বাংলাদেশের রাজনীতিতে তরুণদের অবস্থান, চিন্তা-ভাবনা ও প্রত্যাশার একটি পরিপূর্ণ চিত্র উঠে এসেছে সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) পরিচালিত এক জরিপে। ১৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সী দুই হাজার তরুণ-তরুণীর অংশগ্রহণে পরিচালিত জরিপে দেখা গেছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি ভোট পেতে পারে বিএনপি।
তরুণদের মতে, বিএনপি পাবে ৩৮.৭৬ শতাংশ ভোট। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, যাদের ভোটের হার ২১.৪৫ শতাংশ।তবে নতুন রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করা জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) অবস্থানও তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে, তরুণদের ১৫.৮৪ শতাংশ তাদের ভোট দিতে পারে বলে মত দিয়েছে।গতকাল সোমবার ঢাকার মহাখালীর ব্র্যাক ইন সেন্টারে সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রাইহানের নেতৃত্বে পরিচালিত এই গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। যুবসমাজের পরিবর্তন : চাকরি, শিক্ষায় এবং জুলাই আন্দোলনের পর বদলানো রাজনৈতিক দৃশ্যপটে চলার পথ’ শীর্ষক এই জরিপ তরুণদের রাজনৈতিক অবস্থান ও মানসিকতা বোঝার একটি সময়োপযোগী দলিল হয়ে উঠেছে বলে মত বিশ্লেষকদের।জরিপে অংশ নেওয়া তরুণদের একাংশ মনে করে, নির্বাচনে অংশগ্রহণের অনুমতি পেলে আওয়ামী লীগ ১৫.০২ শতাংশ ভোট পেতে পারে।জাতীয় পার্টি পাবে ৩.৭৭ শতাংশ, অন্যান্য ধর্মীয় দল পাবে ৪.৫৯ শতাংশ এবং অন্যান্য দল পাবে ০.৫৭ শতাংশ ভোট।এই জরিপে নারীদের মধ্যে এনসিপির প্রতি কিছুটা বেশি ঝোঁক লক্ষ করা গেছে। যেখানে পুরুষদের মধ্যে বিএনপিকে ভোট দিতে চায় ৪০ শতাংশ, জামায়াতকে ২২.২১ শতাংশ এবং এনসিপিকে ১৪.৪৪ শতাংশ, সেখানে নারীদের মধ্যে বিএনপি ৩৭.০৩ শতাংশ, জামায়াত ২০.৫৭ শতাংশ এবং এনসিপি ১৭.৪৭ শতাংশ ভোট দিতে চায়।শহর ও গ্রামভিত্তিক বিশ্লেষণেও তরুণদের রাজনৈতিক পছন্দে ভিন্নতা দেখা গেছে।শহরে বিএনপির সমর্থন সবচেয়ে বেশি ৩৯.৭৭ শতাংশ। জামায়াতের প্রতি শহুরে সমর্থন ২১.৬৬ শতাংশ এবং এনসিপির প্রতি ১৬.২৮ শতাংশ। অন্যদিকে গ্রামে বিএনপিকে ভোট দিতে আগ্রহী ৩৭.৭২ শতাংশ, জামায়াতে ২১.২৫ শতাংশ এবং এনসিপিতে ১৫.৩৮ শতাংশ। গ্রামাঞ্চলে আওয়ামী লীগের প্রতি কিছুটা বেশি সমর্থন লক্ষ্য করা গেছে ১৬.৬২ শতাংশ, যা শহরে ১৩.৪৬ শতাংশ।জরিপে রাজনীতিতে অংশগ্রহণের বিষয়ে তরুণদের স্পষ্ট অনাগ্রহ লক্ষ করা গেছে।৮২.৭ শতাংশ সরাসরি রাজনীতিতে যুক্ত হতে চায় না। রাজনৈতিক সহিংসতা ও আদর্শের অভাবকে তারা এর প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছে। মাত্র ৩.২ শতাংশ রাজনীতিতে অংশগ্রহণে আগ্রহী।জরিপ অনুযায়ী, ৫৮.৭ শতাংশ মনে করে রাজনীতিতে সহিংসতা রয়েছে, আর ৫৬.৪ শতাংশ মনে করে রাজনীতিতে দুর্নীতি ও আদর্শের ঘাটতি রয়েছে।সামাজিক ও রাজনৈতিক ইস্যু কিভাবে তরুণদের দৈনন্দিন জীবনে প্রভাব ফেলছে, সেটিও উঠে এসেছে জরিপে। মব জাস্টিস বা গণপিটুনি সম্পর্কে ৭১.৫ শতাংশ তরুণ উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতার বিষয়ে ৩৪.৫ শতাংশ মনে করে এটি তাদের জীবনে প্রভাব ফেলছে। এ ছাড়া লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা নিয়ে উদ্বিগ্ন তরুণের হার ৫৩.৬ শতাংশ।জরিপে তরুণদের ভবিষ্যৎ পেশা ও জীবনধারা সম্পর্কেও কিছু দৃষ্টিভঙ্গি উঠে এসেছে। তাদের ৩৬.৯৯ শতাংশ সরকারি চাকরিতে আগ্রহী, ২৬.৪১ শতাংশ ব্যবসা করতে চায়।শিক্ষা খাতে সংস্কারের বিষয়ে ৯৪ শতাংশ তরুণ প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন, যদিও সংস্কার সম্পর্কে সচেতন মাত্র ২.৩ শতাংশ।তথ্য-প্রযুক্তির এই যুগে তরুণরা বেশির ভাগ খবর পাচ্ছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে। জরিপে দেখা গেছে, দেশ ও বিদেশের খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে সংগ্রহ করে ৮৭.৪ শতাংশ। ৪৭.৭ শতাংশ টেলিভিশন থেকে এবং মাত্র ১৩ শতাংশ খবর পাচ্ছে পত্রিকা থেকে।