ভারতের ১৭০টিমাদরাসা বন্ধে করে দেওয়ায় উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রীর পুষ্কর সিং ধামির ওপর ক্ষোভ ঝাড়ল কংগ্রেস। উল্লেখ্য, ভারতের উত্তরাখন্ডে হলদোয়ানি জেলায় গত রবিবার সাতটিমাদরাসা সিল করে দিয়েছে রাজ্য প্রশাসন। রাজ্যটিতে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ১৭০টিমাদরাসা সিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছে হিন্দুস্তান টাইমসসহ অন্যান্য ভারতীয় গণমাধ্যমে।এ ঘটনায় ঘটনায় তীব্র নিন্দা এবং উদ্বেগ জানিয়েছে দেশটির সাধারণ আলেম সমাজ।
রাজ্যের কর্মকর্তাদের দাবি, এসব প্রতিষ্ঠানমাদরাসা বোর্ড বা রাজ্য শিক্ষা বিভাগের নিবন্ধন ছাড়াই পরিচালিত হওয়ায় সেগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে এমন ঘটনাকে সাম্প্রদায়িক উগ্রবাদিতা ও ধর্মীয় বিদ্বেষের স্পষ্ট বহিঃপ্রকাশ বলে উল্লেখ করেছেন আলেমরা। এদিকে গতকাল মঙ্গলবার এ ঘটনায় কংগ্রেসও উত্তরাখণ্ড সরকারের সমালোচনা করেছে। তারা রাজ্যে অনিবন্ধিতমাদরাসা বন্ধ করার জন্য আলাদাভাবে অভিযান চালানোর অভিযোগ করেছে।রাজ্য সরকার একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়কে টার্গেট করছে বলেও অভিযোগ করেছে কংগ্রেস।
গত রবিবার উত্তরাখণ্ড সরকার এক বিবৃতিতে ঘোষণা করেছে, রাজ্যজুড়ে জেলা কর্তৃপক্ষ গত দুই মাসে ১৭০টিরও বেশি অনিবন্ধিতমাদরাসা সিল করে দিয়েছে। কংগ্রেস নেতা ধসমানা বলেন, এটা স্পষ্ট যে রাজ্যের এই অভিযান মুসলিমদের লক্ষ্য করেই চালানো হয়েছে। তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি এবং অন্যান্য বিজেপি নেতারা কেন তাদের বক্তৃতায় কেবল অনিবন্ধিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কথা উল্লেখ না করে, কেবলমাদরাসার কথাই উল্লেখ করেছেন?’ এই কংগ্রেস নেতা আরো বলেন, ‘মাদ্রাসাগুলোও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।তারা (বিজেপি) কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়ের এমন কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি, যারা বাধ্যতামূলক নিবন্ধন ছাড়াই পরিচালিত হচ্ছে।’
অন্যদিকে উত্তরাখণ্ডের বিজেপি সভাপতি এবং রাজ্যসভার সাংসদ মহেন্দ্র ভাট পাল্টা আক্রমণ করে বলেন, ‘কংগ্রেস নেতারা ভোট ব্যাংকের রাজনীতির জন্য তুষ্টির সকল সীমা অতিক্রম করেছেন। অবৈধমাদরাসাগুলোর সমর্থনে আসার জন্য রাজ্যের জনগণ তাদের উপযুক্ত জবাব দেবে।’জমিয়তে উলেমা-ই-হিন্দ (জেইউএইচ)-এর মাওলানা মুকিম কাসমি বলেন, ‘সরকার মক্তব সিলগালা করে দিচ্ছে, যেগুলো মাত্র কয়েক ঘন্টার জন্য ধর্মীয় শিক্ষা প্রদান করে এবংমাদরাসার সংজ্ঞার আওতায়ও পড়ে না।’জেইউএইচের নৈনিতাল জেলা সভাপতি কাসমি বলেন, ‘হলদওয়ানিতে সিলগালা করা ১৭টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৮টি মক্তব।সেখানে পড়াশোনা করা শিশুদের ঐতিহ্যবাহী ও ধর্মীয় জ্ঞান অর্জনের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।’গত বছরের ডিসেম্বরে সরকার ‘অবৈধ’মাদরাসাগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে। ২৪শে মার্চ মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয় ঘোষণা করে, কর্তৃপক্ষ অবৈধ প্রতিষ্ঠানগুলো সিল করেই থেমে থাকবে না, বরং তাদের তহবিলের পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তও চালাবে।রাজ্য সরকারের মতে, রাজ্যে প্রায় ৬০০-৮০০টিমাদরাসা ছিল। যার মধ্যে ৪১৫টি উত্তরাখণ্ডমাদরাসা বোর্ডের সঙ্গে সম্পর্কিত, ১১৭টি উত্তরাখণ্ড ওয়াকফ বোর্ডের আওতাধীন এবং বাকিগুলো অনিবন্ধিত। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুসারে উত্তরাখণ্ডে ১৩.৯ শতাংশ মুসলিম জনসংখ্যা রয়েছে, যার বেশিরভাগই তরাই অঞ্চলে। হরিদ্বার এবং ইউএস নগর জেলায় যথাক্রমে ৩৪শতাংশ এবং ২২শতাংশ মুসলিম জনসংখ্যা রয়েছে।
এ ক্যাটাগরির আরো নিউজ..