আসছে নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করলে বিএনপি কোন কোন বিষয়ে অগ্রাধিকার দেবে, সে সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন বিদেশি কূটনীতিকরা। আগামী ফেব্রুয়ারিতে রোজার আগে বাংলাদেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। জানা গেছে, লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠক করছেন বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক ও উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিরা। আগামী নির্বাচন সামনে রেখে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ, সম্ভাবনা ও বিএনপির অগ্রাধিকারসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনায় আগ্রহ দেখাচ্ছেন বিদেশি প্রতিনিধিরা।
জানা গেছে, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে লন্ডনে তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন কাতারের একজন মন্ত্রী। এ ছাড়া বৈঠক করেছেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্র, কমনওয়েলথ ও উন্নয়ন বিষয়ক দপ্তরের ইন্দোপ্যাসিফিক বিষয়ক পার্লামেন্টারি আন্ডারসেক্রেটারি অব স্টেট, ব্রিটিশ এমপি ক্যাথরিন ওয়েস্ট, ব্রিটিশ কনজারভেটিভ দলের গবেষণা উন্নয়নবিষয়ক সাবেক পরিচালক রজ ক্যাম্পসেল, ঢাকায় নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক, যুক্তরাষ্ট্রের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন, ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক গোয়েন লুইস প্রমুখ।গত মাসে সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) এক জরিপের ফল প্রকাশ করেছে। ওই জরিপে অংশ নেওয়া তরুণদের ৩৮.৭৬ শতাংশ মনে করে, আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার দৌড়ে বিএনপি শীর্ষে থাকবে।প্রবল গণ-আন্দোলনের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। বর্তমানে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ। আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে বিগত বছরগুলোতে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনগুলো অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক ছিল না বলে কড়া সমালোচনা করেছে পশ্চিমা দেশগুলো।ব্যাপক কারচুপি, বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বর্জনের কারণে ওই নির্বাচনগুলো দেশে-বিদেশে বিতর্কিত হয়েছে। গণ-অভ্যুত্থানের পর ক্ষমতায় আসা ড. ইউনূসের সরকারের অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের অঙ্গীকার বাস্তবায়ন এবং সেই নির্বাচনের সম্ভাব্য ফলাফল কী হতে পারে সেদিকে দৃষ্টি রাখছে বিভিন্ন দেশ।সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, রাজনীতির মাঠে স্বীকৃত সবচেয়ে বড় দল বিএনপির জন্য আগামী নির্বাচনে বড় সম্ভাবনা রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তারেক রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার সম্ভাবনার ইঙ্গিত পাচ্ছেন আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার প্রধান ও উদার অর্থনীতির বিভিন্ন দেশের নেতারা। তাঁরা তাঁদের প্রতিনিধি পাঠাচ্ছেন দ্বিপক্ষীয় ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কসহ বিভিন্ন বিষয়ে তারেক রহমানের সঙ্গে আলোচনার জন্য।আগামী নির্বাচন নিয়ে বিএনপির পরিকল্পনা জানার পাশাপাশি বিএনপি সরকার গঠন করলে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরো এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে আগ্রহের কথা জানাচ্ছেন তাঁরা। এ ছাড়া রাষ্ট্র সংস্কারে বিএনপির ৩১ দফা নিয়েও ব্যাপক আগ্রহ বিদেশিদের।জানা গেছে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান অত্যন্ত আগ্রহের সঙ্গে বিদেশি প্রতিনিধিদের কথা শুনছেন এবং তাঁর পরিকল্পনার বিষয়ে আলোচনা করছেন। দেশের উন্নয়ন সম্ভাবনার ক্ষেত্রে প্রধান বাধাগুলোর বিষয়ও আলোচনায় স্থান পাচ্ছে। বিএনপি এরই মধ্যে দেশবাসীর সামনে ৩১ দফা সংস্কার পরিকল্পনা তুলে ধরেছে। ওই পরিকল্পনায় রাষ্ট্র ও রাজনীতির ক্ষেত্রে বিএনপির দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত হয়েছে। জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে দেশ পরিচালনার সুযোগ পেলে ওই সংস্কার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবে দলটি।সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ১/১১-এর পর থেকে আওয়ামী লীগের শাসনামলে তারেক রহমান অব্যাহত অপপ্রচারের শিকার হয়েছেন। সব জল্পনাকল্পনার বিপরীতে বিদেশি কূটনীতিকদের সাম্প্রতিক সৌজন্য সাক্ষাৎ ও বৈঠকের মধ্য দিয়ে বিশ্বনেতাদের কাছে তারেক রহমানের গ্রহণযোগ্যতা প্রতিফলিত হয়। তারেক রহমানের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানে নানা ধরনের গুজব ও বিভ্রান্তিকর প্রচারণা ছিল। তবে সম্প্রতি তারেক রহমানের সঙ্গে ওই দেশের প্রতিনিধির সাক্ষাৎ সব বিভ্রান্তিকে ভুল প্রমাণ করেছে। একই সঙ্গে পশ্চিমা বিশ্বে তারেক রহমানের গ্রহণযোগ্যতাও প্রমাণিত হয়েছে।বিগত ফ্যাসিবাদী সরকার বিএনপির সঙ্গে বিদেশি কূটনীতিকদের বৈঠক বা সাক্ষােক সন্দেহের চোখে দেখত। এসব সাক্ষাৎ নিয়ে তৎকালীন সরকার অসন্তোষ জানাত। আওয়ামী লীগ সরকারের এমন আচরণকে বিএনপির সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে বাধা হিসেবে দেখা হতো। এখন তারেক রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ব্যবধান কমানোর চেষ্টা করছেন বিদেশি কূটনীতিকরা।বাংলাদেশে চলমান সংস্কার উদ্যোগকে জোরালো সমর্থন দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান বিষয়ে অনেকের সন্দেহ ও সংশয় ছিল। কিন্তু সম্প্রতি তারেক রহমান ও যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসনের বৈঠকের মধ্য দিয়ে সেই সন্দেহ ও সংশয় দূর হয়ে গেছে। ওই বৈঠক বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারেও যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনকে প্রতিফলিত করে।