আজ মঙ্গলবার (২২ জুলাই) দুপুর সোয়া ১২টার দিকে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার বশিকপুর ইউনিয়নের বশিকপুর গ্রামের পাল বাড়িতে গেলে তার এমন আর্তনাদ দেখা যায়। তখনও সায়ানের মরদেহ বাড়িতে আসেনি।আজ দুপুর পৌনে ১টার দিকে সায়ানের লাশবাহী গাড়ি বাড়ির সামনে আসে।গাড়ির শব্দ শুনেই কাঁদতে কাঁদতে ছুটে আসছিলেন তিনি। এ সময় কয়েকজন তাকে ধরে রাখেন। এরপর তিনি তাদের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে সায়ানের লাশবাহী গাড়ির কাছে ছুটে যেতে যান। সবাই তাকে বুঝিয়ে বাড়ির ভেতর দিকে নিয়ে গেলেও কান্না থামেনি তার।সায়ানের লশবাহী গাড়ি বাড়িতে আসার ১০ মিনিট পর অন্য একটি গাড়িতে তার বাবা মাইলস্টোন কলেজ শাখার রসায়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এএফএম ইউসুফও আসেন। গাড়ি থেকে নামতেই বন্ধু ও স্বজনদের জড়িয়ে কাতর হয়ে উঠেন তিনি। এ সময় সবাইকে তিনি বলছিলেন, ‘আমি তো কারো ক্ষতি করি নাই। আমার ছেলে মেধাবী ছিল।ক্লাসে সে প্রথম হত। এত সুন্দর, এত স্মার্ট ছিল। আমার ছেলেরে আমি সবসময় আইনস্টাইন বলে ডাকতাম। কখনো দুষ্টামি করেও মিথ্যা কথা বলি নাই। আমার সঙ্গে কেন এমন হলো!’জানা গেছে, গতকাল সোমবার (২১ জুলাই) দুপুরে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান রাজধানীর উত্তরায় দুর্ঘটনায় পড়ে।বিমানটি উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে গিয়ে পড়ে এবং বিধ্বস্ত হয়। সঙ্গে সঙ্গে বিমান ও স্কুল ভবনটিতে আগুন ধরে যায়। যে ভবনে এটি বিধ্বস্ত হয় সেখানে বহু স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থী ছিল। যাদের বেশিরভাগই হতাহত হয়েছে।শায়ানের চাচা মিজানুর রহমান বলেন, ‘ঝলসানো শরীর ও কাঁধে ব্যাগ নিয়ে সায়ান ঘটনাস্থল থেকে নিজেই বের হয়ে আসে। পরে তার বাবা-মা শনাক্ত করে। সেই প্রথম বের হয়ে এসেছে ভিডিওতে দেখেছি।’জানা যায়, আজ মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৩টার দিকে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় লক্ষ্মীপুরের সায়ান মারা যায়। বেলা ৩টার দিকে নামাজের জানাযা শেষে তার দাদা ডা. মাকসুদুর রহমানের কবরের পাশে সায়ানের মরদেহ দাফন করা হয়। সায়ানের বাবার বন্ধু মো. দিদার বলেন, ‘ইউসুফের এক ছেলে ও এক মেয়ে। সায়ান অত্যন্ত মেধাবী ছিল। তার বাবার স্বপ্ন ছিল তাকে আমেরিকায় পড়ালেখা করাবে। কিন্তু বিমান দুর্ঘটনায় তার ছেলেটি মারা গেছে। জনবহুল এলাকায় কেন বিমান প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। যেখানে মানুষজন থাকে না, সেখানে এসব প্রশিক্ষণ হবে।’জানা গেছে, নিহত সায়ান লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার বশিকপুর ইউনিয়নের বশিকপুর গ্রামের পাল বাড়ির সন্তান। তার বাবা এএফএম ইউসুফ মাইলস্টোন কলেজ শাখার রসায়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও মা শামীমা শাম্মী মাইলস্টোন স্কুল শাখার রসায়নের শিক্ষক। তার একমাত্র বোন ফারিশা মাইলস্টোন স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী। তারা উত্তরা ১০ নম্বর সেক্টরে ভাড়া থাকতেন। সবশেষ ঈদুল আজহার ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে মা-বাবা ও বোনের সঙ্গে সে ঈদ করতে এসেছে। আবারও কোনো এক ছুটিতে পরিবারের সঙ্গে বেড়াতে আসার কথা ছিল। কিন্তু লাশ হয়ে সে একেবারেই চলে এসেছে। তার মৃত্যুতে পরিবার ও আত্মীয় স্বজনদের মাঝে শোকের মাতম চলছে।একই ঘটনায় সদর উপজেলার পার্বতীনগর ইউনিয়ন সোনাপুর গ্রামের রহিমবক্স হাজী বাড়ির আব্দুস সামাদের ছেলে আফনান ফায়াজও মারা যায়। তাকে আজ সকালে ঢাকায় দাফন করা হয়েছে বলে পরিবার সূত্রে জানা গেছে। আফনানও সপ্তম শ্রেণির ছাত্র ছিল।