পূর্ব ইউরোপে যুদ্ধ থামার লক্ষণ নেই। আমেরিকার প্রেসি়ডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যতই চেষ্টা করুন, যতই রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং ইউক্রেনের প্রেসি়ডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক করুন, যুদ্ধ চলছে সমান তালে। রাশিয়ায় যুদ্ধের নতুন কৌশল নিয়েছে ইউক্রেন। এখন তাদের অন্যতম প্রধান নিশানা রাশিয়ার তৈল পরিশোধনকেন্দ্রগুলি। সে সব কেন্দ্রে পর পর হামলা হচ্ছে। যার জেরে বিপাকে পড়েছে রুশ প্রশাসন। দেশের অভ্যন্তরেই জ্বালানির দাম আকাশছোঁয়া হয়ে গিয়েছে।
আমেরিকার সংবাদমাধ্যম সিএনএন-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, বেছে বেছে রাশিয়ার তৈল পরিশোধনাগার, পাম্পিং স্টেশন এবং জ্বালানিবাহী ট্রেনগুলিতে নিশানা করছে ইউক্রেন। এতে এক দিকে যেমন রুশ সেনা সমস্যায় পড়ছে, তেমন রাশিয়ার সাধারণ মানুষেরও ভোগান্তি হচ্ছে। গত কয়েক সপ্তাহে রাশিয়ায় জ্বালানির দাম হু হু করে বেড়েছে। প্রশাসন পেট্রল রফতানি নিষিদ্ধ করে দিলেও ঘাটতি মেটানো যাচ্ছে না। মনে করা হচ্ছে, এর নেপথ্যে অন্যতম কারণ ইউক্রেনের হামলা। যদিও মস্কো তা স্বীকার করেনি।
রিপোর্ট অনুযায়ী, শুধু চলতি মাসেই রাশিয়ার অন্তত ১০টি প্রধান জ্বালানিকেন্দ্রে ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন। তাদের গোয়েন্দা সূত্রে দাবি, যে কেন্দ্রগুলিতে হামলা হয়েছে, সেখান থেকে বছরে ৪.৪ কোটি টনের বেশি তেল উৎপন্ন হয়, যা রাশিয়ার সার্বিক উৎপাদনের ১০ শতাংশেরও বেশি। হামলা হয়েছে ভলগোগ্রা়দের লুকোইল কেন্দ্রে। এটি দক্ষিণ রাশিয়ার বৃহত্তম জ্বালানি উৎপাদন কেন্দ্র। গত ১৪ এবং ১৯ অগস্ট পর পর দু’বার এই কেন্দ্রে ইউক্রেনের বোমা পড়েছে। এ ছা়ড়া দক্ষিণ রাশিয়ার সারাটভে, রোস্তভ প্রদেশের তৈল পরিশোধনকেন্দ্রগুলিতে পর পর হামলা হয়েছে। ক্রাইমিয়া-সহ রাশিয়ার বহু এলাকায় পেট্রলের ঘাটতির খবর মিলেছে। পেট্রলের দাম রাশিয়ায় শুধু চলতি মাসেই ১০ শতাংশ বেড়ে গিয়েছে। যদিও প্রশাসনের তরফে এটাকে ‘যুদ্ধের রসদ’ সংক্রান্ত সমস্যা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। গভর্নর সারগেই আকসিওনোভ জানিয়েছেন, জ্বালানির দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার সব রকমের পদক্ষেপ করছে।
উল্লেখ্য, রাশিয়ার তেলের অন্যতম প্রধান ক্রেতা ভারত। ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বিদেশের বাজারে তেলের দাম কমিয়ে দিয়েছিল মস্কো। সেই কারণে রাশিয়া থেকে আমদানিকৃত তেলের পরিমাণও বা়ড়িয়ে দেয় ভারত। যা নিয়ে আমেরিকা বার বার অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। ইউক্রেন যে কৌশল নিয়েছে, তাতে রাশিয়ার অভ্যন্তরে তেলের ঘাঁটিগুলি সঙ্কটে। এর প্রভাব বিদেশে রফতানিতেও পড়তে পারে কি না, তা স্পষ্ট নয়। ভারত বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম তেল আমদানিকারক দেশ। এই মুহূর্তে রাশিয়া থেকেই সবচেয়ে বেশি তেল কেনে নয়াদিল্লি। যে কারণে ‘জরিমানা’ স্বরূপ ভারতের পণ্যে ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে আমেরিকা। রাশিয়ায় তেলের সঙ্কট প্রকট হলে ভারতও সমস্যায় পড়তে পারে। সে ক্ষেত্রে বেশি দাম দিয়ে অন্য দেশ থেকে তেল কিনতে হবে নয়াদিল্লিকে। দেশে জ্বালানির দামও বেড়ে যাবে।