তবে এদিন ম্যাজিস্ট্রেট মো. সাইফুজ্জামান না থাকায় বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) মামলাটি আমলে নিতে নতুন তারিখ ধার্য করেছেন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মিনহাজুর রহমান।শুনানি শেষে মামলাটি আমলে নিলে পত্রিকার সম্পাদক, প্রকাশক ও গ্রাফিক্স ডিজাইনার গ্রেপ্তার হতে পারেন বলে জানিয়েছে আইনজীবী আজিমউদ্দিন।তিনি বলেন, মামলার আবেদন আমলে নিলে তাদের বিরুদ্ধে মামলা রজু হয়ে গেল। প্রথম হলো বিরোধে তদন্তকারী কর্মকর্তা তাকে আটক করতে পারবেন, গ্রেপ্তার করতে পারবেন, তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবেন।কেন তিনি করলেন, তাকে রিমান্ডে নিতে পারবেন। যাবতীয় কার্যক্রম তখন তদন্তকারী কর্মকর্তার উপর নির্ভর করবে। ঈদের একটা পারপাস নিয়ে, ঈদের একটা কার্টুন করেছে, সেই কার্টুনের মধ্যে কুকুরের ছবি দিয়ে সে ধর্মীয় অনুভূতির আঘাত হেনেছে। এটা করতে পারে না।৯২% মুসলমানের এই বাংলাদেশের মধ্যে একটা ঈদকে তিনি এইভাবে সে নেগলেক্ট করতে পারেন না। এভাবে সে অপমানিত করতে পারেন না।এ বিষয়ে মামলার বাদী নজরুল ইসলাম অভিযোগ করেন, প্রথম আলো নানা সময়ে দেশের মানুষের আবেগ নিয়ে খেলেছে। এমনকি বিভিন্ন সময়ে তাদের প্রকাশিত খবরে ইসলাম বিদ্বেষী মনোভাবও দেখা গেছে।তিনি বলেন, এটা সুস্পষ্টভাবে ধর্ম না।এটা হেলা করার কোনো সুযোগ নাই। যদি ওনারা হেলা করে, তাহলে বাংলাদেশে প্রথম আলোর বিরুদ্ধে এবং ডেইলি স্টারের বিরুদ্ধে একটা মারাত্মক ধরনের একটা আন্দোলন হবে। দেশে একটা বিশৃঙ্খলা পরিস্থিতি তৈরি হবে। ওরা প্রথম আমাকে আমার বাড়িতে চতুর্দিকে খোঁজখবর নিয়ে এসেছে। ওরা আমাকে ফোন দিয়েছে কেন, কী জন্য আমি দিয়েছি। মানে মামলাটা করেছি এবং আমার আইনজীবীকেও তারা জিজ্ঞাসা করছে। আমরা ভীত নই। কারণ এটা স্বাধীন দেশ। আমরা মনে করি আমরা স্বাধীন।তিনি আরো অভিযোগ করে বলেন, এ বছর ৩০ মার্চ ঈদ শুভেচ্ছা কার্টুনে ঈদ মোবারক লেখার পাশে কুকুরের ছবি ব্যবহার করে পরিকল্পিতভাবে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেছে প্রথম আলো। বাদী নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা সে অধিকারটি চাইছি। আমরা মুসলমান হিসেবে আমাদের ধর্মের অনুভূতিতে আঘাত হানবে, এটা আমরা কখনো মেনে নেব না। মুসলমানের সবার আগে হল ঈমান। ঈমানের জায়গা থেকে দেশ যতটুকু অধিকার আমাদের দিয়েছে, সে অধিকারটুকু আমরা চাইছি। দেশে ২৯৫ ধারায় একটা আইন আছে যে ধর্মীয় অনুভূতি আঘাত করলে তাকে ১০ বছর সশ্রম কাজ আমরা দেওয়া হবে।৩০ মার্চ প্রথম আলো পত্রিকার প্রথম পাতার দ্বিতীয়-তৃতীয়-চতুর্থ কলামে হেডলাইনে ঈদ মোবারক লেখা একটি ব্যঙ্গাত্মক কার্টুন প্রকাশ করে যা কুকুরের ছবি সম্বলিত। ওই ব্যঙ্গাত্মক কার্টুনে ইসলাম ধর্মের পবিত্র উৎসবকে অবমাননা করা হয়েছে।মামলার আবেদনে বলা হয়েছে ৩০ মার্চ প্রথম আলো পত্রিকার প্রথম পাতার দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ কলামের হেডলাইনে ঈদ মোবারক লেখা একটি ব্যঙ্গাত্মক কার্টুন প্রকাশ করেছে। এ কাজটি একটি সচেতন ও সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ঈদুল ফিতরের মতো মহান ধর্মীয় উৎসবকে অপমানিত এবং হেয় করার ঘৃণ্য প্রচেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়।এতে আরো বলা হয়েছে, আসামিরা স্বেচ্ছায় সজ্ঞানে ইচ্ছাকৃত ইসলাম ধর্মের পবিত্র উৎসবকে ব্যঙ্গাত্মক কার্টুন ছেপে মুসলিম উম্মার ঈদের মতো পবিত্র ইবাদতকে হেয় প্রতিপন্ন ও অবমাননা করেছে প্রথম আলোক কর্তৃপক্ষ।প্রসঙ্গত, ২০০৭ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত প্রথম আলোর কৌতুক ম্যাগাজিন ‘আলপিন’-এর ৪৩১তম সংখ্যায় স্থান পাওয়া একটি কার্টুন নিয়ে সারা দেশে সমালোচনার ঝড় ওঠে। ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা এর তীব্র প্রতিবাদ করেন। প্রকাশিত ওই কার্টুনে একটি পূর্ণবয়স্ক মানুষের সঙ্গে একজন বালকের সংলাপ প্রকাশ করা হয়েছিল, যা নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি বিদ্রুপস্বরূপ।কার্টুনটির সংলাপে যখন বালকটিকে তার নাম জিজ্ঞাসা করা হয়, তখন সে নামের আগে ‘মুহাম্মদ’ বলেনি।উল্লেখ্য, বাংলাদেশের মুসলিম সম্প্রদায় নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি সম্মানার্থে তাদের নামের সঙ্গে ‘মুহাম্মদ’ ব্যবহার করে থাকে। কার্টুনের পূর্ণবয়স্ক মানুষটি ছেলেটিকে সব নামের আগে ‘মুহাম্মদ’ শব্দ ব্যবহার করতে বলে। এরপর কার্টুনের সংলাপে যখন ওই লোকটি ছেলেটির হাতে কী জানতে চায় তখন ছেলেটি উত্তর দেয় ‘মুহাম্মদ বিড়াল’; যে সংলাপে সরাসরি ‘নবী’ (সা.)-কে বিদ্রুপ করার অভিযোগ উঠেছিল।২০০৭ সালের ওই সময় ছিল এক-এগারো শাসনামল। দেশে চরম রাজনৈতিক অস্থিরতা। এ রকম একটি পরিস্থিতির মধ্যে প্রথম আলোর এ কার্টুন দেশকে আরো অস্থিতিশীল করে তোলে। প্রথম আলোয় প্রকাশিত এ কার্টুনের তীব্র প্রতিবাদে সারা দেশের মুসল্লিরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। পরিস্থিতি সামাল দিতে তৎকালীন সরকার ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসে। বৈঠকে প্রথম আলোর অনুমোদন বাতিল করার দাবি ওঠে।পরিস্থিতি অনুকূলে আনতে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার আলপিনের ৪৩১তম সংখ্যাটির বিক্রয় নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এর সব কপি বাজেয়াপ্ত করে এবং কার্টুনটির শিল্পী আরিফুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়।পরে প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান তাঁর সম্পাদিত পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করেন এবং বায়তুল মোকাররমের তৎকালীন খতিব মাওলানা উবাইদুল হকের হাতে হাত রেখে প্রকাশ্যে ‘তাওবা’ করেন।কিছুদিন আগেও প্রথম আলোর বিরুদ্ধে রাজপথে মিছিল করা হয়েছে, পত্রিকাটির অনুমোদন বাতিলের দাবি উঠেছে। এর কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভও করেছিল জনতা। তারা প্রথম আলোকে বিশেষ গোষ্ঠীর ‘দালাল’ বলে অভিহিত করে। এর প্রতিবাদে প্রথম আলো কার্যালয়ের সামনে জোড়া গরু জবাই কর্মসূচি করেছিলেন বিক্ষোভকারীরা।গত ৩১ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের ফটকে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার পুড়িয়ে পত্রিকা দুটি বয়কটের ডাক দিয়েছিলেন একদল শিক্ষার্থী। ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সংসদ’ নামের একটি ফেসবুক গ্রুপে পত্রিকা দুটির বিপক্ষে লেখালেখি হয়। কিন্তু এত কিছুর পরও প্রথম আলো এখনো পর্দার আড়ালে কলকাঠি নাড়ছে। ভারতীয় নীতি বাস্তবায়নকারী এ দৈনিক পত্রিকাটি মনে করছে তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে।