সাতবারের ফরাসি লিগ চ্যাম্পিয়ন অলিম্পিক লিওঁকে ‘আর্থিক সংকট’-এর কারণ দেখিয়ে দ্বিতীয় বিভাগে নামিয়ে দিয়েছে ফ্রান্সের পেশাদার লিগ কর্তৃপক্ষ (এলএফপি)। মঙ্গলবার ফরাসি ফুটবলের আর্থিক নিয়ন্ত্রক সংস্থা ন্যাশনাল ডিরেক্টরেট অব ম্যানেজমেন্ট কন্ট্রোল (ডিএনসিজি) এই সিদ্ধান্ত জানায়।
ক্লাবটির মালিক মার্কিন ব্যবসায়ী জন টেক্সটর এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করবেন বলে নিশ্চিত করেছেন। লিঁও ছাড়াও ইংলিশ ক্লাব ক্রিস্টাল প্যালেস, ব্রাজিলিয়ান ক্লাব বোতাফেগোসহ বেশ কয়েকটি ক্লাবের মালিক তিনি।টেক্সটর ও ক্লাবটির ফুটবল পরিচালক মিকায়েল গারলিঞ্জারকে ডিএনসিজি-র সামনে শুনানির মুখোমুখি হতে হয়। মূলত ১৭৫ মিলিয়ন ইউরো (প্রায় ২০৩ মিলিয়ন ডলার) ঋণের বোঝা এবং সেই ঋণ কমানোর জন্য কোনো পরিষ্কার পরিকল্পনা না থাকার কারণেই ক্লাবটির বিরুদ্ধে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।এমনকি জানুয়ারির দলবদলের সময়ও ক্লাবটির ওপর খেলোয়াড় কেনা-বেচায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল।মঙ্গলবার দেওয়া এক বিবৃতিতে লিগ কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তকে ‘অবুঝ’ ও ‘অযৌক্তিক’ আখ্যা দিয়েছে লিঁও।ক্লাবটির ভাষ্য, তারা ডিএনসিজি-র সব শর্ত পূরণ করেছে এবং নিয়ম মেনেই আর্থিক কার্যক্রম চালিয়েছে।ক্লাবের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘অলিম্পিক লিওঁ ডিএনসিজি-র এই অবোধ্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে এবং তাৎক্ষণিকভাবে আপিল করবে। টানা দুই মৌসুম ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া ঐতিহ্যবাহী এই ফরাসি ক্লাবকে বিনিয়োগ সক্ষমতার ভিত্তিতে অবনমন করা হতাশাজনক।’এই সিদ্ধান্তের এক দিন আগে ২৫৪ মিলিয়ন ডলারে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব ক্রিস্টাল প্যালেসে থাকা নিজের ৪৩ শতাংশ মালিকানা নিউ ইয়র্ক জেটস-এর মালিক উডি জনসনের কাছে বিক্রি করেছেন টেক্সটর।লিঁও ও ক্রিস্টাল প্যালেস উভয়ই ইউরোপা লিগে জায়গা করে নেওয়ায় এই সিদ্ধান্ত বেছে নিতে হয় তাকে। লিওঁ বিবৃতিতে এক জানায়, ‘আমাদের শেয়ারহোল্ডারদের পক্ষ থেকে নতুন মূলধন আসায় এবং ক্রিস্টাল প্যালেস বিক্রির কারণে আমাদের আর্থিক অবস্থান অনেকটাই স্থিতিশীল হয়েছে। ২০২৫–২৬ মৌসুমের জন্য আমাদের পর্যাপ্ত সম্পদ রয়েছে।’অক্টোবর মাসে টেক্সটরের ইগল ফুটবল গ্রুপ প্রায় ৫৭৫ মিলিয়ন ডলার ঋণের কথা জানায়। এতে লিওঁর আর্থিক স্থিতিশীলতা নিয়ে আরও উদ্বেগ তৈরি হয়।ব্রাজিলের ক্লাব বোটাফোগো থেকে অর্থ এনে লিওঁর ঋণ মেটাতে চাইলেও সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা হয়।তবে মঙ্গলবারও ক্লাব কর্মকর্তারা আত্মবিশ্বাসী ছিলেন, তারা কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যা দিয়ে অবনমন এড়াতে সক্ষম হবেন।টেক্সটর বলেন, ‘আমাদের শেয়ারহোল্ডারদের বিনিয়োগ ও ক্রিস্টাল প্যালেস বিক্রির ফলে আমাদের নগদ অর্থের পরিস্থিতি অনেক ভালো অবস্থানে আছে। শুধু ডিএনসিজি নয়, ইউরোপিয়ান লাইসেন্সিং প্রক্রিয়ায়ও আমরা নতুন পুঁজি বিনিয়োগ করেছি।’চলতি মাসের শুরুতে ম্যানচেস্টার সিটির কাছে উদীয়মান তারকা রায়ান চেরকিকে বিক্রি করে ৪২.৫ মিলিয়ন ইউরো আয় করেছে লিওঁ। তবে এই অর্থও ক্লাবটিকে আর্থিক চাপ থেকে মুক্ত করতে পারেনি। ক্লাবের ব্যয় এবং খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিক সীমিত রাখার নির্দেশনা দিয়ে গেলো দুই বছর থেকেই ডিএনসিজি ক্লাবটির দলবদলের ওপর নজরদারি করে আসছে। ২০০২ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত টানা সাতবার ফ্রেঞ্চ লিগ শিরোপা জেতে লিওঁ। ২০২০ সালে ক্লাবটি চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালেও খেলেছিল।চলতি মৌসুমে ইউরোপা লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কাছে হেরে যায় লিওঁ। সেই সঙ্গে লিগ আঁতে ষষ্ঠ অবস্থানে থেকে আগামী মৌসুমেও ইউরোপা লিগে নিজেদের অবস্থান নিশ্চিত করেছে ক্লাবটি।