অথচ এই কঠিন সময়েই সাধারণ মানুষ নিত্য ব্যবহার করে এমন সব জিনিসপত্রে শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। বিশ্লেষকরা জানান, উচ্চ মূল্যস্ফীতির সময়ে নতুন করে শুল্ক বাড়ানো হলে আরেক দফা দাম বাড়তে পারে। এতে মানুষের জীবনযাপনের ব্যয়ও বাড়বে।বেশ কিছু প্রয়োজনীয় পণ্যের শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব থাকছে, যার ফলে এসবের দাম বাড়তে পারে; যেমন—বিদ্যুৎসাশ্রয়ী এলইডি বাতির কারণে চোখ খুললেই ঝলমলে আলো।তবে চারদিকে আলো দেখতে হলে গুনতে হবে বাড়তি টাকা। কারণ এই বাতি তৈরির উপকরণে বসানো হয়েছে ১০ শতাংশ বাড়তি কাস্টমস শুল্ক। শিশুর হাতে একটি খেলনা তুলে দেওয়ার আগেও পকেটের বাড়তি টাকা খসাতে হবে। খেলনা আমদানিতে এখন ন্যূনতম মূল্য হিসাবে প্রতি কেজিতে ০.৫০ ডলার বাড়ানো হয়েছে।মশা-মাছি-তেলাপোকার উপদ্রব থেকে বাঁচাতে হলেও গুনতে হবে অতিরিক্ত টাকা। কীটপতঙ্গ মারার উপকরণ আমদানিতে কাস্টমস শুল্ক ১৫ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে।বড় আঘাত আসছে নির্মাণ উপকরণে। এই খাতের বেশ কিছু দরকারি পণ্যে শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব থাকছে। যেমন—সিমেন্ট, রড, বার, অ্যাঙ্গল, টাইলস, স্ক্রু, নাট, বোল্ট ও নির্মাণসামগ্রীর দাম আকাশ ছুঁতে পারে।সিমেন্ট তৈরির মূল উপকরণ ক্লিংকারের শুল্কায়ন হয় নির্ধারিত মূল্যে। বর্তমানে প্রতি মেট্রিক টনে ৭০০ থেকে ৯৫০ টাকা কাস্টমস শুল্ক আছে। তবে এখন বাজারমূল্যে নির্ধারণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তাতে কাস্টমস শুল্ক ধরা হয়েছে ১৫ থেকে ২৫ শতাংশ। ডলারের ঊর্ধ্বমুখী দর ও বাজারের ওঠানামায় ব্যয়বহুল হতে পারে সিমেন্ট।রড, বার ও অ্যাঙ্গল তৈরির কাঁচামালের ওপর বসানো হয়েছে বাড়তি শুল্কের বোঝা। বিভিন্ন ধরনের স্ক্রু, নাট ও বোল্ট কিনতে গেলে এখন প্রায় তিন গুণ অর্থ ব্যয় করতে হবে। এসব পণ্যে মোট করভার ৩৭ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৮৯.৩২ শতাংশ করা হয়েছে। টাইলস ও নির্মাণসামগ্রীর মূল উপকরণ মার্বেল ও গ্রানাইট বোল্টারের সম্পূরক শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪৫ শতাংশ করা হচ্ছে। ফলে এর মোট করভার ৮৯.৩২ শতাংশ থেকে বেড়ে হবে ১২৭.৭২ শতাংশ।স্থানীয় শিল্প অসম প্রতিযোগিতার মুখে পড়বে—এই অজুহাতে জিপসাম বোর্ড ও শিট আমদানিতে দ্বিগুণ করা হয়েছে সম্পূরক শুল্ক। এখন শুল্কহার হবে ২০ শতাংশ। ঢাকা শহরের অন্যতম বিরক্তিকর পরিবহন ব্যাটারিচালিত রিকশার দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই রিকশার ১২০০ ওয়াটের ডিসি মোটরের কাস্টমস শুল্ক ১ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ করা হচ্ছে। তামাকবীজে আগে শূন্য শতাংশ কাস্টমস শুল্ক থাকলেও এখন তা ২৫ শতাংশ করা হচ্ছে। সয়াবিন মিলের কাস্টমস শুল্ক শূন্য থেকে ৫ শতাংশ করা হচ্ছে। এই পণ্যগুলোর দাম বাড়লে ব্যয় বাড়বে সাধারণ মানুষের। বাজেটে উড়োজাহাজের কাস্টমস শুল্ক শূন্য থেকে ১ শতাংশ এবং হেলিকপ্টারে মোট করভার ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩৭ শতাংশ করা হচ্ছে।