হোয়াইট হাউসে দেওয়া বক্তব্যে ট্রাম্প বলেন, ‘নির্বাচনী প্রচারে আমি আমেরিকান জনগণকে একটি সর্বাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। আজ আমি আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি, আমরা ‘গোল্ডেন ডোম’ নামের এই সিস্টেমের স্থাপত্য নির্ধারণ করে ফেলেছি।’ট্রাম্পের ভাষ্য অনুযায়ী, একবার পুরোপুরি নির্মাণ শেষ হলে ‘গোল্ডেন ডোম’ বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে — এমনকি মহাকাশ থেকেও — ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র আটকাতে পারবে।তিনি বলেন, ‘এটি আমাদের দেশের সাফল্য ও এমনকি অস্তিত্বের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’এই প্রকল্পের নেতৃত্ব দেবেন ইউএস স্পেস ফোর্সের জেনারেল মাইকেল গুটলাইন। ট্রাম্প জানান, কানাডাও এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার অংশ হতে আগ্রহ দেখিয়েছে, কারণ ‘তাদেরও নিরাপত্তা দরকার।’যদিও ট্রাম্প পুরো প্রকল্পের জন্য ১৭৫ বিলিয়ন ডলারের হিসাব দেন, যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেশনাল বাজেট অফিস (সিবিও) বলছে—মাত্র কয়েকটি আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র আটকাতে মহাকাশভিত্তিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ব্যয় হতে পারে ১৬১ থেকে ৫৪২ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে, যা ২০ বছরের প্রকল্প।ট্রাম্পের ঘোষিত ‘গোল্ডেন ডোম’ পরিকল্পনা আরো বিস্তৃত। এতে স্থল, সমুদ্র ও মহাকাশজুড়ে পরবর্তী প্রজন্মের সেন্সর ও ইন্টারসেপ্টর স্থাপনের কথা বলা হয়েছে।পেন্টাগনের প্রধান পিট হেগসেথ বলেন, এই সিস্টেম যুক্তরাষ্ট্রকে ড্রোন, ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র থেকে রক্ষা করবে, তা সেগুলো প্রচলিত হোক বা পারমাণবিক।‘গোল্ডেন ডোম’ নামটি নেওয়া হয়েছে ইসরায়েলের ‘আয়রন ডোম’ ব্যবস্থা থেকে, যা ২০১১ সাল থেকে ক্ষুদ্র পাল্লার রকেট ঠেকাতে ব্যবহৃত হচ্ছে।তবে যুক্তরাষ্ট্রের সামনে রয়েছে দীর্ঘ পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ও মহাকাশ থেকে হামলার ঝুঁকি।যুক্তরাষ্ট্রের ২০২২ সালের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা পর্যালোচনা নথিতে রাশিয়া ও চীনের ক্রমবর্ধমান হুমকির কথা বলা হয়েছে। চীন এখন ব্যালিস্টিক ও হাইপারসনিক প্রযুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে, অন্যদিকে রাশিয়া তার আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র আধুনিক করছে।উল্লেখ করা হয়, ড্রোনের হুমকি আরো বাড়বে, যেমনটি ইউক্রেন যুদ্ধেও দেখা গেছে। উত্তর কোরিয়া ও ইরান থেকেও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হুমকি রয়েছে।এই মাসের শুরুর দিকে রাশিয়া ও চীন ‘গোল্ডেন ডোম’ প্রকল্পকে ‘চরমভাবে অস্থিতিশীল’ বলে উল্লেখ করে। তারা বলেছে, এটি মহাকাশকে ‘যুদ্ধক্ষেত্রে’ পরিণত করতে পারে। ক্রেমলিনের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই পরিকল্পনা স্পষ্টভাবে মহাকাশে যুদ্ধ পরিচালনার সক্ষমতা বাড়ানোর দিকে যাচ্ছে।’সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র বাস্তবে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন প্রতিরোধে অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। ইউক্রেনে মার্কিন প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাগুলো রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করেছে। ইসরায়েলকে ইরানি হামলা থেকে বাঁচাতে এবং ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র-ড্রোন প্রতিহত করতেও যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধজাহাজ ও বিমানগুলো সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে।যুক্তরাষ্ট্রের এই উচ্চাকাঙ্ক্ষী প্রতিরক্ষা উদ্যোগ বিশ্বজুড়ে প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি মহাকাশে প্রতিযোগিতা ও উত্তেজনা আরো বাড়িয়ে তুলতে পারে।