পহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় কাশ্মীরের সমৃদ্ধ পর্যটন খাত ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। শ্রীনগর থেকে ৯২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত চারপাশের এই মনোরম দৃশ্য মঙ্গলবার বিকেলে নৃশংস হামলায় রক্তাক্তে পরিণত হয়। এ সময় সন্ত্রাসীরা বন্দুক নিয়ে নেমে আসে এবং সৌন্দর্যের এ স্থানকে সন্ত্রাসে কালিমালিপ্ত করে।
হামলার পরপরই পহেলগাম মরুভূমির চেহারা ধারণ করে। পর্যটকরা এমনভাবে দৌড়াচ্ছিল যেন তারা একটি ডুবন্ত জাহাজ ছেড়ে আসছিল। তারা তাড়াহুড়া করে রাস্তা ত্যাগ করছিল। বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ শুরু হয়, যা কয়েক ঘণ্টা আগেও একটি ব্যস্ত পাহাড়ি এলাকা ছিল।
এখানেই এশিয়ার বৃহত্তম টিউলিপ বাগান। এটি অত্যাশ্চর্য ডাল লেক পটভূমিতে অবস্থিত, যা ৩ হাজারেরও বেশি আন্তর্জাতিক পর্যটককে আকৃষ্ট করেছিল। দর্শনার্থীদের আগমন এ অঞ্চলের ক্রমবর্ধমান পর্যটনশিল্পকে তুলে ধরে, যা শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি দেখিয়েছে এবং একটি সমৃদ্ধ মৌসুমের জন্য প্রস্তুত ছিল। সরকারি তথ্যমতে, গত বছর প্রায় ৩০ লাখ পর্যটক কাশ্মীরে এসেছিলেন। ২০২৪ সালে মোট পর্যটকের সংখ্যা ছিল ২০ লাখ ৯৫ হাজার, যা ২০২৩ সালে ২০ লাখ ৭১ হাজার এবং ২০২২ সালে ২০ লাখ ৬৭ হাজারের চেয়ে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি। একইভাবে ২০২৩ সালে ৩৭ হাজার বিদেশি পর্যটক আসার তুলনায় ২০২৪ সালে তা ৪৩ হাজারে উত্তীর্ণ হয়েছিল।
উল্লেখ্য, কাশ্মীর উপত্যকাকে ‘পৃথিবীর স্বর্গ’ বলা হয়। এই হামলা এমন এক সময়ে ঘটেছে যখন সরকার যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলোর নাগরিকদের জম্মু ও কাশ্মীরে ‘সব ধরনের ভ্রমণ এড়িয়ে চলা’র দীর্ঘদিনের নেতিবাচক পরামর্শ তুলে নিতে জোরালো আহ্বান জানিয়েছিল। কাশ্মীরের পর্যটন ব্যবসায়ীদের মতে, এ পরামর্শ দীর্ঘদিন ধরে এ অঞ্চলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে; বিদেশি পর্যটকদের নিরুৎসাহিত করছে এবং ভ্রমণ বীমা না থাকার কারণে প্রায়ই ভ্রমণ বাতিলের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গত কয়েক বছর ধরে কেন্দ্র এবং জম্মু ও কাশ্মীর সরকার উভয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসার ইঙ্গিত দিতে এ অঞ্চলকে পর্যটনবান্ধব কেন্দ্র হিসেবে তুলে ধরার জন্য সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে। যেমন এ বছরের জানুয়ারিতে লেফটেন্যান্ট গভর্নর মনোজ সিনহা সন্ত্রাসবাদ থেকে পর্যটনের দিকে পরিবর্তনে গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন। তিনি বিশ্বজুড়ে ভ্রমণকারীদের জন্য কাশ্মীরের অপার সম্ভাবনা তুলে ধরেন।
২০২৩ সালের মে মাসে পর্যটন বৃদ্ধি এবং প্রকল্পের স্থিতিশীলতার লক্ষ্যে ভারত কড়া নিরাপত্তায় শ্রীনগরে জি২০ পর্যটন সভাও আয়োজন করেছিল। ২০১৯ সালে ৩৭০ ধারার অধীনে জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পর সরকার কাশ্মীরে প্রথম এ ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এ সময় সরকার এ অঞ্চলে ‘স্বাভাবিকতা ও শান্তি’ ফিরিয়ে আনার কথা বলে এবং আয়োজনটি তা বাস্তবায়নের পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হয়েছিল।
জি২০ ইভেন্টের পর জম্মু ও কাশ্মীর সরকার এ বৈঠককে এ অঞ্চলের পর্যটন খাতের জন্য একটি যুগান্তকারী মুহূর্ত হিসেবে স্বাগত জানিয়েছে। শীর্ষ সম্মেলনের পর থেকে বিদেশি পর্যটকের আগমন ৫৯ শতাংশ বেড়েছে, যাকে কাশ্মীরের প্রতি নতুন করে বিশ্বব্যাপী আগ্রহের অনুঘটক হিসেবে ব্যাপক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল। এখন স্বাভাবিকভাবেই এ হামলাকে স্থানীয় অর্থনীতিতে বিশেষত সমৃদ্ধ পর্যটনশিল্পের ওপর সরাসরি আক্রমণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।