হঠাৎ দেখি সাথে সাথে এক মেয়ে হাটতেছে। সব সময় দ্রুত হাটা আমার অভ্যাস। এ নিয়ে বিরুপ মন্তব্যও আছে। সে দৌড়ে দৌড়ে হাঁটছে আমার পাশে। জিজ্ঞেস করি, সাথে সাথে হাটছো কেন, আমি দাঁড়াই।
মামা একটা পানি নেও, আমার হাসি পেল, এত কষ্ট করে আসছে। এত লোক গেলো তুমি আমাকেই দেখলে কেন। আর কাউকে’ত বলতে দেখলাম না।
না আমি তোমাকে ঐ সাতরাস্তা থেকেই ফলো করছি, এমন সুন্দর করে আবেদনময় করে বলল, আমি মুখের দিকে তাকাই, (মনে মনে ভাবি এমন সুন্দর করে যদি প্রিয়তমা একবার বলতো। তার সে বলায় যে আকাশ বাতাস মুখরিত হতো। সমুদ্রে জাগতো আনন্দের ঢেউ।) কি বলো তুমি সাতরাস্তা থেকেই ফলো করছো,হ্যাঁ সেখান থেকেই দেখছি।(মনে হলোনা হঠাৎ সে আমাকে এমন অসত্য কথা বলছে। কিন্তু মনে প্রশ্ন জাগলো আমি’ত তাকে কোথাও দেখলাম না, সামনেও না পিছনেও না। হঠাৎ এখন সাথে আসলো কেমনে।) সাতরাস্তা সেখান থেকে অনেক পিছনে, তবে সেখান থেকেই গাড়িতে নেমে আসছি। আর সে অনেক দূর থেকেই হয়তো আমাকে দেখছে। তুমি এত দূর থেকেই আমাকে দেখছো! হ্যাঁ সেখান থেকেই ভাবছি, ঐ মামার কাছে একটা পানির বোতল বেচবো। পানির মতই সরল ও সুন্দর কথা। অনেক ক্ষুধা ও পানির পিপাসা। কিন্তু এখন একটা বোতল কিনে একডোক পানিও খেতে ইচ্ছে করছে না। আস্ত বোতলটা হাতে টেনে নিয়ে যেতে হবে। তাই বলি আমিত এখন পানি নিবোনা, না, নেও না এখন নিবো না, না নেও, তাহলে দশটা টাকা দাও, তার আবেদন গুলো যথেষ্ট সুন্দর। দশ টাকা সে চেয়েছে, সাহায্য হিসেবে চেয়েছে।এখন তাকে দেওয়া উচিৎ। কিন্তু তাকে দশ টাকা দিলে, তাঁর চাওয়ার অভ্যাস বাড়তে সাহায্য করবে। তাই একটা পানি কেনাই ভালো। বলি তাহলে একটা পানিই দাও।কত পানি, পনেরো টাকা না, সুন্দর একটা ভংগি করে বললো, ইস বিশ টাকা। তাঁর ঘামে ভেজা মুখ দেখে ছবি তুলতে ইচ্ছে হলো। আসো একটা ছবি তুলি! সে সুন্দর করে হাসি দিয়ে বললো, না তুমি ভিডিও বা টিকটকে দিয়ে দিবে। না ভিডিও বা টিকটকে দিবোনা। তুমি আসো, সে পাশে আসলো। তারপর আবার বললো না, তুমি আমার একার ছবি তোল। আমার মনে জাগলো তাঁর কি আবার প্রেমিক আছে না কি। যে সে দেখতে পারে কোন না কোনভাবে। সেদিন দেখলাম ক্লাস সেভেনের জুটি গয়নাগাটি, টাকা পয়সা নিয়ে পালিয়েছে। অন্য শহরে গিয়ে ঘর বাধবে।তাও একজোড়া না, এক সাথে দুই জোরা। আমার না থাকলেও সুতারং তাঁর থাকতেও পারে। না হয় তাঁর যে বয়স, তাতে আমার সাথে ছবি তুলতে পারতো। নারিত্ব ও আত্ন মর্যাদাকে সম্মান জানিয়ে, আমি আর কোন কথা বাড়াই না। মাথার কাপড় আরেকটু সামনে টেনে বললো নেও এখন তোল, তাঁর দুইটা ছবিই তুলি।। এমন সুন্দর করে শুরু থেকেই তুমি করে বলছে, যেন আমি তার যথেষ্ট প্রিয়জন। কি নাম তোমার, ইমা,ইমা’ত সুন্দর নাম, আমার ভাগ্নির নাম। সে আমার সাথে হাটতে হাটতে গল্প জুড়ে দিলো। আমারা দুই জমজ বোন। আমার নাম ইমা, আর ওর নাম মিম। সে আমার বড় ছিলো, অনেক দুষ্ট ছিলো। অনেক বেশি খেলাধুলা করতো। এত বলতাম এত বাইরে যেওনা, এত বাইরে যাওয়া ভালোনা। সে কোন কথাই শুনতো না। বড় ছিলো মানে, সে মারা গেছে। কি ভাবে মারা গেছে গাড়ি অ্যাক্সিডেন্টে মারা গেছে। সে যে ভয়ংকর বর্ননা দিলো তা আর না বলি। তুমি এমন কাজ করো, তুমিও একটু সাবধানে চলা ফেরা করো। না এখনত আমি ঢাকা শহরের সব যায়গা চিনি, জানি। এখন আমার আর ভয় নাই। বেশ জোরালো তার কন্ঠ। তাঁর বাবা নেই। হাটতে হাটতে হাতিরঝিল সিগনাল পার হই। কি পানি দিলো, এতক্ষনে তা একবার দেখতে ইচ্ছে হলো, দেখি। ব্রান্ড ভালো পছন্দ হয়নি।ইমা দ্রুত ফুটপাত থেকে হেটে গিয়ে পানির বোতল রাখলো। আমি নিচ থেকে হাটি, ইমা পানির কেস নিচে রেখে তাকিয়ে আছে। আমি ডাক দিয়ে বলি, ইমা,, তোমার পানি ভালোনা। ওখানে দাঁড়ান লোকজন হেসে দিলো।।আবার আমার প্রচন্ড পানির পিপাসা জাগলো, হাতে উষ্ণ ঠান্ডা পানির বোতল। কিন্তু কোথাও দাঁড়িয়ে একটু পানি খাওয়ার ইচ্ছে হলোনা। ভরা পানির বোতল হাতে নিয়ে হাটছি আর ভাবছি। কিভাবে চলছে জীবন, ক্ষুধার শেষ নেই, পিপাসার অন্ত নেই। আমার যেন কোন কিছুই নেই। এখন আমার সবকিছু ভরা থাকার কথা। অথচ সব কিছু যেন খালি। তাই ওপাশ যেহেতু সম্পূর্ণ খালি, এপাশ সম্পূর্ণ ভরাই থাক। ব্যালেন্সিং হোক। আধভরার চেয়ে সম্পূর্ণ ভরা ভালো, ব্যালেন্সিং হয় ভালো। আমি ভরা বোতল হাতে নিয়েই বাসায় ফিরি। আর মনে মনে ভাবি সে না বলুক,
সে ত বলেছে। সেও হয়তো মনে মনে অনেক বেশি বলে। তাইতো সে দৌড়ে আসছে। দিন দিন আমার আশা বাড়ে, আর বাড়ে শুন্যতা।
এ ক্যাটাগরির আরো নিউজ..