থাইল্যান্ড ও কাম্বোডিয়ার মধ্যে চলমান সীমান্ত সংঘর্ষ দ্বিতীয় দিনে গড়িয়েছে এবং পরিস্থিতি আরো জটিল আকার নিচ্ছে। থাইল্যান্ডের ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী ফুমথাম ওয়েচায়াচাই শুক্রবার সতর্ক করে বলেন, ‘সংঘর্ষ যুদ্ধের দিকে গড়াতে পারে।’ ইতিমধ্যে দুই দেশের মধ্যে প্রাণঘাতী হামলা ও পাল্টা হামলায় উভয় পক্ষের সাধারণ জনগণ ও সেনারা হতাহত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুই দেশের বিতর্কিত সীমান্তজুড়ে শুরু হয় তীব্র লড়াই।যুদ্ধবিমান, আর্টিলারি, ট্যাংক ও স্থলসেনা মোতায়েন করে উভয় পক্ষ যুদ্ধকালীন প্রস্তুতি নেয়। শুক্রবার সন্ধ্যায় এই সংকট নিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ জরুরি বৈঠকে বসতে চলেছে।থাইল্যান্ডের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত ১৫ জন নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে ১৪ জনই বেসামরিক এবং একজন সেনাসদস্য।আহত হয়েছে আরো ৪৬ জন, যার মধ্যে ১৫ জন সেনা। দেশটির সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে ১ লাখ ৩৮ হাজারের বেশি মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, কাম্বোডিয়ার ওদ্দার মিনচে প্রদেশ থেকে জানা গেছে, সেখানে একটি গ্রামে গোলাবর্ষণে ৭০ বছর বয়সী এক বৃদ্ধ নিহত হয়েছেন এবং আরো পাঁচজন আহত হয়েছেন।থাই প্রধানমন্ত্রী ফুমথাম ওয়েচায়াচাই বলেন, ‘আমরা প্রতিবেশী হিসেবে আপসের চেষ্টা করেছি, কিন্তু এখন সেনাবাহিনীকে জরুরি প্রয়োজনে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।পরিস্থিতি আরো খারাপ হলে তা যুদ্ধেও রূপ নিতে পারে।’কাম্বোডিয়ার সীমান্তবর্তী শহর সামরংয়ে গোলাগুলির শব্দে আতঙ্কে মানুষ ঘর ছেড়ে পালাচ্ছে। সামরং শহরের কাছাকাছি এএফপির সাংবাদিকরা সেনাদের রকেট লঞ্চার নিয়ে সীমান্তের দিকে দ্রুত এগিয়ে যেতে দেখেন।আঞ্চলিক জোট আসিয়ান-এর বর্তমান চেয়ার মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম বৃহস্পতিবার উভয় দেশের নেতার সঙ্গে কথা বলেন এবং যুদ্ধবিরতি ও সংলাপের আহ্বান জানান। তিনি ফেসবুকে লেখেন, ‘ব্যাংকক ও ফনম পেন উভয় পক্ষ থেকেই ইতিবাচক সাড়া পাওয়া গেছে। তবে আনোয়ারের আশাবাদের মধ্যেই শুক্রবার ভোর ৪টা নাগাদ নতুন করে তিনটি স্থানে সংঘর্ষ শুরু হয়। থাই সেনাবাহিনী জানায়, কাম্বোডিয়ার বাহিনী ভারী অস্ত্র, ফিল্ড আর্টিলারি ও বিএম-২১ রকেট সিস্টেম দিয়ে গোলাবর্ষণ করেছে। জবাবে থাই সেনারা উপযুক্ত পাল্টা হামলা চালিয়েছে।দুই দেশের মধ্যে ৮০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্তের অনেক অংশই বিতর্কিত। ২০০৮ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে এমন সংঘর্ষে অন্তত ২৮ জন নিহত হয়েছিলেন, বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন হাজার হাজার মানুষ।২০১৩ সালে আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ে কিছুটা স্থিতি এলেও চলতি বছরের মে মাসে ফের উত্তেজনা দেখা দেয়, যখন এক কাম্বোডিয়ান সেনা সংঘর্ষে নিহত হন। বৃহস্পতিবারের সংঘর্ষ ছয়টি এলাকায় কেন্দ্রীভূত ছিল। যার মধ্যে দুটি প্রাচীন মন্দির এলাকা অন্তর্ভুক্ত। ট্যাংক ও সেনাদের সমর্থনে স্থলযুদ্ধ হয়। কাম্বোডিয়া থাইল্যান্ডের অভ্যন্তরে রকেট ও গোলা ছোঁড়ে এবং থাইল্যান্ড এফ-১৬ যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে পাল্টা হামলা চালায়।পাঁচজন থাই সেনা ল্যান্ডমাইনে আহত হওয়ার পর থাইল্যান্ড কাম্বোডিয়ান রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করে এবং নিজ রাষ্ট্রদূতকে ফিরিয়ে আনে। কাম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেত-এর অনুরোধে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ শুক্রবার সন্ধ্যায় বৈঠক করবে বলে কূটনৈতিক সূত্রে এএফপি জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র এই সংঘাতের তাৎক্ষণিক অবসান চেয়েছে। এ ছাড়া ফ্রান্স, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও চীনও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে সংলাপের আহ্বান জানিয়েছে।