ভারতের জনপ্রিয় সিনেমা মুন্না ভাই এমবিবিএস বহু দর্শককে হাসিয়েছে ও কাঁদিয়েছে। তবে এবার সিনেমার সেই হাস্যরস মিশ্রিত গল্প যেন বাস্তবেই রূপ নিল। ভারতে ধরা পড়েছেন এক ভুয়া চিকিৎসক, যিনি নিজেকে স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ পরিচয় দিয়ে করেছেন অন্তত ৫০টি সিজারিয়ান অস্ত্রোপচার!
আসামের শিলচর শহরের দুটি বেসরকারি হাসপাতালে গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে রোগী দেখেছেন এবং অস্ত্রোপচার করেছেন পুলক মালাকার নামের ওই ব্যক্তি। এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, তিনি কোনো বৈধ ডিগ্রিধারী চিকিৎসক নন।শেষ পর্যন্ত বাস্তবের সেই ‘মুন্না ভাই’-এর পর্দা ফাঁস হয়েছে অপারেশন থিয়েটারেই। সিজারিয়ান অপারেশনের সময় পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।আসাম পুলিশের সিনিয়র কর্মকর্তা নুমাল মাহাত্তা জানান, ‘আমরা গোপন সূত্রে তার ব্যাপারে তথ্য পাই। এরপর শুরু হয় তদন্ত।নথিপত্র যাচাই করে নিশ্চিত হই—তার সার্টিফিকেট ভুয়া। বহু বছর ধরে তিনি একজন ভুয়া চিকিৎসক হিসেবে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছিলেন।’পুলক মালাকার আসামের শ্রীভূমির বাসিন্দা। সোমবার তাকে আদালতে হাজির করা হলে আদালত তাকে পাঁচ দিনের পুলিশ হেফাজতে পাঠায়।এই ঘটনার পর আবারও আলোচনায় আসছে আসামে ভুয়া চিকিৎসকদের দৌরাত্ম্য। বিষয়টি এতটাই গুরুতর হয়ে উঠেছে যে, চলতি বছরের জানুয়ারিতে মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার সরকার গঠন করেছে একটি বিশেষ ইউনিট—‘অ্যান্টি-কোয়েকারি অ্যান্ড ভিজিল্যান্স সেল’। রাজ্য পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করে এই ইউনিট কাজ করছে ভুয়া চিকিৎসকদের খুঁজে বের করতে।এই ইউনিট গঠনের পর থেকেই রাজ্যজুড়ে অভিযান চলছে। এখন পর্যন্ত ১০টির বেশি মামলা দায়ের হয়েছে ভুয়া ডাক্তারদের বিরুদ্ধে।বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভুয়া চিকিৎসকদের এই রমরমা ব্যবসা মূলত টিকে আছে সমাজের নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষদের দারিদ্র্য ও স্বাস্থ্যসচেতনতার অভাবকে পুঁজি করে। শহর হোক কিংবা গ্রাম, তাদের প্রতারণার শিকার হচ্ছেন বহু মানুষ। পুলক মালাকার ধরা পড়েছেন ঠিকই, কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়—আরও কতজন ‘মুন্না ভাই’ এখনো অপারেশন থিয়েটারে?