সংখ্যা দেখলে মাথা ঘুরে যায়। ২০১৫ থেকে ২০২২– প্রতিবছর সাড়ে ৩ হাজারের বেশি প্রবাসী শ্রমিকের মৃতদেহ দেশে এসেছে। তারা মধ্যপ্রাচ্যে কর্মরত ছিলেন। ২০২৩ ও ’২৪ সালে এ সংখ্যা সাড়ে ৪ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। সত্যিকার অর্থে, গত ১০ বছরে মধ্যপ্রাচ্যে প্রবাসী শ্রমিকের মৃত্যু প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। এই সময়ে মোট ৩৮ হাজার প্রবাসী শ্রমিকের মৃতদেহ মধ্যপ্রাচ্য থেকে বাংলাদেশে পৌঁছেছে।
সংখ্যা হতবাক করে দেয় যখন তুলনা করি, গত বছর প্রবাসী শ্রমিকদেরই পাঠানো অর্থ থেকে বাংলাদেশ ২৭শ কোটি ডলার আয় করেছে। আমাদের রপ্তানি আয়ের সর্বোচ্চ ৩ হাজার কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানির পরই রয়েছে প্রবাসী শ্রমিকদের পাঠানো অর্থপ্রবাহ। রপ্তানি আয়ের এই দ্বিতীয় বৃহত্তম খাত থেকে গত মাসেই সর্বোচ্চ ৩০০ কোটি টাকা আয় হয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে একটি প্রশ্ন ক্রমান্বয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে, ‘বাংলাদেশ কি জীবনের বিনিময়ে অর্থের পেছনে ছুটবে?
বলার অপেক্ষা রাখে না, এসব প্রশ্নের উত্তর পেতে হবে। মধ্যপ্রাচ্যে প্রবাসী বাংলাদেশি শ্রমিকের মৃত্যুর দুটো সামগ্রিক কারণ দর্শানো হয়েছে। এক. মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যগত অবস্থা এবং দুই. কর্মপরিবেশ। সরকারি উপাত্তমতে, বেশির ভাগ শ্রমিকের মৃত্যুর কারণ উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের মতো অসংক্রামক রোগ। সেই সঙ্গে ভঙ্গুর মানসিক স্বাস্থ্যের সঙ্গে জড়িয়ে আছে আত্মহত্যা। অন্যদিকে
কর্মপরিবেশ-সম্পৃক্ত মৃত্যুর সঙ্গে জড়িয়ে আছে কর্মস্থলে দুর্ঘটনা, কর্মপরিবেশে নিরাপত্তাহীনতা, সড়ক দুর্ঘটনা ইত্যাদি।
নানা রোগের কারণে যাদের মৃত্যু হয়েছে, তাদের বয়সসীমা ৩৮ থেকে ৪২। এই বয়সসীমার ক্ষেত্রে হৃৎপিণ্ড বিকল বা হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হওয়া বা মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ কি স্বাভাবিক, নাকি এর জন্য দায়ী বিপজ্জনক কর্মপরিবেশ; মরুভূমির অস্বাভাবিক আবহাওয়া, শ্রমিকের স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তা ব্যবস্থার অনুপস্থিতি? শ্রমিকদের স্বাস্থ্যগত কুশল ও
তাদের নিরাপত্তার জন্য কর্মস্থলে প্রয়োজনীয় কাঠামো ছিল কি?