প্রযুক্তি ব্যবহার করে ঝুঁকি মূল্যায়ন এবং ক্ষতি নির্ধারণের প্রক্রিয়া উন্নত করতে হবে, বিশেষ করে দূরবর্তী অঞ্চলে। কৃষকদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি এবং আস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য কার্যকর প্রশিক্ষণ ও প্রচারাভিযান চালাতে হবে।দেশের উপকূলীয় এলাকার চাষযোগ্য জমির প্রায় ৪৯ শতাংশ বিভিন্ন মাত্রার লবণে আক্রান্ত। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য মতে, দেশে খরাপ্রবণ জেলাগুলোর আবাদি জমির ৬৪ শতাংশ খরায় ক্ষতিগ্রস্ত।এতে বছরে ক্ষতি তিন হাজার কোটি টাকা।আন্তর্জাতিক এনজিও জার্মান ওয়াচের তথ্য বলছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রতিবছর দেশে ৩০০ কোটি ডলারের অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়। কৃষক বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়লেও তাঁদের জন্য সুরক্ষা বলয় হিসেবে শস্য বা কৃষি বীমা খুব কম।বিবিএসের তথ্য মতে, দেশে সব ধরনের ফসলের উৎপাদন ছাড়িয়েছে প্রায় ১০ কোটি টন। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বন্যা, খরা, অতিবৃষ্টি, লবণাক্ততা, শৈত্যপ্রবাহ, পোকামাকড়ের আক্রমণে দেশের ১০ থেকে ২৫ শতাংশ ফসলের ক্ষতি হচ্ছে।কৃষকদের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে শস্য বীমা বা কৃষি বীমা সহায়ক শক্তি হিসেবে দাঁড়াতে পারে। সুরক্ষা বলয় হিসেবে ভারত, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামে রয়েছে নানা ধরনের শস্য ও কৃষি বীমা। এ ছাড়া উন্নত বিশ্বে এ ধরনের কার্যক্রমের ব্যাপকতা থাকলেও বাংলাদেশে স্বল্প পরিসরে কিছু বীমা কম্পানি, উন্নয়ন সংস্থা শস্য ও কৃষি বীমা চালু করেছে। এর মধ্যে সিনজেনটার সাসটেইনেবল অ্যাগ্রিকালচার ফাউন্ডেশন, গ্রিন ডেল্টা ইনস্যুরেন্স, ব্র্যাকসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে।এ বিষয়ে সিনজেনটা বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হেদায়েত উল্লাহ বলেন, কৃষি বা শস্য বীমার জন্য সরকারের নীতিসহায়তা প্রয়োজন। জাতীয় কৃষিনীতিতে এ বিষয়ে একটি স্বতন্ত্র অধ্যায় সংযোজন করতে হবে। এ ছাড়া বীমা বিধিমালায় শস্য বীমার বিষয়ে আলাদাভাবে বিস্তারিত ও সময়োপযোগী অধ্যায় সংযোজন করা প্রয়োজন। বীমা কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনার স্বার্থে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে যথাযথ আর্থিক সুবিধা, বিশেষ করে ঋণ, ট্যাক্স ও ভ্যাট সুবিধা প্রদান করতে হবে। কৃষি, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক বিভাগ ও বাংলাদেশ ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট সংগঠনের সমন্বিত উদ্যোগে একটি উচ্চতর কমিটি থাকতে হবে।বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে শস্য বীমা জনপ্রিয় করতে হলে বেশ কিছু বাধা পেরোতে হবে। এর মধ্যে বীমা কম্পানিগুলোর সীমিত বাজার তথ্য, দুর্বল পণ্য উন্নয়ন, স্বল্প প্রযুক্তি, দুর্বল সরবরাহব্যবস্থা, অ্যাকচুয়ারিসংক্রান্ত দক্ষতার পাশাপাশি বাণিজ্যিক কার্যকারিতার বিষয়ে উদ্বেগ দূর করতে হবে। এ ছাড়া কৃষকের আস্থায় আনা, উচ্চ প্রিমিয়াম এবং ক্ষুদ্র কৃষকদের জন্য সাশ্রয়ী বীমা কাভারেজে চালু, প্রিমিয়াম প্রদানে আর্থিক সামর্থ্যের অভাব বিবেচনায় নেওয়া এবং বীমা দাবি পরিশোধে কালক্ষেপণ বন্ধ করতে হবে। কৃষক ও গ্রামীণ জনগণের মধ্যে বীমা সচেতনতা বাড়াতে হবে।এ বিষয়ে কৃষিসচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান বলেন, ‘কৃষকের সুরক্ষায় শস্য বীমার প্রয়োজন। শস্য বীমা বাংলাদেশে বাস্তবায়ন হোক, এতে আমরা নীতিগতভাবে একমত। এখন আমরা কাজ করছি কিভাবে কৃষক পর্যায়ে এটি বাস্তবায়ন ও জনপ্রিয় করা যায় তা নিয়ে। বীমার মাধ্যমে কৃষকের সর্বোচ্চ সুবিধা নিশ্চিত করতে মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। আমরা আন্ত মন্ত্রণালয়ে বৈঠকের মাধ্যমে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।’