তারেক রহমান বলেন, ‘আমি ও বিএনপি বিশ্বাস করে, দলমত, ধর্ম-দর্শন যার যার- রাষ্ট্র সবার। ধর্ম যার যার কিন্তু নিরাপত্তা পাওয়ার অধিকার সবার। বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের জন্য, একটি নিরাপদ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন আমাদের সামনে একটি বিশাল বড় সুযোগ। সারা দেশে হিন্দু ধর্মাবলম্বী ভাইবোনদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, আগামী নির্বাচনে বিএনপি আপনাদের সমর্থন এবং সক্রিয় সহযোগিতা চায়।তিনি আরো বলেন, ‘স্বৈরাচার পতনের পর দেশে এখন গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার যাত্রা শুরু হয়েছে। জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের দ্বারা গঠিত সংসদ এবং সরকার প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত গণতন্ত্র উত্তরণের যাত্রাপথ কিন্তু ঝুঁকিমুক্ত নয়।’বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে এবং দলের ধর্মবিষয়ক সহসম্পাদক অমলেন্দু দাস অপুর পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিজন কান্তি সরকার, মহাসচিব এস এন তরুণ দে, বিএনপির ধর্মবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জামাল, সহসাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুন্ডু, প্রান্তিক জনশক্তি উন্নয়নবিষয়ক সহসম্পাদক অপর্ণা রায় দাস, নির্বাহী কমিটির সদস্য রনেশ দত্ত, দেবাশীষ রায় মধু, নিপুণ রায় চৌধুরী, তপন চন্দ্র মজুমদার, মিল্টন বৈদ্য, পূজা উদ্যাপন ফ্রন্টের জয়দেব জয়, হিন্দু মহাজোটের সুশান্ত চক্রবর্তী, ঢাকা মহানগর পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি জয়ন্ত দেব, বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর, ইসকনের প্রভু বিমলা প্রসাদ বক্তব্য দেন।এ ছাড়া অনুষ্ঠানে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুল বারী ড্যানি, জন গোমেজ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, ‘এক দশকেরও বেশি সময় বাংলাদেশের জনগণ এক ফ্যাসিস্টের দুঃশাসন, অত্যাচার ও নির্যাতন দেখেছে। জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে হাজারো শহীদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে কংসরূপী ফ্যাসিস্টের কবল থেকে বাংলাদেশ এবং দেশের গণতন্ত্রকামী মানুষ মুক্ত হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘বর্তমানে ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে রাষ্ট্র এবং রাজনীতিতে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকার আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের সম্ভাব্য সময় নির্ধারণ করেছে। কিন্তু আমরা লক্ষ করছি, এই নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর বক্তব্য, মন্তব্য কিংবা নিত্যনতুন শর্ত বা শর্তের প্রস্তাবনা জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে।’দলের এই শীর্ষ নেতা বলেন, “অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনে ভোট দেওয়ার সুযোগ পেলে জনগণ বিএনপিকে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব দিতে পারে- এই ভয়ে পলাতক স্বৈরাচার ‘বিএনপির বিজয় ঠেকাও’ ধরনের অন্তর্ঘাতী অপরাজনীতি শুরু করেছিল।দেশের নির্বাচনি ব্যবস্থাও গত ১৬ বছরে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছিল। স্থানীয় নির্বাচন থেকে শুরু করে জাতীয় নির্বাচন পর্যন্ত প্রায় সব ক্ষেত্রেই একই অবস্থা ছিল।তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো, স্বৈরাচারমুক্ত বাংলাদেশে এবার ক্ষমতাসীন সরকার নয় বরং ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের রাজপথের সহযোদ্ধা কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর আচরণেও সেই পলাতক স্বৈরাচার সরকারের মতো ‘বিএনপির বিজয় ঠেকাও’ প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। বিএনপির বিজয় ঠেকানোর এই অপরাজনীতি করতে গিয়েই বিতাড়িত ফ্যাসিবাদী সরকার দেশকে একটি তাঁবেদার রাষ্ট্র এবং এক বিশাল জেলখানায় পরিণত করেছিল। এখন যারা মনে করছেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে জনগণ ভোট দিয়ে বিএনপিকে সরকার গঠনে সহায়তা করবে- আর সেই আশঙ্কা থেকে বিএনপির বিজয় ঠেকাতে নানা রকম অপকৌশল বা শর্তের বেড়াজালের আশ্রয় নিচ্ছেন, তাদের উদ্দেশ্যে বলছি, রাজনীতিকে রাজনীতি দিয়েই মোকাবেলা করুন। জনগণের শক্তির ওপর আস্থা ও বিশ্বাস রাখুন। বিএনপির বিজয় যদি জনগণ নির্ধারণ করে, তাহলে সেই বিজয় ঠেকাতে গিয়ে জনগণের রায় প্রদানের পথ রুদ্ধ করবেন না।”তারেক রহমান আরো বলেন, ‘বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনে পিআর পদ্ধতি (আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতি) নিয়ে অনেকেই বিভিন্ন রকমের বক্তব্য দিয়েছেন। আমরা জানি, বিশ্বের অনেক দেশেই পিআর পদ্ধতি রয়েছে। তবে বাংলাদেশের আর্থসামাজিক, ভৌগোলিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতায় পিআর পদ্ধতির নির্বাচন এখনো উপযোগী নয়।’ তিনি বলেন, ‘জনগণের অধিকার রয়েছে জানার, তারা কাকে ভোট দিচ্ছেন এবং কে তাদের প্রতিনিধি হিসেবে সংসদে যাচ্ছেন। কিন্তু প্রস্তাবিত পিআর পদ্ধতিতে কোনো ব্যক্তিকে সরাসরি নির্বাচিত করার সুযোগ না থাকায় জনগণ স্পষ্টভাবে জানতে পারছে না যে তারা কাকে সংসদে পাঠাচ্ছেন। তাই জাতীয় সংসদ কিংবা সরকারের প্রতিনিধিত্ব করতে চাইলে, রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তিকে অবশ্যই জনগণের মুখোমুখি হয়ে তাদের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে হবে। জনগণের রায় নিয়ে নির্বাচিত হতে হবে।’তিনি আরো বলেন, ‘পিআর পদ্ধতি ও আরো দুই-একটি ইস্যুতে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কিছুটা ভিন্ন মত রয়েছে, যা গণতান্ত্রিক বিশ্বে গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। তবে আমি বিশ্বাস করি, বাস্তবতার নিরিখে প্রতিটি ইস্যুই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সুন্দরভাবে সমাধান হবে বা করা যাবে ইনশাআল্লাহ। কিন্তু যারা আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে পরিস্থিতি ঘোলাটে করার অপচেষ্টা করছেন, তারা হয়তো নিজেদের অজান্তেই গণতন্ত্র উত্তরণের পথকে বাধাগ্রস্ত করছেন। একই সঙ্গে পতিত, পরাজিত, পলাতক স্বৈরাচারকে পুনর্বাসনের পথ সুগম করছেন। যদি আমরা গণতন্ত্র উত্তরণের পথে একের পর এক শর্ত আরোপ করতে থাকি, তাহলে পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে উঠবে।’ধর্মীয় পরিচয়কে কেউ যেন নিজের হীন ও দলীয় রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করতে না পারে- সে বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার জন্য বিনীত আহ্বান জানান তারেক রহমান। তিনি বলেন, ‘আমরা অতীতে দেখেছি, যারা নিজেদের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় হিসেবে বিবেচনা করেন, সেই সম্প্রদায়ের ওপর কিংবা তাদের ধর্মীয় স্থাপনা বা বাসাবাড়িতে হামলার অনেক ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনার পেছনে অধিকাংশ সময়েই কোনো ধর্মীয় কারণ ছিল না। ব্যতিক্রম ছাড়া এসব হামলার পেছনে ছিল অসৎ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য অথবা অবৈধ লোভ-লাভের আশার মতো কারণ।’