খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা গতকাল দুপুরে প্রথমে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড ঘেরাও করতে যায়। সেখান থেকে দুপুর দেড়টার দিকে তারা সচিবালয়ের সামনে জড়ো হন। ঢাকার বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আবদুর রউফ পাবলিক কলেজ, ঢাকা কলেজ, সিটি কলেজ, আইডিয়াল কলেজ, নূর মোহাম্মদ কলেজ, মিরপুর বাঙলা কলেজ, কমার্স কলেজ, আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ, মিরপুর কলেজসহ বিভিন্ন কলেজের চলমান এইচএসসি পরীক্ষার্থীসহ আরো কিছু শিক্ষার্থী এই আন্দোলন কর্মসূচিতে অংশ নেয়। শুরুতে তারা সচিবালয়ের ৩ নম্বর ফটকের সামনে বিক্ষোভ দেখায়। এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দেয়।এ ছাড়া ‘আমার ভাই মরল কেন, প্রশাসন জবাব দে’, ‘অ্যাকশন অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকে। শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ঘিরে সচিবালয়ের ভেতর এবং বাইরে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য সতর্ক অবস্থান নেন। পরে প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্রের বাকি ফটোগুলোও বন্ধ করে দেওয়া হয়। এই পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে শিক্ষাসচিব সিদ্দিক জুবায়েরকে প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয় সরকার। তাদের অন্যান্য দাবি পর্যালোচনার জন্য কমিটি করা হবে বলে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীর জানান।কিন্তু শিক্ষা উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে সচিবালয়ের সামনে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ চলতে থাকে। বিকেল ৩টা ৪০ মিনিটের দিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা সচিবালয়ের ১ নম্বর গেট দিয়ে হুড়মুড় করে ভেতরে ঢুকে পড়ে। ভেতরে ঢুকে তারা ৭ নম্বর ভবনের পেছন দিয়ে পূর্ব দিকে যেতে থাকে। সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা তাদের বাধা দিয়ে আটকাতে পারেননি। শিক্ষার্থীরা সচিবালয়ের ভেতরে ঢুকে গাড়ি ভাঙচুর শুরু করে। এরপর বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য সচিবালয়ে প্রবেশ করে শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা করেন। এতে শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে দিগ্বিদিক ছুটতে থাকে। এ সময় টিয়ার শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে পুলিশ। শিক্ষার্থীরা অন্তত ১৫টি গাড়ি ভাঙচুর করে। এর মধ্যে পুলিশের গাড়িও রয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর লাঠিপেটায় কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়। এ সময় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী শিক্ষার্থীদের সচিবালয় থেকে বের হওয়ার সুযোগ দেয়। হুড়াহুড়ি করে সচিবালয় থেকে বের হতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের অনেকের জুতা খুলে যায়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চত্বরে প্রবেশের গেট ও ৭ নম্বর ভবনের দক্ষিণ পাশে অনেক জুতা পড়ে থাকতে দেখা গেছে। কিছু সময় পর সচিবালয়ের সামনের এলাকা অনেকটা ফাঁকা দেখা যায়।শিক্ষার্থীরা সচিবালয় থেকে বের হয়ে ১ নম্বর গেটে অবস্থানকারী আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যদের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। এতে সেনাবাহিনীসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কয়েকজন সদস্য আহত হন। এরপর পুলিশ সচিবালয়ের সামনের সড়ক থেকে শিক্ষার্থীদের সরিয়ে দিতে সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। শিক্ষার্থীরাও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে জবাব দেয়। এরপর শিক্ষার্থীরা জিরো পয়েন্টের দিকে গিয়ে অবস্থান নেয়। জিরো পয়েন্টের দিকে পুলিশ কয়েক দফা সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এরপর বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে সচিবালয়ের সামনের আব্দুল গনি রোডে যানবাহন চলাচল শুরু করে।সচিবালয়ের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশের উপকমিশনার মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন গতকাল বিকেল ৫টার দিকে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘পরিস্থিতি যথেষ্ট উত্তপ্ত ছিল। তবে এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আমরা আমাদের জায়গা থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।’বিকেল ৫টার পরও শিক্ষার্থীরা গুলিস্তান ও জিরো পয়েন্ট এলাকায় অবস্থান করছিল। ওই সময় সচিবালয়ের বেশ কয়েকটি ফটক খুলে দিলে আটকা পড়া কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বেরিয়ে যান। এরপর পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ার শেল ছুড়ে গুলিস্তানের দিক থেকেও শিক্ষার্থীদের সরিয়ে দেয়। সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে গুলিস্তান জিরো পয়েন্ট এলাকা স্বাভাবিক হয়।এদিকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে আহত শিক্ষার্থীদের মধ্যে অন্তত ৬৬ জন শিক্ষার্থী ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যায় বলে ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক মো. ফারুক নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, তাদের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।