ব্রিটেনের ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের খবরে বলা হয়, কমপক্ষে নয়টি বিশ্ববিদ্যালয় ‘উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ’ দেশগুলো থেকে ছাত্রভর্তি সীমিত করেছে।কারণ এসব বিশ্ববিদ্যালয় প্রকৃত শিক্ষার্থী ভর্তির ওপর বাড়তি চাপের মুখে রয়েছে।এই বিষয়টি সামনে এসেছে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের সে দেশে বসবাসের আবেদন বৃদ্ধির পর। এ কারণে সীমান্ত নিরাপত্তা মন্ত্রী ডেম অ্যাঞ্জেলা ঈগল সতর্ক করে বলেছেন, ভিসা ব্যবস্থা যেন ‘ব্রিটেনে স্থায়ীভাবে বসবাসের পেছনের দরজা’ হিসেবে ব্যবহার না হয়।
যুক্তরাজ্যের হোম অফিসের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা প্রকৃতই পড়াশোনার উদ্দেশ্যে আসছে কিনা তা যাচাই করার দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয়েরই। যুক্তরাজ্য আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের গুরুত্ব দেয়; তবে অভিবাসন ব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থা ধরে রাখতে ভিসানীতিকে কঠোর করা ছাড়া উপায় নেই। নতুন নিয়মের লক্ষ্য একটাই—শুধু প্রকৃত শিক্ষার্থীরাই যেন যুক্তরাজ্যে উচ্চশিক্ষার সুযোগ পায় এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেন দায়িত্বশীলভাবে শিক্ষার্থী নির্বাচন করে।
এর আগে ২০২৩ সালের জুলাইয়ে শিক্ষার্থী ভিসায় যুক্তরাজ্যে থাকা অভিবাসীদের জন্য নতুন ভিসানীতি আনে দেশটির সরকার। ‘ভিসা ব্যবস্থার অপব্যবহার রোধে’ সে বছর মে মাসে এ পরিবর্তনের ঘোষণা দেওয়া হয়, যা ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে কার্যকর হয়। এ নীতির ফলে ২০২৪ সাল থেকে কেবল স্নাতকোত্তর গবেষণা ডিগ্রিতে পড়া বিদেশী শিক্ষার্থীরা পরিবারের সদস্যদের যুক্তরাজ্যে নিতে পারবেন। এছাড়া সরকারের অনুদানের বৃত্তি পেয়ে কোর্স করা শিক্ষার্থী তার ওপর নির্ভরশীল সদস্যদের যুক্তরাজ্যে নিয়ে যেতে পারবেন। এর বাইরে কোনো শিক্ষার্থী পরিবারের সদস্যদের নেয়ার সুযোগ পাবেন না।
নতুন নিয়মে নির্ভরশীল ভিসা থেকে কাজের ভিসা আবেদনের পদ্ধতিতেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। নির্ভরশীল ভিসায় থাকা একজন শিক্ষার্থী দক্ষ কর্মী হলে নির্দিষ্ট মানদণ্ড পূরণ করে কাজের ভিসার আবেদন করতে পারেন। এরপর থেকেই দেশটিতে বাংলাদেশী শিক্ষার্থী গমনের হার কমতে শুরু করে। ২০২৩ সালে উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে যুক্তরাজ্যে যান ৯ হাজার ২৭৫ জন। যেখানে ২০২২ সালে দেশটিতে পড়তে গিয়েছিলেন ১৫ হাজার ২৩৪ বাংলাদেশী শিক্ষার্থী। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশী শিক্ষার্থী যাওয়ার হার কমেছে প্রায় ৩৯ শতাংশ।
শুধু যুক্তরাজ্যই নয়, শিক্ষাগত মান, ফলাফল ও কোর্স সম্পন্ন করার হারকে ভিত্তি ধরে অন্যান্য দেশও বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য ভিসানীতির কঠোরতা বাড়াচ্ছে। সম্প্রতি বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের শিক্ষাভিসা দেয়ার ক্ষেত্রে বর্তমানের তুলনায় আরো কঠিন শর্ত আরোপ করা হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে ডেনমার্ক। গত কয়েক বছরে ডেনমার্কে উচ্চশিক্ষার জন্য যাওয়া বাংলাদেশী শিক্ষার্থীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। তবে দেশটির উচ্চশিক্ষা ও বিজ্ঞান মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, এ শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশই ড্যানিশ শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারছেন না এবং অন্যান্য দেশের শিক্ষার্থীদের তুলনায় তুলনামূলকভাবে খারাপ ফল করছেন। মন্ত্রণালয়ের বরাতে বলা হয়েছে, এমন প্রবণতার পরিপ্রেক্ষিতেই ভবিষ্যতে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষাভিসার শর্ত আরো কঠোর করার কথা বিবেচনা করা হচ্ছে।
এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক নীতিগত পরিবর্তনও উচ্চশিক্ষাগামী বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের অনিশ্চয়তা বাড়িয়েছে। নতুন নিয়মে এইচ-১বি কর্ম ভিসার আবেদনে নিয়োগকর্তাদের জন্য ১ লাখ ডলারের ফি আরোপ করা হয়েছে, যা বাস্তবে পড়াশোনা শেষে সেখানে থেকে কাজ করার সুযোগকে অনেক সংকুচিত করবে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা শেষ করে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের দেশে ফিরে আসার ঝুঁকিতে পড়তে হচ্ছে।
যুক্তারজ্যের হোম অফিস বলেছে, আমরা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের অত্যন্ত গুরুত্ব দিই। এই কারণেই আমরা নিয়ম আরো কঠোর করছি, যাতে যারা এখানে আসছে তারা যাতে প্রকৃত শিক্ষার্থী হয় এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে।