মধ্য গাজার দেইর আল-বালাহ শহরের নার্স রেওয়া মোহসেন বলেন, তার তিন ও উনিশ মাস বয়সী দুই মেয়ের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিস জোগাড় করাটা এখন কষ্টকর। তিনি জানান, বছরের শুরুতে যুদ্ধবিরতির সময় কিছু ডায়াপার সংরক্ষণ করেছিলেন, তবে তা আর এক মাসের বেশি টিকবে না।বৃহস্পতিবার হোয়াটসঅ্যাপে তিনি জানান, তার মেয়েরা এখন বোমার শব্দে অভ্যস্ত হয়ে গেছে, সেই শব্দে তাদের অ্যাপার্টমেন্ট কেঁপে ওঠে। তিনি লেখেন, ‘কখনো কখনো আমি ওদের চেয়েও বেশি ভয় পাই।’ তিনি শিশুদের রঙিন বই ও খেলনার মাধ্যমে ব্যস্ত রাখেন। পরদিন তিনি জানান, তার এলাকায় ইসরায়েলি হামলার আগে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয় এবং তার পাশের ভবনে বোমা পড়ে। তিনি ফিরে গিয়ে দেখেন, ঘরের দরজা-জানালা উড়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘আল্লাহর শুকরিয়া যে আমি এখনো আমার মেয়েদের সঙ্গে জীবিত আছি।যখন তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়, তিনি কি ওই অ্যাপার্টমেন্টেই থাকবেন কি না, তিনি উত্তর দেন, ‘আর যাব কোথায়?’
গাজার বিভিন্ন অংশে চিকিৎসকরা অবরোধের প্রভাব বর্ণনা করেছেন এবং জানিয়েছেন, হাসপাতাল ইসরায়েলি হামলার লক্ষ্য হওয়ায় তারা আর নিজ কর্মস্থলেও নিরাপদ বোধ করেন না।নার্স রানদা সাঈদ বলেন, তিনি খান ইউনিসে ইউরোপিয়ান হাসপাতালে কাজ করছিলেন, তখনই সেটি ইসরায়েলি হামলায় আক্রান্ত হয়, যাকে তিনি ‘আতঙ্ক ও অসহায়তার মুহূর্ত’ হিসেবে বর্ণনা করেন। ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরে হামাসের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে আসছে যে তারা হাসপাতালগুলোকে গোপন ঘাঁটি ও অস্ত্র মজুদের জন্য ব্যবহার করে। তবে হামাস তা অস্বীকার করেছে।ইউরোপিয়ান হাসপাতাল এখন আর চালু নেই, তবে রানদা জানান, কর্মী ও রোগীরা কাছের নাসের হাসপাতালে স্থানান্তরিত হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের রোগীরা আমাদের মা, ছেলে, মেয়ে ও ভাই-বোনের মতোই। আমরা অন্তর থেকে জানি, আমাদের দায়িত্ব এখানেই শেষ হতে পারে না, বিশেষ করে এখন, যখন তাদের আমাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।’
নাসের ও গাজার অন্যান্য হাসপাতালের কর্মীরা বিবিসিকে বলেন, অবরোধের ফলে ব্যথানাশক ও গজের মতো মৌলিক জিনিস শেষ হয়ে এসেছে এবং তাদের কিছু সেবা বন্ধ করে দিতে হয়েছে।মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিশ্চিত করেছে, গাজায় ফিলিস্তিনিদের জন্য মানবিক সহায়তা বেসরকারি কম্পানির মাধ্যমে সরবরাহের জন্য একটি নতুন ব্যবস্থা তৈরি করা হচ্ছে, যেখানে ইসরায়েলি বাহিনী কেন্দ্রগুলোর চারপাশে নিরাপত্তা দেবে। জাতিসংঘ এই পরিকল্পনার সমালোচনা করে বলেছে, ‘সহায়তাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার’ করার মতো।গাজা শহরে ফিরে ইসমাইলের বাবা বলেন, তিনি আর তার ছয় সন্তানকে আগের মতো খাবার জোগাড় করে দিতে পারছেন না। তিনি বলেন, ‘আমার সন্তানরা ক্ষুধার্ত অবস্থায় ঘুমাতে যায়। অনেক সময় আমি একেবারে ছোট বাচ্চার মতো বসে কাঁদি, আমি তাদের জন্য খাবার জোগাড় করতে পারছি না।’