চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর চতুর্থ কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) দুপুর সাড়ে ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বুদ্ধিজীবী চত্বরে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ১৫ দফা দাবি তুলে ধরে সংগঠনটির বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।
‘ধ্বংস করতে মব, সন্ত্রাস ও স্বৈরাচার শৃঙ্খল—চবি থেকেই শুরু হোক গণতান্ত্রিক রূপান্তর’—এই স্লোগানকে সামনে রেখে অনুষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, জাতীয় সংগীত পরিবেশন ও জুলাই শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।কাউন্সিল উদ্বোধন করেন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) সংগঠক মাইকেল চাকমা।সভাপতিত্ব করেন বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর আহ্বায়ক জশদ জাকির।অনুষ্ঠানে সঞ্চালনা করেন যুগ্ম আহ্বায়ক রাম্রাসাইন মারমা। তিনি বলেন, ৯ জন নারী শিক্ষার্থীর অন্যায় বহিষ্কার, শাটল ট্রেনের অব্যবস্থা, শিক্ষক নিয়োগে স্বচ্ছতার অভাব—সবই প্রমাণ করে চবি নারীবিদ্বেষী ও স্বৈরাচারী পথে চলছে। আওয়ামী রেজিম উৎখাতের পরও প্রশাসন কী পরিবর্তন এনেছে, সেটি এখন প্রশ্ন।সভাপতি জশদ জাকির বলেন, ৩৬ জুলাই আমরা দীর্ঘ ফ্যাসিবাদী ক্ষমতাকে উৎখাত করেছি। তবে গণতান্ত্রিক রূপান্তরের জন্য লড়াই অব্যাহত রাখতে হবে।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি নূজিয়া হাসিন রাশা বলেন, ফুলবাড়ী আন্দোলন থেকে ৯০-এর অভ্যুত্থান—প্রতিবারই ছাত্রদের ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। অথচ এখনো ছাত্রসংসদ নির্বাচন বন্ধ রাখা হয়েছে।ভাসানী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও সংগঠনের সাবেক নেতা হারুন অর রশীদ বলেন, ‘গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের এক-তৃতীয়াংশ ছিলেন শ্রমজীবী। অথচ নারীদের নিয়ে কটূক্তি করা হচ্ছে। বিএনপিকে বলছি, বিদেশিদের বন্দর দেবেন না, আমরা জীবন দিয়ে তা রক্ষা করব।’কাউন্সিলের উদ্বোধক মাইকেল চাকমা বলেন, চতুর্থ সম্মেলনে উপস্থিত সবাইকে ইউপিডিএফের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাই। আমরা এক বছর আগে নরক থেকে মুক্তি পেয়েছি।গত বছর এই দিনে নতুন বাংলাদেশের সূচনা হলেও কৃষক-শ্রমিকের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত অধিকার আজও বাস্তবায়িত হয়নি। তিনি বলেন, ক্ষমতায় বসা লোকেরা জনগণের সেবক নয়, বরং ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধি। শেখ হাসিনার ১৬ বছরের দুঃশাসনের পরও বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তার নীতি অনুসরণ করছে। মাইকেল চাকমা আরো বলেন, ‘সাজেক, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়িতে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড ও অগ্নিসংযোগের বিচার আজও পাইনি, যদিও প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। হাসিনা উৎখাত হলেও অন্যায় থামেনি। বাংলাদেশের মানুষ ইতিহাসে বারবার অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে—আমরা আবারও দাঁড়াব। আমরা ভয় পাই না, কারণ হারানোর কিছু নেই; জাতীয় দুর্যোগে আমরা একসাথে লড়াই চালিয়ে যাব।’ কাউন্সিলে তুলে ধরা দাবিগুলো হলো গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনা, সুষ্ঠু চাকসু নির্বাচন, শতভাগ আবাসন, মানসম্মত খাবার ও পানি, আধুনিক গ্রন্থাগার ও পরিবহন, আদিবাসী ভাষা গবেষণা কেন্দ্র, চিকিৎসা কেন্দ্রের আধুনিকায়ন এবং যৌন নিপীড়নবিরোধী সেল কার্যকর করা।