ওই বছরে ১ হাজার ৭৪৬ জন নারী তালাকের আবেদন করেন। পক্ষান্তরে পুরুষ করে মাত্র ৩৮৪টি। ২০২৩ সালে ৯ হাজার ৪৬টি বিবাহ হয়। ওই বছরে মোট তালাক হয় ৩ হাজার ৯৮৪টি। ২০১৯ সালে থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত এই ছয় বছরে ঝিনাইদহ জেলায় অন্তত ১৮ হাজার বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটেছে।
কালীগঞ্জ ও শৈলকুপা পৌরসভা থেকে পাওয়া তালাক নোটিশ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, পুরুষরা বিবাহ বিচ্ছেদের কারণ হিসেবে পরকীয়া ও স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বনিবনা না হওয়া ও দুর্ব্যবহারের কথা উল্লেখ করেছেন। অন্যদিকে নারীদের করা আবেদনে শাশুড়ি ও ননদের অত্যাচার, স্বামীর সন্দেহের মনোভাব, মাদকাসক্তি, নির্যাতন, যৌতুক, মানসিক নিপীড়ন ও ব্যক্তিত্বের সংঘাত উল্লেখ করা হয়েছে। শামসুল আরেফিন নামের এক যুবক বলেন, ‘আমি বাড়িতে না থাকার সুযোগে আমার স্ত্রী টিকটক করত। এই কাজ করতে গিয়ে সে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে আমার জমানো টাকা পয়সা নিয়ে পালিয়ে যায়। আমার একটি সাত বছরের মেয়ে রয়েছে।’ মেহেদী হাসান নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘আমি কাজের জন্য দেড় বছর ঢাকায় ছিলাম। বাড়ি এসে জানতে পারি আমার স্ত্রী অন্যের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে চলে গেছে।’শৈলকুপার মির্জাপুর ইউনিয়নের কাজী আব্দুল লতিফ বলেন, ‘তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে নারী-পুরুষেরা তালাকের নোটিশ পাঠাচ্ছেন। এতে করে সামাজিক অবক্ষয় বেড়ে যাচ্ছে। মোবাইলে পরকীয়া ও পারিবারিক কলহের কারণে দীর্ঘদিনের সংসার ভেঙ্গে যাচ্ছে।’
জেলা সচেতন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি বীর মুক্তিযোদ্ধা লিয়াকত হোসেন বলেন, ‘আমাদের দেশের প্রচলিত আইনে স্বামী যদি স্ত্রীকে নিকাহনামার ১৮নং কলামে ক্ষমতা প্রদান করেন তবেই স্ত্রী তাকে তালাক দিতে পারবে, তাছাড়া স্ত্রী তার স্বামীকে তালাক দিতে পারবে না। সমাজে যেভাবে বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটছে তাঁর বেশির ভাগই শর্ত পূরণ হচ্ছে না। ফলে বিবাহ বিচ্ছেদ নিয়ে সমাজে দিন দিন বিশৃঙ্খলা বৃদ্ধি পাচ্ছে।’এ ব্যাপারে জেলা জজ আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট এস এম মশিয়ূর রহমান বলেন, ‘বর্তমান সমাজে পারিবারিক বন্ধন পুরোটাই ভেঙ্গে পড়েছে। ফলে সন্তানের ওপর অভিভাবকদের নিয়ন্ত্রণ কমেছে। সন্তানরা কি করছে তা অভিভাবকরা দেখছেন না। ফলে মোবাইলে আসক্ত হয়ে তরুণ-তরুণীরা বিপথগামী হচ্ছে। এ অবস্থায় তাঁরা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলেও তা টিকছে না। এখন অনেক শিক্ষিত নারী-পুরুষের মধ্যেও বিবাহ বিচ্ছেদেও ঘটনা দেখা যাচ্ছে।’
এ ক্যাটাগরির আরো নিউজ..