয়ে ঋণের কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে হলেও এখন এসেছে ডিজিটাল পরিবর্তন।সুবিধাভোগীরা এখন তার মুঠোয় থাকা মোবাইল ফোন থেকেই সহজে ও নিরাপদে এনজিও’র ঋণ ও সঞ্চয়ের কিস্তি পরিশোধ করতে পারছেন বিকাশে। রুবেলের মতে— এই ডিজিটাল সুবিধা তার জন্য হয়ে ওঠেছে বিশেষ উপকারী। রুবেল বলেন, ‘আমি বিভিন্ন পণ্য ডিলারশিপের ব্যবসা করি, তাই এক জায়গায় থাকা হয় খুব কম। যেহেতু বিকাশ-এর মাধ্যমে যেকোনো জায়গা থেকেই ঋণের কিস্তির টাকা পরিশোধ করা যায়, আমি সময়মতো বিকাশে কিস্তির টাকা বিকাশে দিয়ে দেই।ঝামেলা কম, কিস্তি নিয়ে টেনশন করতে হয় না।’ রুবেলের মতোই আরেকজন এনজিও সুবিধাভোগী হাজীগঞ্জের লিজা। ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল নিজেদের একটা বাড়ি থাকবে। সেই স্বপ্নপূরণে সহায়ক হয় এনজিও প্রতিষ্ঠান সোসাইটি ফর সোসাল সার্ভিস (এসএসএস) থেকে নেওয়া ঋণ। প্রবাস থেকে স্বামীর পাঠানো টাকা আর এনজিও থেকে নেওয়া ঋণ মিলিয়ে তৈরি হয় তার নিজের ঘর।এখন প্রবাসী স্বামীর মাসে মাসে বিকাশে পাঠানো রেমিট্যান্স থেকে প্রতিমাসের সঞ্চয় ও ঋণের কিস্তি জমা দেন তিনি।লিজা বলেন, আমি একা থাকি। স্বামী বিদেশ থেকে বিকাশ অ্যাকাউন্টে রেমিট্যান্স পাঠায়। সেই টাকা থেকেই সময়মতো কিস্তির টাকা পরিশোধ করে দেই। ফলে টাকা উঠানো বা কিস্তির টাকা জমা দিতে আমার কোথাও যেতে হয় না। মতলব উপজেলার একেবারে নদী ঘেঁষা দশআনি গ্রামের দোকানি লিয়াকত। দোকানের জন্য কিছু টাকা ঋণ নেন ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান ‘পদক্ষেপ’ থেকে। কিন্তু দোকান রেখে উপজেলা সদরে গিয়ে মাসে মাসে কিস্তির টাকা দেওয়া তার ব্যবসার জন্য ক্ষতি মনে করেন লিয়াকত। বলেন, এখন আমাকে দীর্ঘ সময় দোকান বন্ধ রেখে সদরে গিয়ে কিস্তির টাকা জমা দিতে হয় না। মোবাইল থেকে বিকাশ অ্যাকাউন্ট থেকেই কিস্তির টাকা পরিশোধ করে দেই। এতে আমারও সুবিধা, যারা কিস্তির টাকা নেয় তাদেরও সুবিধা। চাঁদপুরের রুবেল, লিজা, লিয়াকতদের মতো সারা দেশের লাখ লাখ এনজিও সুবিধাভোগীরা এখন বিকাশ থেকে ঋণ ও সঞ্চয়ের কিস্তি পরিশোধ করছে। বিকাশ ও দেশের শীর্ষ ক্ষুদ্রঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর এই যৌথ সেবার ফলে ক্ষুদ্রঋণকে আরো কার্যকর ব্যবহার করে একদিকে যেমন সাধারণের বিশেষ করে নারীদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করেছে, তেমনি গ্রামীণ ও আঞ্চলিক অর্থনীতিতে এনেছে গতিশীলতা। বেড়েছে কর্মসংস্থান, নিশ্চিত হচ্ছে শিক্ষা ও চিকিৎসাসেবা গ্রহণ। কেবল গ্রাহকের জন্য নয়, এই ডিজিটাল পরিশোধ ব্যবস্থাকে সুবিধাজনক মনে করছেন এনজিও কর্মীরাও। বিকাশের এই ডিজিটাল গ্রাহকবান্ধব সল্যুশন এনজিওগুলোর ক্যাশ ম্যানেজমেন্টকে সহজ করেছে। সহজেই কিস্তি ও সঞ্চয়ের টাকা সংগ্রহ, ২৪/৭ লেনদেনের রিপোর্টিং, ক্যাশ বহন করার ঝুঁকি এড়ানো, কর্মঘণ্টা সাশ্রয় ও কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে সার্বিক ক্ষুদ্রঋণ খাতে দক্ষতা ও গতিশীলতা এনেছে।সোসাইটি ফর সোসাল সার্ভিস (এসএসএস) এর চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জের রামপুর শাখার ম্যানেজার সোহানুর রহমান সোহাগ বলেন, বিকাশ লেনদেনে ক্যাশ টাকার কোনো বিষয় নেই। সদস্যরা বিকাশে টাকা জমা দেয়, তা আবার সরাসরি ব্যাংকে চলে যায়। সেক্ষেত্রে ঝুঁকি একেবারে শূন্য। হাতে হাতে টাকা জমা নেওয়াতে চুরির ভয় থাকে, ডিজিটাল পদ্ধতিতে এই ঝুঁকি নেই। ফলে আমাদের সদস্যরাও নিরাপদে তাদের টাকা জমা দিতে পারেন, আবার আমাদের অফিস কর্তৃপক্ষও নিরাপদ থাকে।
যেভাবে বিকাশ অ্যাপ থেকে কিস্তির টাকা পরিশোধ করবেনগ্রাহকরা বিকাশ অ্যাপের ‘মাইক্রোফাইন্যান্স’ আইকনে ট্যাপ করে অথবা ইউএসএসডি কোড *২৪৭# ডায়াল করে খুব সহজ কয়েকটি ধাপে ঋণের কিস্তি পরিশোধ ও সঞ্চয়ের টাকা জমা দিতে পারছেন। প্রথমে অ্যাপ স্ক্রিনে মাইক্রোফাইন্যান্স অপশনে ক্লিক করে তালিকা থেকে নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানটি বেছে নিয়ে ক্লিক করতে হবে। এরপর গ্রাহকের শাখার তথ্য, সদস্য নাম্বার বা আইডি দিতে হবে। পরবর্তী ধাপে কিস্তি ও সঞ্চয়ের বিস্তারিত দেখে টাকার পরিমাণ উল্লেখ করে বিকাশের পিন দিয়ে মাইক্রোফাইন্যান্স পেমেন্ট সম্পন্ন করতে হবে। পেমেন্ট সম্পন্ন হয়ে গেলে অ্যাপ থেকেই ডিজিটাল রিসিট ডাউনলোড করেও রাখতে পারবেন গ্রাহকরা।