রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) আওতাধীন এলাকায় ভবন দূর্ঘটনা হ্রাসের লক্ষ্যে আন্ত সংস্থার প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে ধানমণ্ডির সাতমসজিদ রোডে বহতল ভবনে অননুমোদিত রেস্টুরেন্ট পরিদর্শন করেছেন রাজউক চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মো. রিয়াজুল ইসলাম।
বৃহস্পতিবার এই পরিদর্শনে জেলা প্রশাসন, সিটি করপোরেশন, ফায়ার সার্ভিস, ঢাকা ওয়াসা, তিতাস গ্যাস, ডিপিডিসি সহ অন্যান্য সরকারি সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। অগ্নি ও ভূমিকম্পসহ ভবন সম্পর্কিত অন্যান্য ঝুঁকি হ্রাসে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ধানমণ্ডির সাতমসজিদ রোডের জাস্টিজ আমিন আহমেদ ট্রাস্ট ভবনে আন্ত সংস্থার প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে এই পরিদর্শন অনুষ্ঠিত হয়।এ সময় ১২ তলা ভবনটির প্রায় প্রতিটি তালায় এক বা একাধিক রেস্টুরেন্ট পাওয়া যায়।নকশা অনুযায়ী ভবনটি অনাবাসিক হলেও রেস্টুরেন্টগুলো রাজউক প্রদত্ত নকশা মেনে পরিচালিত হচ্ছিল না। এ সময় রাজউক চেয়ারম্যান সহ অন্যান্য সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ প্রতিটি রেস্টুরেন্ট ঘুরে দেখেন। বেশ কয়েকটি রেস্টুরেন্টে পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থা ছিল না। কিছু রেস্টুরেন্টে অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থা থাকলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল এবং রেস্টুরেন্ট ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের প্রয়োজনীয় অগ্নিনির্বাপণ প্রশিক্ষণ নেই বলে জানা যায়।সম্পূর্ণ ভবনে রাজউক প্রদত্ত নকশা অনুযায়ী দুর্যোগকালীন পরিস্থিতিতে জরুরি বহির্গমনের জন্য ফায়ার এক্সিট পাওয়া যায়নি। জরুরি বহির্গমনের সিড়ি ও নকশা অনুযায়ী নির্ধারিত স্থানে পাওয়া যায়নি।এ ছাড়া জরুরি প্রয়োজনে চলাচলের জন্য নকশা অনুযায়ী রাখা করিডর বন্ধ করে সেখানে স্টোর রুমের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। ভবনটিতে একটি জরুরি বহির্গমনের পথ কলাপসিবল গেট দিয়ে বন্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়।এ ছাড়া রেস্টুরেন্টগুলোর ভিতরে কিচেনে অপর্যাপ্ত জায়গা থাকায় তা দুর্যোগকালে ব্যবহার অনুপযোগী বলে প্রতীয়মাণ হয়। এ সময় নকশার ব্যত্যয় ঘটিয়ে অননুমোদিতভাবে রেস্টুরেন্ট পরিচালনার ব্যাপারে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি ভবন মালিকপক্ষের প্রতিনিধিরা। রাজউক চেয়ারম্যান রেস্টুরেন্টগুলোতে আগত শিক্ষার্থীসহ অন্য অতিথিদের সাথে কথা বলেন এবং এ ধরনের ভবনে আসার পূর্বে ঝুঁকি বিবেচনা করার এবং সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান। পরিদর্শনকালে রাজউক চেয়ারম্যান বলেন, নকশার ব্যত্যয় ঘটিয়ে পরিচালিত এসব রেস্টুরেন্টে অগ্নিকাণ্ডসহ যেকোনো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ ভবন পরিদর্শন করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।এ লক্ষ্যে সব সংস্থা একযোগে কাজ করবে। ব্যত্যয়কৃত ভবনসমূহের বিদ্যুৎ ও পানি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হবে।তিনি আরো বলেন, শুধু এই ভবনটিই নয়, সাতমসজিদ রোডসহ ঢাকার অন্যান্য স্থানের এরূপ নকশাবহির্ভূত ও অননুমোদিত রেস্টুরেন্ট এবং আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবনসমূহের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে রাজউক। একটি বাসযোগ্য ঢাকা গড়ে তোলার জন্য ও দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমাতে সব সংস্থাকে নিয়ে কাজ করবে রাজউক।এরপর ভবনটির মালিকপক্ষকে ১৫ দিনের মধ্যে নকশার ব্যত্যয়কৃত অংশের সমাধান করতে বলা হয়। অন্যথায় কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান রাজউক চেয়ারম্যান।এসময় বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাস সংযোগ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো রাজউকের নকশা মেনে ভবন নির্মাণ না হলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার কাজে সহযোগিতা করবে বলে জানায়। ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ প্রশাসনও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে রাজউককে অবহিত করে।পরিদর্শনে আরো উপস্থিত ছিলেন রাজউকের সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) শেখ মতিয়ার রহমান, সদস্য (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ) মোহা. হারুন-অর-রশীদ, প্রধান প্রকৌশলী, প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ, প্রধান নগর স্থপতিসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা বৃন্দ ও সহযোগী সংস্থাগুলোর বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা কর্মচারীবৃন্দ ও সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরা।