দেশের অর্থনীতি আবারও চাপে পড়েছে। চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের শুরুতে প্রবৃদ্ধি নেমে এসেছে ৩ দশমিক ৯৭ শতাংশে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, ঋণের উচ্চ সুদ এবং উৎপাদন খরচ বৃদ্ধিতে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ কমে গেছে। এর কারণে বিনিয়োগ খাত স্থবির হয়ে পড়েছে, যা সামগ্রিক অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) রাজধানীর বনানীতে পলিসি রিসার্চ অব ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) কার্যালয়ে আয়োজিত ‘মানথলি মাইক্রোইকোনমিক ইনসাইটস: জুন-জুলাই ২০২৫’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানানো হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পিআরআইয়ের নির্বাহী পরিচালক ড. খুরশিদ আলম। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. মোহাম্মদ আক্তার হোসেন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পিআরআইয়ের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. আশিকুর রহমান।প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে বিনিয়োগ খাতে বড় ধাক্কা দেখা দিয়েছে। সবচেয়ে স্পষ্ট প্রমাণ হলো—যন্ত্রপাতি আমদানি গত কয়েক মাসে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ কমে গেছে। একই সঙ্গে নির্মাণ খাত, যা দেশের মোট বিনিয়োগের বড় একটি অংশ, তার প্রবৃদ্ধিও আশঙ্কাজনকভাবে কমেছে।ড. আশিকুর রহমান উপস্থাপনায় বলেন, শিল্প উৎপাদনের হার জুন মাসে সামান্য বেড়েছে, তবে তা এখনো দুর্বল।বিশেষ করে তৈরি পোশাক ও খনিজ খাত প্রত্যাশিত পারফরম্যান্স দেখাতে পারেনি। বিদ্যুৎ উৎপাদনও জুলাই মাসে আগের বছরের তুলনায় ১ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে, যা অর্থনীতির ধীরগতির ইঙ্গিত বহন করে।তিনি আরো উল্লেখ করেন, গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে সরকার এলএনজি আমদানি ৪৩ শতাংশ বাড়িয়েছে এবং বিদ্যুৎ আমদানি বেড়েছে ১৩ শতাংশ। তবে এতে বৈদেশিক মুদ্রার ওপর বাড়তি চাপ তৈরি হচ্ছে।আশার দিকও রয়েছে।জুলাই মাসে উৎপাদন সূচক কিছুটা ইতিবাচক হয়েছে। তৈরি পোশাক, নির্মাণ ও সেবা খাত ধীরে হলেও গতির ইঙ্গিত দিয়েছে। তবে বর্ষা মৌসুম ও প্রাকৃতিক কারণে কৃষি খাতে এখনো ধীরগতি বিরাজ করছে।সবচেয়ে উদ্বেগজনক তথ্য এসেছে দারিদ্র্য নিয়ে। পিপিআরসি পরিচালিত সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, দেশে দারিদ্র্যের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮ শতাংশে— যেখানে ২০২২ সালে এ হার ছিল মাত্র ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ। আরো ভয়াবহ বিষয় হলো, চরম দারিদ্র্যের হার প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।অর্থনীতিবিদদের মতে, প্রবৃদ্ধির গতি কমা, বিনিয়োগে স্থবিরতা এবং দারিদ্র্যের এই উত্থান দেশের অর্থনীতির জন্য বড় সতর্কবার্তা।