এই সময়ে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন তাদের প্রতিবেদন তুলে দেয় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে।নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন তার প্রতিবেদন দেওয়ার পরপরই এর বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেয় ইসলামপন্থী দলগুলো। তৎপর হয় হেফাজতে ইসলামও। সংগঠনটির মহাসমাবেশ কর্মসূচির প্রথম দফা দাবি হিসেবেই তুলে ধরা হয় নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন ও এর প্রতিবেদন বাতিলের বিষয়।
দ্বিতীয় দফায় দাবিতে বলা হয়, সংবিধানে বহুত্বদের পরিবর্তে আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস পুনর্বহাল করতে হবে। তৃতীয় দফায় হেফাজতের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া সব মামলা প্রত্যাহার ও শাপলা চত্বরের হত্যাকাণ্ডসহ সব গণহত্যার বিচার চাওয়া হয়। সর্বশেষ চতুর্থ দফা দাবিতে তুলে ধরা হয় ফিলিস্তিন ও ভারতে ‘মুসলিম গণহত্যা ও নিপীড়ন বন্ধের’ কথা।এই চার দফা দাবি নিয়ে সংগঠনটির নেতারা ইতিমধ্যেই দেশের গুরুত্বপূর্ণ জেলার মাদরাসাগুলোতে সফর করেছেন।
সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব মহাসমাবেশ সফল করার দিক-নির্দেশনা দেওয়ার পাশাপাশি লোক জমায়েতেরও তাগিদ দিয়েছেন তৃণমূলে।
বিশ্বে বায়ুদূষণে শীর্ষে বাগদাদ, ঢাকার খবর কী?
এই প্রক্রিয়ায় বড় বিষয় হয়ে উঠেছে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন। যেখানে উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে নারীদের সমান অধিকার, বহুবিবাহ বন্ধের প্রস্তাব, যৌনকর্মীদের শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি, বিভিন্ন বিষয়ে নারী-পুরুষ সমান অধিকার দেওয়ার মতো প্রস্তাবগুলোকে ‘ইসলামবিরোধী’ হিসেবে দেখছেন হেফাজত নেতারা।
হেফাজতে ইসলামের আরেক শীর্ষ নেতা, সংগঠনটির যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক বলেন, তার ভাষায়, ইসলামবিরোধী হওয়ার কারণে তারা কমিশনেরই বাতিল চান। উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে ছেলেকে মেয়ের তুলনায় দ্বিগুণ সম্পত্তি এবং মেয়েকে ছেলের তুলনায় অর্ধেক সম্পত্তির যে বিধান আছে, এই বিধানকে তারা পরিবর্তন করার দাবি জানাচ্ছে। এটা তো সরাসরি কোরআনবিরোধী অবস্থান। ইসলামে পতিতাবৃত্তি নিষিদ্ধ, কিন্তু তারা একে শ্রমিকের স্বীকৃতি দিতে বলছেন। তাদের পুনর্বাসন না করে স্বীকৃতি দিলে এটা তো আরো উৎসাহিত হবে। এ রকম বিভিন্ন প্রস্তাব আছে সেখানে, যেগুলো কোরআন এবং ইসলামবিরোধী। ফলে এ ধরনের প্রস্তাব থাকার কারণে এই প্রতিবেদন বাতিল, এটাকে প্রত্যাখ্যান করা এবং এ ধরনের প্রস্তাবনার দায়ে কমিশনকেও বাতিল করতে হবে। এটাই আমাদের দাবি।
এ বিষয়ে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সদস্য ফাওজিয়া করিম ফিরোজ বলেন, আমরা জানতাম যে বিরোধিতা হবে। কিন্তু সে জন্য যে রিপোর্ট তুলে ফেলে দিতে বলবে, এ রকম চিন্তা করিনি। মানুষকে তো একাডেমিক আলোচনা করতে দেবেন। একাডেমিক বিরোধিতায় আসেন, সেটা ঠিক আছে। কিন্তু আপনি একটা মিটিং ডাকলেন, শত শত লোক এলো, সবাই ইয়েস স্যার বলবে এবং আমাদের বের করে দিতে চাইবেন, আমাদের চিহ্নিত করবেন– এটা ঠিক নয়। এটা মনস্তাত্ত্বিক চাপ সৃষ্টি করছে।
তিনি দাবি করেন, আমরা কিন্তু ধর্মীয় আইনে কোনো বাধা দেওয়ার কথা বলিনি। ধর্মীয় আইনকে টাচ করিনি। আমরা শুধু বলেছি, একটা সিভিল ল করা উচিত, যে আইনের মাধ্যমে প্রতিটি নারী তাদের সমঅধিকার অর্জন করবে এবং এটা ঐচ্ছিক হবে। আমরা সরকারের কাছে একটা প্রতিবেদন দিয়েছি বলেই যে এটা গ্রহণ হয়ে গেল তেমনটা তো না।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে হেফাজতে ইসলামের নেতা মামুনুল হক তাদের কর্মসূচির মাধ্যমে ভীতি বা আতঙ্ক ছড়ানোর অভিযোগ নাকচ করেন। উল্টো দাবি করেন, নারী সংস্কার কমিশনের রিপোর্টে ‘ইসলামবিরোধী’ প্রস্তাবের কারণে মুসলমানদের মধ্যে ‘আতঙ্ক তৈরি হয়েছে’।
তিনি বলেন, আমরা তো সেই আতঙ্কে আতঙ্কিত যে তারা যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, তাতে আমাদের নারীরা এবং আমাদের সমাজ ঈমান নিয়ে বসবাস করতে পারবে কি না।
তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ধর্ম পালনকারী শ্রেণির মধ্য থেকে কোনো প্রতিনিধি রাখা হয়েছে এই কমিশনে? কমিশন গঠনটাই তো একটা উদ্দেশ্যমূলক মনে হচ্ছে। আমরা আশঙ্কা করছি, এই কমিশনের যে প্রস্তাবনা, সেটা দ্রুত কার্যকর করার পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে। তখন পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হয়ে যাবে। ফলে আমরা বড় কর্মসূচি করছি যেন সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারি। ইতিমধ্যেই কিন্তু মাঠে ব্যাপক আওয়াজ হচ্ছে। কিন্তু সরকারি মহল থেকে নির্লিপ্ত অবস্থা দেখা যাচ্ছে। তার মানে তারা আমাদের এসব কথা-বার্তাকে কোনো পাত্তা দিচ্ছে না।