প্রখ্যাত ভাস্কর ও একুশে পদকপ্রাপ্ত চিত্রশিল্পী হামিদুজ্জামান খান মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রজিউন)।রোববার (২০ জুলাই) সকালে রাজধানীর একটি হাসপাতালে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।
নিহতের স্ত্রী চিত্রশিল্পী আইভি জামান মৃত্যুর তথ্যটি নিশ্চিত করে বলেন, ‘হাসপাতালে থেকে মরদেহ চারুকলায় নেওয়া হতে পারে।’পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, গত সপ্তাহে গুরুতর অসুস্থ হয়ে হামিদুজ্জামান রাজধানীর একটি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। তিনি ডেঙ্গু ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে প্রথমে আইসিইউতে এবং পরে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। পরে রোববার সকালে লাইফ সাপোর্ট খুলে নিয়ে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।এ বিষয়ে ঢাবির চারুকলা অনুষদের ডিন আজহারুল ইসলাম বলেন, উনার পরিবারের সঙ্গে আমাদের কথা হচ্ছে। কয়টায় চারুকলায় আনা হবে, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। পরিবার থেকে আমাদের সময়টা জানালে, আমরা সবাইকে জানিয়ে দেব হামিদুজ্জামান খানের জন্ম ১৯৪৬ সালের ১৬ মার্চ, কিশোরগঞ্জের সহশ্রাম গ্রামে। তিনি ১৯৬৭ সালে বাংলাদেশ কলেজ অব আর্টস অ্যান্ড ক্রাফটস (বর্তমান চারুকলা অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে চারুকলায় স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর ১৯৭০ থেকে ২০১২ পর্যন্ত তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ভাস্কর্য বিভাগে অধ্যাপনা করেছেন।তিনি ফর্ম, বিষয়ভিত্তিক ও নিরীক্ষাধর্মী ভাস্কর্যের জন্য সুপরিচিত। তার গড়া অধিকাংশ ভাস্কর্যই মুক্তিযুদ্ধকে ভিত্তি করে।ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ সার কারখানায় ‘জাগ্রতবাংলা’, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে ‘শান্তির পায়রা’, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘সংশপ্তক’, মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংক ভবন প্রাঙ্গণে ‘ইউনিটি’, কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণে ‘ফ্রিডম’, ঢাকা সেনানিবাসে ‘বিজয় কেতন’, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘স্বাধীনতা চিরন্তন’, আগারগাঁওয়ে সরকারি কর্মকমিশন প্রাঙ্গণে ‘মৃত্যুঞ্জয়ী’, মাদারীপুরে ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম’ হামিদুজ্জামান খানের উল্লেখযোগ্য ভাস্কর্য।১৯৭৬ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের অনুপ্রেরণায় হামিদুজ্জামান খান নির্মাণ করেন ‘একাত্তর স্মরণে’ ভাস্কর্য। ১৯৮৮ সালে দক্ষিণ কোরিয়ায় রাজধানী সিউলে অলিম্পিক ভাস্কর্য পার্কে ‘স্টেপস’ ভাস্কর্য স্থাপন করেন। এরপর আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে।এই শিল্পীর একক প্রদর্শনী হয়েছে ৪৭টি। হামিদুজ্জামান ২০০৬ সালে শিল্পকলায় অবদানের জন্য একুশে পদক লাভ করেন। ২০২২ সালে বাংলা একাডেমি ফেলো নির্বাচিত হন।