নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস চালু হয়েছে মাত্র তিন মাস আগে। অথচ এ অল্প সময়েই ধরা পড়েছে অন্তত তিন রোহিঙ্গা নাগরিক। ভুয়া জন্মসনদ ও জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে তারা পাসপোর্ট নিতে এসেছিলেন। এতে নতুন উদ্বেগ তৈরি হয়েছে প্রশাসন ও স্থানীয়দের মাঝে।
সবশেষ ১৮ আগস্ট আটক হন উখিয়ার লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মো. আনোস, যিনি ভুয়া কাগজপত্রে ‘মো. আরিয়ান’ নামে পাসপোর্টের চেষ্টা করেন। এর আগে ৩ জুন কেরানীগঞ্জের ঠিকানা দেখিয়ে পাসপোর্ট আবেদনকারী সুমা আক্তার ও তার পুরো পরিবার ধরা পড়ে। আর ২৫ মে আটক হয় কিশোর আব্দুল আজিজ, যিনি বয়স আড়াল করে জাল এনআইডি জমা দিয়েছিলেন।
তদন্তে দেখা গেছে, তিনজনেরই ভুয়া জন্মনিবন্ধন ও এনআইডি সংগ্রহ করা হয়েছে কেরানীগঞ্জ, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ২ নম্বর জোন এবং নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার কুতুবপুর ইউনিয়ন থেকে। বিশ্লেষকদের মতে, দালালচক্র প্রথমে ভুয়া জন্মসনদ তৈরি করছে, পরে নির্বাচন অফিস থেকে এনআইডি করাচ্ছে এবং শেষে পাসপোর্ট পর্যন্ত পৌঁছে দিচ্ছে।
নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের উপপরিচালক শামীম আহমদ বলেন, “মাত্র তিন মাসে তিন রোহিঙ্গা ধরা পড়া উদ্বেগজনক। এর পেছনে বড় দালালচক্র সক্রিয়।” তিনি সতর্ক করেন, রোহিঙ্গারা এনআইডি ও পাসপোর্ট পেলে তা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।
স্থানীয়রাও প্রশ্ন তুলেছেন নির্বাচন অফিসের ভূমিকা নিয়ে। অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আব্দুল হক পাটোয়ারী বলেন, “যেখানে একজন বাংলাদেশির এনআইডি করতে এত প্রক্রিয়া লাগে, সেখানে রোহিঙ্গারা সহজেই পাচ্ছে—এটা কেবল অসতর্কতা নয়, ভেতরে নিশ্চয়ই যোগসাজশ আছে।”
জাতীয় পরিচয়পত্র হাতে পেলে রোহিঙ্গারা জমিজমা কেনাবেচা, ব্যাংক হিসাব খোলা থেকে শুরু করে বিদেশ ভ্রমণ পর্যন্ত সবকিছুই বাংলাদেশি পরিচয়ে করতে সক্ষম। এতে শুধু দেশের ভাবমূর্তিই ক্ষুণ্ন হবে না, মানবপাচার ও মাদকচক্রও শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে।
নির্বাচন কমিশনের অভ্যন্তরীণ প্রতিবেদনে স্বীকার করা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের বায়োমেট্রিক ডাটাবেজ ও এনআইডি ডাটাবেজের মধ্যে এখনও কার্যকর সমন্বয় হয়নি। ফলে প্রশাসনিক দুর্বলতা ও দালালচক্রের সহায়তায় তারা সহজেই ফাঁক গলে যাচ্ছে।