ওজন নিয়ে উদ্বেগ এখন ঘরে ঘরে। কেউ ডায়েট করছেন, কেউ হাঁটছেন, কেউ বা নানা রকম স্লিমিং পণ্য খাচ্ছেন—তবু ওজন কমছে না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখা যায়, প্রচুর পরামর্শমূলক ভিডিও ও পোস্টে। কেউ কিনছেন স্লিমিং টি, কেউ খাচ্ছেন আপেল সিডার ভিনেগার, নিমপাতা, ঘৃতকুমারী, করলার রস কিংবা মরিঙ্গা পাউডার।কিন্তু সত্যিই কি এগুলো ওজন কমায়? চলুন, জেনে নিই।
ওজন বাড়ে কেন?
গ্রিন লাইফ মেডিক্যাল কলেজের এন্ডোক্রাইনোলজি ও মেটাবলিজম বিভাগের অধ্যাপক তানজিনা হোসেন বলছেন, ওজন বাড়ার মূল কারণ অতিরিক্ত ক্যালরি গ্রহণ ও কম কায়িক শ্রম। তবে এটি পুরোপুরি ক্যালরি ভারসাম্যের বিষয় নয়। জিন, হরমোন, মানসিক অবস্থা, এমনকি কিছু ওষুধের প্রভাবও থাকতে পারে।হাইপোথাইরয়েডিজম, পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম (পিসিওএস), কর্টিসল হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, এমনকি বিষণ্ণতার কারণে ইমোশনাল ইটিং বা অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা থেকেও ওজন বাড়ে।
আপনি কি অতিরিক্ত ওজনে ভুগছেন?
বডি মাস ইনডেক্স বা বিএমআই দিয়ে বোঝা যায় আপনি আদর্শ ওজনে আছেন কি না। এশীয়দের ক্ষেত্রে ২৩-এর বেশি হলে ওজন বেশি, ২৫-এর বেশি হলে স্থূলতা ধরা হয়। শুধু ওজন নয়, পেটের মাপও গুরুত্বপূর্ণ—নারীদের ক্ষেত্রে ৮০ সেন্টিমিটারের বেশি এবং পুরুষদের ৯০ সেন্টিমিটারের বেশি হলে তা ঝুঁকিপূর্ণ ধরা হয়।
ওজন বাড়লে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদ্রোগ, স্ট্রোক, ফ্যাটি লিভার, বন্ধ্যত্ব এমনকি কিছু ক্যান্সারের ঝুঁকি তৈরি হয়। মানসিক স্বাস্থ্যের উপরেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে—বডি ইমেজ সমস্যা, বিষণ্নতা ও সামাজিক বুলিংয়ের শিকার হতে হয় অনেককে।
ওজন কমাতে যা করণীয়:
১। খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন
খাদ্য থেকে প্রতিদিন ৫০০ ক্যালরি কম নিলে প্রতি দুই সপ্তাহে ১ কেজি ওজন কমানো সম্ভব। ফাস্ট ফুড, চিনি, ময়দা বাদ দিয়ে গ্রহণ করুন জটিল শর্করা (লাল চাল, ওটস), প্রোটিন (ডাল, দুধ, মাছ), কম চর্বিযুক্ত খাবার ও প্রচুর শাকসবজি।
প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট করে সপ্তাহে ৫ দিন হাঁটা, জগিং, সাঁতার বা নাচ করলে ক্যালরি বার্ন হয় এবং বিপাকের হার বাড়ে। দিনে ১০,০০০ পদক্ষেপে শরীর সক্রিয় থাকবে।
৩। ঘুম ও স্ক্রিন টাইম
প্রতিদিন ৭ ঘণ্টা গভীর ঘুম জরুরি। কম ঘুম ও দীর্ঘ স্ক্রিনটাইম (২ ঘণ্টার বেশি) ওজন বৃদ্ধির জন্য দায়ী হতে পারে।
৪। প্রয়োজনে ওষুধ
যদি বিএমআই ৩০-এর বেশি হয়, বা স্থূলতা সংক্রান্ত জটিলতা থাকে, তবে চিকিৎসকের পরামর্শে অ্যান্টি-ওবেসিটি ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে। এসব ওষুধ ৬ মাসে ৫-২০% ওজন কমাতে সক্ষম, তবে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে।
সতর্কতা ও আশ্বাস
ওজন কমানো একটি ধাপে ধাপে চলা যাত্রা। অনিয়ন্ত্রিত ডায়েট বা চটজলদি সমাধান নয়, বরং দীর্ঘস্থায়ী সুস্থ অভ্যাসই সফলতা আনবে। তাই খাবার, ঘুম, শরীরচর্চা এবং মানসিক সুস্থতার সমন্বয়েই আসবে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল।
এ ক্যাটাগরির আরো নিউজ..