সে দেশের অপর প্রধান রাজনৈতিক শক্তি, বিএনপিকে নিয়ে ভারতের যেকোনো কারণেই হোক একটা যে ‘সমস্যা’ ছিল, সে কথাও সুবিদিত।
দিল্লিতে নেতা-মন্ত্রী-কূটনীতিকরা অবশ্য যুক্তি দেন অতীতে বিএনপি শাসনামলের অভিজ্ঞতা ভারতের জন্য তেমন ভাল ছিল না বলেই দু-পক্ষের মধ্যে আস্থা বা ভরসার সম্পর্ক সেভাবে গড়ে ওঠেনি।
আবার উল্টোদিকে বিএনপির পাল্টা বক্তব্য, তারা বাংলাদেশে ‘নতজানু পররাষ্ট্রনীতি’র বিরোধী এবং যেকোনো দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে সমান মর্যাদার ভিত্তিতে দেখতে চায় – কিন্তু তাই বলে তাদের ভারতবিরোধী বলে চিহ্নিত করার কোনো যুক্তি নেই।
তাপপ্রবাহ নিয়ে সুখবর দিল আবহাওয়া অফিস দিল্লিতে রাজনীতি, নিরাপত্তা বা কূটনীতির পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, ভারতের বিশেষ কয়েকটি ‘দাবি’ বা ‘প্রয়োজনে’ যদি বিএনপি ইতিবাচক সাড়া দেয়, তাহলে ভারতের দিক থেকেও বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার হাত বাড়াতে কোনো অসুবিধা থাকার কারণ নেই।
যেহেতু কোণঠাসা আওয়ামী লীগের চট করে রাজনৈতিক কামব্যাকের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না এবং বাংলাদেশের পরবর্তী নির্বাচনে বিএনপির ভালো ফল করার যথেষ্ঠ সম্ভাবনা আছে – তাই খালেদা জিয়ার দলই যে ভারতের জন্য এই মুহূর্তে সেরা বাজি এবং সম্ভবত একমাত্র বাজি, সেটাও তারা কেউ কেউ মনে করিয়ে দিচ্ছেন।এই পটভূমিতে ভারতের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্কের প্রেক্ষাপট ও আগামী দিনের সমীকরণের রূপরেখা কী হতে পারে, সে দিকেই নজর দিয়েছে এই প্রতিবেদন।
নববর্ষের আনন্দে বাগড়া দিতে পারে বৃষ্টি কিন্তু তার মানে এই না যে অন্য কোনো পলিটিক্যাল পার্টির সঙ্গে আমরা ডিল করতাম না বা কোনো এনগেজমেন্ট ছিল না! বরং ভালোই ছিল। তিনি বিবিসি বাংলাকে আরো বলছিলেন, ‘আমি নিজে হাই কমিশনার হিসেবে অনেকবার বিএনপি নেতাদের সঙ্গে দেখা করেছি, বহুবার তাদের বলেওছি যে আপনারা ক্ল্যারিফাই করুন ভারতের প্রতি আপনাদের পলিসিটা ঠিক কী … তো এরকম কনভার্সেশন আমাদের অনেক হয়েছে।
রিভা গাঙ্গুলি দাস আরো জানাচ্ছেন, তখন সেখানকার তরুণ পার্লামেন্টারিয়ানদের যে ডেলিগেশন ভারতে আসত, তাতে বিরোধী দল ও বিএনপি-র এমপিরা সব সময় থাকতেন।
কাজেই এটা বলা ভুল যে আমরা ওদের সঙ্গে কথাই বলতাম না বা কোনো এনগেজমেন্ট ছিল না!’ তবে বিএনপির সঙ্গে ভারতের যে ঠিক আস্থার সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি, এ কথাটা দু-দেশে সকলেই জানেন ও মানেন। ঢাকার গরম নিয়ে যে বার্তা দিল আবহাওয়া অফিস প্রসঙ্গত, নরেন্দ্র মোদী যখন ২০১৪তে দেশের ক্ষমতায় আসেন, তার পরেও বেশ কয়েক বছর দিল্লিতে ১১ নম্বর অশোকা রোডের ঠিকানাতেই ছিল বিজেপির সদর দপ্তর … তখন বাংলাদেশ থেকে বিএনপির নেতারা সেখানে একাধিকবার এসেছেন।
আজ কিন্তু বাংলাদেশের পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ক্ষমতাসীন বিজেপির অনেকে সে দেশে অন্য কোনো দলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ইস্যুটিই সবার আগে টেনে আনছেন।বিজেপির সিনিয়র নেতা ও পার্লামেন্টারিয়ান শমীক ভট্টাচার্যর কথায়, ‘ওপার বাংলায় যারা ঘোষ-বোস-দত্ত-মিত্র গুহঠাকুরতারা আছেন, যারা গুপ্তা-জয়সওয়াল আছে, যারা মতুয়া আছে, বৌদ্ধ আছে – তারা তো আমাদের রক্ত, আমাদের ভাই!
কিন্তু একই সঙ্গে মনে রাখতে হবে আজকে সমস্ত হিন্দু যদি ভারতবর্ষে চলে আসতে বাধ্য হয় এবং এটাকেই তাদের ডেস্টিনেশন মনে করে – তাহলে সেটা ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার পক্ষেও কাঙ্ক্ষিত নয়!’
‘তো সে জায়গা থেকেই আমরা চাই যে বাংলাদেশে একটা সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরে আসুক, বাংলাদেশে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হোক।প্রবল বাতাস ও ঝড়ের কারণে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়ায় ফেরি বন্ধ তো মানুষ যাকে চাইবে সেখানকার দেশের, তারা তাকে বেছে নেবে – কিন্তু মৌলবাদ থেকে সরতে হবে’, বিবিসিকে বলছিলেন শমীক ভট্টাচার্য।
এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে সেখানকার হিন্দুরা ভারতে চলে আসতে পারেন এমন একটা কথা বিজেপি নেতাদের প্রায়শই বলতে শোনা গেছে, যদিও বাস্তবে তেমন কোনও ঘটনা ঘটতে দেখা যায়নি।
তবে বাংলাদেশের হিন্দুদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তার দাবিতে ভারতের নানা প্রান্তে লাগাতার বিক্ষোভ ও আন্দোলন চলছেই।
এই পটভূমিতেই ভারতের বিজেপি নেতারা পরিষ্কার বলছেন, বাংলাদেশে বিএনপি বা অন্য যে কোনও দলের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক স্থাপনের মূল ভিত্তিটাই হবে ক্ষমতায় এলে তারা সে দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জানমালের নিরাপত্তা দিতে পারছেন কি না, সেটা!
‘ভারত বিরোধিতার রাজনীতি’র কী হবে?
দীর্ঘদিন ঢাকার ভারতীয় দূতাবাসে কাজ করেছেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এমন একজন সিনিয়র কর্মকর্তা রসিকতা করে বিএনপিকে ডাকে ‘ভারতে নারাজ পার্টি’ নামে! জাবির মওলানা ভাসানী হলের প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ আসলে ভারতের সাউথ ব্লকে একটা বিশ্বাস আছে যে বিএনপির ডিএনএ-তেই আছে ভারত বিরোধিতার রাজনীতি, আর দলটার রাজনৈতিক উত্থানের পেছনেও এর একটা বড় ভূমিকা আছে।
বিএনপি অবশ্য বলে থাকে বিরোধিতার জন্যই বিরোধিতা কখনওই তাদের নীতি ছিল না, তারা চায় ভারতের সঙ্গে একটি মর্যাদা ও সম্মানের সম্পর্ক।এই অবস্থানকে যে নামেই ডাকা হোক, বিএনপি তাদের সেই পুরনো রাজনীতি থেকে এখন কতটা সরবে তা নিয়ে কিন্তু সন্দিহান দিল্লিতে অনেক পর্যবেক্ষক।
ভারতের সাবেক আইপিএস কর্মকর্তা শান্তনু মুখার্জি ভূরাজনৈতিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে গবেষণা করছেন বহুদিন ধরে। মরিশাসের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ছিলেন, বাংলাদেশও তার আগ্রহের ক্ষেত্র।
সেই মি মুখার্জি বিবিসিকে বলছিলেন, “দেখবেন পলিটিক্যাল অ্যাক্টিভিটিজ বিএনপির এখন অনেক বেড়ে গেছে। এখন মনে রাখতে হবে ভারতের বিরুদ্ধে তারেক রহমান বলেছিল যা কিছু চুক্তি হয়েছিল সেগুলো বাতিল করা যাক, আবার খতিয়ে দেখা যাক!খুলনায় সাবেক কাউন্সিলর গ্রেপ্তার এইটা একটা হচ্ছে। এগুলো ইলেকটোরাল জিনিস হচ্ছে, কেন না ক্ষমতায় আসতে চায়, পনেরো বছর ক্ষমতায় ছিল না – এগুলো তাই ইলেকশনের ব্যাপার, আমি এইভাবে দেখছি। দ্বিতীয়ত এর পরে ওর মা, খালেদা জিয়া, যার অনেক ক্যারিশমা আছে, তিনি বাংলাদেশে ফিরবেন লন্ডন থেকে চিকিৎসার পরে। আর দেশে যখন এসে যাবেন, তিনিও ক্যানভাসিংয়ে যোগ দেবেন অবধারিতভাবে – তখন পরিবেশ আরও উত্তপ্ত হবে।
শান্তনু মুখার্জির আরও বিশ্বাস, “তখন খালেদা জিয়া যে বক্তৃতাগুলো দেবেন ভারতের বিরুদ্ধে, পাবলিক সেন্টিমেন্টটা দেখে … আমার এই ধারণা যে ভারতের বিরুদ্ধে ওনারা বলবেনই … কেন না ওনাদের ধারণাতে ভারতকে যত ডিসক্রেডিট করা যাবে তত ওদের ভোটের পার্সেন্টেজটা বেড়ে যাবে!”
কিন্তু ভোটের সময় বিএনপি যে রাজনীতিই করুক, নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় এলে তাদের প্রতিবেশী ভারতকে নিয়ে অনেক ‘বাস্তববাদী’ মনোভাব নিতে হবে বলেই ভারতে অনেকে মনে করেন।
আর সেই বিশ্বাসটাও দু’পক্ষের মধ্যে এখন থেকে একটা সম্পর্কের সেতু গড়ার কাজ করে রাখছে।রিভা গাঙ্গুলি দাস যেমন বলছিলেন, “আবার এখন যখন বাংলাদেশের রাজনীতিটা নির্বাচনের দিকে যাচ্ছে, তখন আমার মনে হয় বিএনপির পক্ষ থেকে যদি খুব স্পষ্ট করে শোনা যায় ভারতের প্রতি তাদের পলিসিটা কী, র্যাদার দ্যান বারবার এক একটা ইস্যুতে আলাদা করে রিঅ্যাক্ট করার জায়গায় … তাই বিএনপি তাদের নীতিটা পরিষ্কার করে বললে অবশ্যই একটা কমফর্টের জায়গা তৈরি হতে পারে!”
খুলনায় সাবেক কাউন্সিলর গ্রেপ্তার ভারতের দিক থেকে সম্পূর্ণ অন্য একটি কারণেও বিএনপি-র সঙ্গে দিল্লির এখন একটা সম্পর্ক স্থাপনের ভাল সুযোগ তৈরি হয়েছে – কারণ দীর্ঘদিনের সঙ্গী জামায়াত-ই-ইসলামীর সঙ্গে বিএনপির দূরত্ব বাড়ছে।ঢাকায় ভারতের সাবেক হাই কমিশনার রিভা গাঙ্গুলি দাস বলছিলেন, “ডেফিনিটলি জামায়াত আর বিএনপির মতবিরোধগুলো এখন খুব স্পষ্ট। ওনাদের একজন বড় নেতা এটাও বলেছেন যে কোনও অ্যালায়েন্স হওয়া সম্ভব না।তো আমি নিশ্চিত যে এই ডেভেলপমেন্টগুলো ভারত সরকার নিজেদের তরফ থেকে খুব সতর্কতার সঙ্গে দেখছে এবং অ্যাসেস করছে!”
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বাইরের কোনও দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করার এমনিতে কোনও কারণ নেই – তবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি অবশ্যই কিছুটা ভিন্ন!এক এগারোর কুশীলব ও সৃষ্টির নেপথ্যে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব ঢাকায় গিয়ে কোনও রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে যোগ দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন, এমনও নজির আছে। ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে তখনকার পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং ঢাকায় গিয়ে বিএনপি ও জাতীয় পার্টির শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গেও বৈঠক করেছিলেন, যে সফর নিয়ে বিতর্কও কম হয়নি।
এরপর থেকে ভারত যদিও প্রকাশ্যে অন্তত বাংলাদেশের ঘরোয়া রাজনীতি থেকে নিজেদের দূরে রাখারই চেষ্টা করে, কিন্তু জামায়াত বা ইসলামপন্থী দলগুলোকে নিয়ে ভারতের আপত্তি একেবারেই কোনও গোপন বিষয় নয়।
বিজেপি এমপি শমীক ভট্টাচার্য যেমন সরাসরি বলছেন, “তবে আমরা স্পষ্টতই জামাতের যে চিন্তাভাবনা, তালেবানেইজেশনের যে কনসেপ্ট তার ঘোরতর নিন্দা করি। এটার যে বিরোধিতা করে যাওয়া, সেটা আমরা করছি এবং করেও যাব!”
ভারতের কর্মকর্তা ও নীতিনির্ধারকরা এখনও একান্ত আলোচনায় পরিষ্কারই বলছেন আগামী দিনে বিএনপি-র সঙ্গে তাদের যে কোনও সম্পর্কের ক্ষেত্রে অন্যতম প্রধান ‘শর্ত’ হতে হবে জামায়াতের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সঙ্গ তাদের ত্যাগ করতেই হবে। এক এগারোর কুশীলব ও সৃষ্টির নেপথ্যে
বিএনপি ও ভারতের মধ্যেকার সম্পর্কের ক্ষেত্রে সম্ভবত সবচেয়ে বড় অস্বস্তির জায়গাটা হল ২০০১ থেকে ২০০৬ অবধি খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে চার দলীয় জোট সরকারের শাসনামলের বিভিন্ন ঘটনা।
ভারত বিশ্বাস করে সে সময় আলফা-সহ ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী বাংলাদেশে ঢালাও আশ্রয় পেয়েছিল। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আলফার জন্য ট্রাকে করে অস্ত্র পাচারের ঘটনাও এই সময়কারই। ভারতের সাবেক শীর্ষ কূটনীতিবিদ রিভা গাঙ্গুলি দাসের কথায়, “আমার মনে হয় ভারতের মাথায় এটাও থাকবে ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত সময়কার রেকর্ডটা!”
“সেটা তো একটা সময় ছিল যখন এমন অনেক কিছুই হয়েছে যেগুলো ভারতের সিকিওরিটির দিক থেকে ও ভারতের ‘কোর কনসার্ন’গুলোর ক্ষতিই করেছে! তো সেই রেকর্ডটাও কিন্তু আছে!চট্টগ্রামে সিআরবি মালিপাড়া বস্তিতে ভয়াবহ আগুন
মি মুখার্জি বিবিসিকে বলছিলেন, “দেখুন, পূর্বদিকে তারা আমাদের খুব ইম্পর্ট্যান্ট নেইবার, আমরা প্রতিবেশী দেশ। সম্পর্ক সব সময়ই ভাল ছিল ১৯৭১ থেকে … তো যে কেউই সেখানে নির্বাচিত হয়ে আসুক আমার মনে হয় যে ভারতের দিক থেকে তাদের সঙ্গে মধুর সম্পর্ক থাকবেই! থাকতেই হবে!”আসলে এটা তো মিউচুয়াল কনসার্ন … ওদেরও যেমন ভারতকে দরকার, তেমনি আমরাও চাইব একটা সুস্থ পরিবেশে আমরা থাকি।””ফলে আমাদের নিরাপত্তার জিনিসগুলোকে যদি অ্যাড্রেস করে দেয়, আমাদের ওদের এগেইনস্টে যাওয়ার মানে হয় না … কোনও কারণ দেখছি না আমি”, বলছিলেন শান্তনু মুখার্জি।
অন্যভাবে বললে ভারতের পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন সেভেন সিস্টার্সের বিচ্ছিন্নতাবাদীরা যদি ‘প্রশ্রয়’ না পায় কিংবা ধরা যাক চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারের সুবিধা বহাল থাকে, বিএনপির সঙ্গে ‘ডিল’ করতেও ভারতের কোনও সমস্যা নেই!
আমার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার চালানো হচ্ছে : টিউলিপ
তবে অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়েই হোক বা অন্য যে কোনও কারণেই হোক, ভারত কিন্তু এখন স্থির করেছে নির্বাচনের আগে অন্তত বাংলাদেশের বিশেষ কোনও দলের প্রতিই প্রচ্ছন্ন সমর্থন জানানো হবে না, বা থাকলেও অন্তত সেটা প্রকাশ করা হবে না।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বারে বারেই বলছে, তারা চায় বাংলাদেশে একটি ইনক্লুসিভ (অন্তর্ভুক্তিমূলক) ও পার্টিসিপেটরি (অংশগ্রহণমূলক) নির্বাচন – যাতে সব দল ও মতের মানুষ ভোটে লড়ার সুযোগ পায়।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও ব্যাংককে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তার সাম্প্রতিক বৈঠকেও ঠিক এই বিষয়টির ওপরেই জোর দিয়েছেন এবং সে দেশে দ্রুত নির্বাচন আয়োজনে একরকম তাগাদা দিয়েছেন।
এই মুহুর্তে ভারতের কৌশলটাই হল – বাংলাদেশে যত তাড়াতাড়ি একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন আয়োজনে চাপ দেওয়া এবং তাতে যারাই জিতে ক্ষমতায় আসুক, তাদের সঙ্গে একটা ওয়ার্কিং রিলেশনশিপ তৈরির পথ প্রস্তুত করে রাখা।
এই প্রেক্ষাপটেই বিজেপির রাজ্যসভা এমপি শমীক ভট্টাচার্য বিবিসিকে বলছিলেন, “আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় ছিল, তখন স্বাভাবিকভাবেই ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক তার বেশি থাকবে। এটাই কাঙ্ক্ষিত ও এটা হওয়াই স্বাভাবিক।”
“এখন তাদের যে অভ্যন্তরীণ টানাপোড়েন, তাদের দেশের ভেতরকার যে নিজস্ব ইন্টারনাল ফিউড – এর মধ্যে তো কোনও দেশ হস্তক্ষেপ করতে পারে না, এবং সেটা কাম্যও নয়! সে জন্য ভারতও সে ক্ষেত্রে ওটা করেনি।সমুদ্রে মাছ ধরায় ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু “কিন্তু এর মধ্যেও যেটা মাথায় রাখতে হবে, বাংলাদেশে নির্বাচনের আগে কোনও বিশেষ দলের সঙ্গে সম্পর্ক করাটা কূটনৈতিক ক্ষেত্রে খুব একটা সুবিধাজনক নয় – কারণ তাহলে একজন ‘বিগ ব্রাদার’ পার্শ্ববর্তী একটা ছোট দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ঢুকে পড়ছে এই ভুল বার্তাটা সারা পৃথিবীতে চলে যাবে”, বেশ সতর্কতার সুরেই বলেন পশ্চিমবঙ্গ থেকে নির্বাচিত বিজেপির এই পার্লামেন্টারিয়ান।
ফলে বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত যখনই হোক, তার আগে বিএনপি-র সঙ্গে ভারতের প্রকাশ্য ঘনিষ্ঠতা দেখা যাবে এই সম্ভাবনা আসলে নেই বললেই চলে।
কিন্তু তার পরেও বাংলাদেশের নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতা মেনে নিয়ে ভারত যে বিএনপিকে ইতিমধ্যেই ভিন্ন চোখে দেখতে শুরু করেছে তাতেও কোনও ভুল নেই।
এখন নির্বাচনে তারা কেমন ফল করে, ভারতের নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগের জায়গাগুলো কীভাবে অ্যাড্রেস করে এবং জামায়াত সম্বন্ধে কী মনোভাব নেয় – তার ওপরেই নির্ভর করছে এই নতুন সম্পর্কের গতিপ্রকৃতি।