বৃদ্ধ থোয়াই হ্লা মারমা আদালতের বাইরে খালি পা মালকোঁচা ধূতি পরে দাঁড়িয়ে আছেন। ও ফড়া, ও ফড়া (ঈশ্বর)কে ডেকে কেঁদে চলেছেন। সেটেলার ওবায়দুর রহমান নোয়াখালীর আঞ্চলিক টানে বলে চলেছেন, ও কিছু হইতোনা মামু। তুমি কোর্টে দাঁড়িয়ে খালি স্ট্যাম্পে সই তুমি করনি বলে দিলে, পাহাড়ী ঢেবার পুরো বন্দোবস্ত আমার নামে হয়ে যাবে।
– তোর কেমনে কইতো?
– ভাগীনা। তুইত জানো, এ ঢেবা জমি আমার ছেলে আপোয়া হ্ললা মিথ্যা মামলায় জেলে থাকার পরে, তাকে ছাড়াতে তোমার ভাই মোক্তার মিয়ার কাছে স্ট্যাম্পে দশহাজার টাকায় বিক্রি করে দিছি।
: রাখত, মামু এইসব। তুমি বলবা, তুমি বিক্রি করনি। স্ট্যাম্পে যা যা লিখা তুমি তার কিছু জানোনা। তুমিত জানো, আমি তোমাকে নিয়ে সকালে গরম গরম নান রুটি ভাজি খাওয়াই। এক বান্ডিল আবুল বিড়ি কিনে প্রথম বিড়িটা তোমায় ধরায়ে দিই। এই রকমের করে ছ’মাসে হিসাব করে দেখ; আমি কত টাকা পাওনা আছি? আমার ভাই’র বিরুদ্ধে এই মামলার পেছনে আমার কত টাকা চলে গেছে। হাফ দারোগা ময়নুলের রিপোর্ট কোর্ট না মানায় আবার ফুল দারোগা কামাল উদ্দিন দিয়ে নতুন করে আমার পক্ষে রিপোর্টটা করাতে গিয়ে কত কত পেরেশানি পোহাতে হয়েছে আমার। কোর্টে যদি আমার কথামতো না বলো, আমি শেষ। তুমিও শেষ।
– ও ফড়া। আমি ক্যামনে শেষ হইয়ে?
: হ তুমিও শেষ হইয়ে। এই যে মচমচে ভাজা জিলাপি সিঙারা পেঁয়াজু নান রুটি পরোটা হালুয়া ছোলাবুট চা খেতে খেতে তুমি আমায় আশা দিয়ে বলতে, তোমার সকলকিছু আমার। মামু, আরও তুমি বলতে তোমরা পাহাড়ি মানুষ, যা কিছুর প্রমিজ করে বল, সবকিছু ঠিক ঠিক মেনে চলো। তোমাদের মুখে আশা দেবার পরে কোনো দলিল লাগেনা।জীবন নিজ হতে নদীর মতো করে গতিপথ পাল্টে নেয়। উভয় সংকটে বৃদ্ধ থোয়াই হ্লা মারমা।যথারীতি বিজ্ঞ আদালতে ডাক পড়েছে। হেডম্যান বৃদ্ধ থোয়াই হ্লা তার জীবনে প্রথম স্বাক্ষী দিতে চলেছেন। তার সামনে তার থেকে হাত দু’য়েক উঁচুতে চারিদিকে লাল সালু কাপড়ে ঘেরা পাটাতনে আগের দিনের রাজা সম্রাট বসেন; এমন এক চেয়ারে বসে আছেন, বিজ্ঞ বিচারক। কালো গাউন পরে বিজ্ঞ উকিল তাকিয়ে আছেন।
“যাহা বলিব সত্য বলিব। সত্য বই মিথ্যা বলিব না।”
হেডম্যান থোয়াই হ্লা নিজের বিশ্বাসে মনে করলেন, উনিই বুদ্ধদেব হবেন স্বয়ং। মানুষের উপরে বসে থাকেন ফড়া (ঈশ্বর)। হেডম্যান করজোরে অবনত দৃষ্টিতে মনে মনে বললেন, “বুদ্ধং শরণং গচ্ছামি।”উকিল সাহেব বললেন, আপনি যা সত্য বলেন।
বৃদ্ধ থোয়াই হ্লা এক এক করে সেটেলার চা পান বিড়ি সিঙারা মিষ্টি নান রুটি গল্প বলতে বলতে, প্রায় ঘণ্টাখানেক সময় ধরে সেটেলার ওবায়দুর রহমানের গল্পে- জজ সাহেবের কাছে কোথা হতে কী হয়েছে, তা বুঝতে বাকী রইলো না কোনোকিছুই।জজ সাহেব চিন্তায় পড়ে গেলেন। পবিত্র ধর্মগ্রন্থ ঐশীগ্রন্থ ছোঁয়েও মানুষ নানান প্রমিজে যেখানে নিজেদের বিশ্বাস নাই করে দেন; সেখানে অবলীলায় তার দেয়া সকল প্রমিজ বর্ণন শোনে, একটি রায় দেন।After listening to the court from the beginning to the end, what seemed to be a deception was taken away. Therefore, from today, along with Promise Day, Promise Breaking Day is also important.(আদ্যোপান্ত শোনে, আদালতের কাছে যা মনে হয়েছে, তা হলো কেড়ে নেয়া ছলনা। সুতরাং আজ হতে প্রমিজ দিবসের পাশাপাশি প্রমিজ ভাঙা দিবসও জরুরী