দিবসটি উপলক্ষে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিশেষ বাণী দিয়েছেন।তিনি সবাইকে হেপাটাইটিস নির্মূলে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে ২০৩০ সালের মধ্যে হেপাটাইটিস নির্মূল লক্ষ্য পূরণ হয়। দিবসটি উপলক্ষে ন্যাশনাল লিভার ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ দেশব্যাপী জনসচেতনতামূলক নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য হলো ‘Let’s break it down’ অর্থাৎ ‘চলুন সহজভাবে বুঝি’। হেপাটাইটিস প্রতিরোধ, চিকিৎসা ও নিয়ন্ত্রণের পথে যেসব সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং মানসিক বাধা রয়েছে তা দূর করতে হবে।হেপাটাইটিসের ভয়াবহতা, প্রতিরোধের উপায়, পরীক্ষা ও চিকিৎসা সম্পর্কে সবার জানা জরুরি। এটি একটি প্রতিরোধযোগ্য রোগ, যদি সঠিক সময়ে পরীক্ষা ও চিকিৎসা নিশ্চিত করা যায়।
হেপাটাইটিস ‘বি’ ও ‘সি’ প্রতিরোধ
ভাইরাস দুটি সংক্রামিত রক্ত ও শরীরের তরলের মাধ্যমে ছড়ায়।
প্রতিরোধে যা করতে হবে তা হলো :
রক্ত সঞ্চালনের পূর্বে হেপাটাইটিস ‘বি’, ‘সি’ ও হেপাটাইটিস ‘বি’ কোর এন্টিবডি (এন্টি-এইচবিসি টোটাল) টেস্ট করা।
একই সুঁচ ও সিরিঞ্জ পুনঃব্যবহার নিষিদ্ধ।
ব্যক্তিগত জিনিস (দাঁতের ব্রাশ, রেজার) অন্যের সঙ্গে শেয়ার না করা।
সেলুন, ডেন্টাল ক্লিনিক, অপারেশন, ট্যাটু বা কানের ফুটো করার সময় স্টেরিলাইজড সরঞ্জাম ব্যবহার করা।
নিরাপদ যৌন আচরণ।
আক্রান্ত ব্যক্তি যেন রক্ত বা অঙ্গ দান না করে।
নিয়ন্ত্রণের কৌশল
সার্বজনীন টেস্টিং ও ভ্যাকসিনেশন।
পরিবারের কোনো সদস্যের হেপাটাইটিস ‘বি’ ও ‘সি’ নির্ণয় হলে পরিবারের অন্য সদস্যদের এই দুই ভাইরাসের টেস্ট করা এবং প্রতিরোধে হেপাটাইটিস ‘বি’ টিকা দেওয়া।
গর্ভকালীন হেপাটাইটিস ‘বি’ টেস্ট বাধ্যতামূলক করা।নবজাতকের জন্মের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ভ্যাকসিন ও প্রয়োজনে ইমিউনোগ্লোবিউলিন (HBIG) প্রদান।
চিকিৎসা ব্যবস্থায় নিরাপদ চর্চা ও স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ।
হেপাটাইটিস ‘বি’ ও ‘সি’ ভাইরাসের ওষুধের মূল্য সহজলভ্য করা।
চাকরি, শিক্ষা ও সামাজিক পরিসরে কুসংস্কার ও বৈষম্য দূর করা।
বিজ্ঞানভিত্তিক সচেতনতা ও তথ্য প্রচার করা।
বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে হেপাটাইটিস নিয়ন্ত্রণ
দেশের ৬০ শতাংশের বেশি মানুষ গ্রামে বসবাস করে। গ্রামাঞ্চলে সচেতনতা ও চিকিৎসা সেবার ঘাটতি রয়েছে।৬২ শতাংশ গর্ভবতী নারী গ্রামে, যাদের কাছে সঠিক টেস্ট ও ভ্যাকসিনেশন এখনো পৌঁছায়নি।কুসংস্কার, ভুল ধারণা ও পরিষেবার অভাবে তারা চরম ঝুঁকিতে রয়েছে। এজন্য স্বাস্থ্যসেবার বিকেন্দ্রীকরণ আবশ্যক। যাতে গ্রামীণ জনগণ হেপাটাইটিস প্রতিরোধ ও চিকিৎসার আওতায় আসতে পারে।
বাংলাদেশে ২০৩০ সালের মধ্যে হেপাটাইটিস নির্মূলের লক্ষ্যে করণীয় :
সব নবজাতককে ‘বার্থডোজ-এর আওতায় আনা’।
সরকারি, বেসরকারি সংস্থা, স্বাস্থ্যকর্মী ও সাধারণ মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।
সচেতনতা, স্ক্রিনিং, প্রতিরোধ ও চিকিৎসা – সব কিছু সহজলভ্য করতে হবে। বিশেষ করে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য।
জাতীয় ভাইরাল হেপাটাইটিস নিয়ন্ত্রণে সরকারিভাবে জাতীয় নীতিমালা ও কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে।
আসুন, হেপাটাইটিস নিয়ন্ত্রণে সব প্রতিবন্ধকতা দূর করে হেপাটিইটিস মুক্ত বাংলাদেশ গড়ি। এগিয়ে যাই সচেতনতা, কার্যকর পদক্ষেপ ও সহমর্মিতার আলোয়। আমরা প্রত্যাশা করি একটি হেপাটাইটিসমুক্ত বাংলাদেশের।