কিংবদন্তি চলচ্চিত্র নির্মাতা সত্যজিৎ রায়ের জন্মদিন আজ। আধুনিক বাংলা সংস্কৃতি জগতের একটি বিরল প্রতিভা সত্যজিৎ রায়। তাকে বলা হয়, বাংলা চলচ্চিত্রের অন্যতম পথিকৃৎ, যার হাত ধরে বাংলা সিনেমা প্রথমবারের মতো বিশ্ব দরবারে পৌঁছেছিল। নির্মাতার পাশাপাশি লেখক, চিত্রনাট্যকার, সঙ্গীত পরিচালক এবং শিল্প নির্দেশক হিসেবেও তার ব্যাপক খ্যাতি রয়েছে।
সত্যজিৎ রায় সম্পর্কে অস্কারজয়ী বিখ্যাত জাপানি চলচ্চিত্র নির্মাতা আকিরা কুরোসাওয়া বলেছিলেন, ‘রায়ের চলচ্চিত্র না দেখার বিষয়টি এমন যে, আপনি পৃথিবীতে বসবাস করছেন, অথচ সূর্য বা চাঁদ দেখেনি।’ কুরোসাওয়াকে সর্বকালের সেরা চলচ্চিত্র নির্মাতাদের একজন বলে বিবেচনা করা হয়। আর স্বনামধন্য এ নির্মাতাই বিভিন্ন সময় দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন যে, তিনি সত্যজিৎ রায়ের চলচ্চিত্রের ‘একজন ভক্ত’।
উপেন্দ্রকিশোরের ছেলে সুকুমার রায় ছিলেন বাংলা সাহিত্য জনক ও শিশু সাহিত্যের সেরা লেখকদের একজন।দক্ষ চিত্রকর ও সমালোচক হিসেবেও সুকুমারের খ্যাতি ছিল। তারই সুযোগ্য একমাত্র সন্তান সত্যজিৎ রায়।প্রেসিডেন্সি কলেজ ও শান্তিনিকেতনে পড়াশোনা করেন সত্যজিৎ রায়। তবে পড়াশোনার পর গতানুগতিক পেশায় নিজেকে জড়াতে পারেননি সত্যজিৎ। চলচ্চিত্র নির্মাণের স্বপ্ন ছিল তার। সে স্বপ্ন হাজারো ডানা পেতে শুরু করে ১৯৪৯ সালে ফ্রেন্স পরিচালক জঁ রনোয়ার সঙ্গে পরিচয়ের পর। ১৯৪৯ সালে ফরাসী পরিচালক জঁ রনোয়ার তার ‘দি রিভার’ চলচ্চিত্রের শুটিংয়ের জন্য কলকাতায় আসেন। আর ওই সময়ই তার সঙ্গে পরিচয় হওয়ার সুযোগ ঘটে সত্যজিতের।
সাক্ষাতে সত্যজিৎ রনোয়ারের সঙ্গে ‘পথের পাঁচালী’র চলচ্চিত্রায়ণ নিয়ে কথা বলেন।তার সিনেমা নির্মাণের পরিকল্পনা শুনে রনোয়ার তাকে এগিয়ে যেতে উৎসাহ দেন। তার ৬ বছর পরই ১৯৫৫ সালে সত্যজিৎ নির্মাণ করেন তার প্রথম ছবি ‘পথের পাঁচালী প্রথম ছবিতেই ছক্কা হাঁকান খ্যাতিমান এ নির্মাতা। সিনেমাটি ১১টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করে, যার মধ্যে অন্যতম ছিল কান চলচ্চিত্র উৎসবে ‘বেস্ট ডকুমেন্টরি ফিল্ম’ অর্জন।চলচ্চিত্রের পাশাপাশি সাহিত্যকর্মেও তার অগাধ দক্ষতা ছিল। বাংলা সাহিত্যের রোমাঞ্চকর কিছু গল্প লিখেছেন তিনি। ফেলুদা, প্রফেসর শঙ্কু, তাড়িনি খুড়ো তার অমর চরিত্র।
বাঙালির অস্কার বিজয়ের সুখও আসে একমাত্র তার হাত ধরেই। ৩২টি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের পাশাপাশি সত্যজিৎ রায় পেয়েছেন ‘বিবিসির শ্রেষ্ঠ বাঙালি’ (১৩তম) উপাধি। পাশাপাশি, তার সাফল্যের ঝুঁড়িতে আছে পদ্মভূষণ ও ভারতরত্নের মতো সম্মানজনক পুরস্কার।
৩৭ বছরের বর্ণিল সাফল্যে ভরা কর্মজীবনের সমাপ্তি ঘটে ৭১ বছরে। জীবনের অমোঘ সত্য মৃত্যুতে গুণী এ নিমার্তা চলে গেলেও. চলচ্চিত্রপ্রেমীদের মননে আজীবন অক্ষুণ্ণ থাকবে সত্যজিৎ রায় নামটি। চলচ্চিত্রে অবদানের জন্য ১৯৯২ সালের অস্কার আসরে সত্যজিৎ রায়কে আজীবন সম্মাননা প্রদান করা হয়।
১৯২১ সালের ২ মে কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন সত্যজিৎ রায়। কলকাতায় জন্ম হলেও তার পৈত্রিক নিবাস কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদি উপজেলার মসুয়া গ্রামে।
এ ক্যাটাগরির আরো নিউজ..