ঢাকার খিলক্ষেতের ছোট্ট এলাকা নিকুঞ্জ। এলাকাটিতে নানাবিধ নাগরিক সমস্যা থাকলেও বাংলার টেসলাখ্যাত অটোরিক্সা ছিল এই এলাকার এক আতঙ্কের নাম। চালকদের বেপরোয়া গতির কারণে প্রতিদিনই কোন না কোন দূর্ঘটনা ছিল নিকুঞ্জের নিত্যদিনের ঘটনা। সেই সঙ্গে যানজট সৃষ্টিতে অটোচালকদের সীমাহীন যন্ত্রণা তো ছিলই।
আর এই সমস্যা থেকে নিকুঞ্জবাসীকে মুক্তি দিতে যিনি অগ্রগামী ভূমিকা রেখেছেন তাঁর নাম জাহিদ ইকবাল। যিনি নিজে সাংবাদিকতার পাশাপাশি খিলক্ষেত টানপাড়া কল্যাণ সোসাইটি নামের সামাজিক সংগঠনের আহ্বায়ক।
মূলত— এলাকার সচেতন বাসিন্দাদের যৌথ উদ্যোগে নিকুঞ্জকে অটোরিক্সামুক্ত করেছেন তারা।

কিন্তু, কিভাবে নিকুঞ্জকে অটোরিক্সামুক্ত করা হলো? এত বড় চ্যালেঞ্জ কেনই বা নিয়েছিলেন মি. ইকবালসহ অন্যরা? বিষয়টি নিয়ে ভয়েস অব লিডার্সের সঙ্গে কথা বলেছেন খিলক্ষেত টানপাড়া কল্যাণ সোসাইটির এই আহ্বায়ক।
নিকুঞ্জকে ‘অটোরিক্সামুক্ত এলাকা’ হিসেবে গড়ে তোলার বিষয়ে জাহিদ ইকবাল লিডার্সকে জানান— চলতি ২০২৫ সালের ৩০ এপ্রিল নিকুঞ্জ-২ এলাকায় অবস্থিত বেসরকারি টেলিভিশন নাগরিক টিভির সামনের রাস্তায় মায়ের সঙ্গে দাঁড়িয়ে থাকা এক শিশুর ওপর দিয়ে মারাত্মকভাবে অটোরিক্সা উঠিয়ে দেয় এক চালক। যা এলাকার অনেকের চোখের সামনেই ঘটে। মূলত, সেদিনই এলাকাবাসীর ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসের প্রতিফলন ঘটে। বন্ধ ঘোষণা করা হয় নিকুঞ্জের সড়কে অটোরিক্সা চলাচল। আর সাহসী এই পদক্ষেপ বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন জাহিদ ইকবালসহ নিকুঞ্জ এলাকার আরো কয়েকজন।

এ বিষয়ে মি. ইকবাল ভয়েস অব লিডার্সকে বলেন, শুরুতে বিষয়টি নিয়ে আমরা কমিউনিটি ব্যক্তিবর্গ ও এলাকার পরিচিত বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে কথা বলি। যাদের প্রত্যেকেই এলাকায় অটোরিক্সা চলাচল বন্ধে একমত হোন। সবার সিদ্ধান্ত মোতাবেক সেদিনই আমরা অটোরিক্সা চলাচল বন্ধ করে দেয়ার ঘোষণা দেই। যা এলাকাকে দূর্ঘটনামুক্ত রাখতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলছে।
অটোরিক্সা বন্ধ হওয়াতে বাসিন্দারা এখন সড়কে নিরাপদ-নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারছে জানিয়ে ভয়েস অব লিডার্সকে জাহিদ ইকবাল বলেন, অটোরিক্সা বন্ধ হওয়াতে এলাকায় দূর্ঘটনা নেই বললেই চলে। এলাকার শিশু থেকে শুরু করে বয়স্ক সকলেই এখন রাস্তায় নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারে। এটা নিকুঞ্জবাসীর জন্য একটা স্বস্তির বিষয়। ঢাকা শহরের বুকে আমরা প্রথম অটোরিক্সামুক্ত এলাকা গড়ে দেখিয়েছি।
মি. ইকবাল জানান, কাজটা খুব বেশি কঠিন আবার সহজও ছিল না। যখন আমরা অটোরিক্সা বন্ধের ঘোষণা করি তখন কিছু কুচক্রী মহলের তৎপরতা আমরা লক্ষ্য করি। কিন্তু, যেহেতু নিকুঞ্জের সর্বস্তরের মানুষ আমরা এই আন্দোলনের সাথে একমত ছিলাম তাই তাদের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়।
বাধা আসার বিষয়ে এই কমিউনিটি লিডার জানান— অটোরিক্সা বন্ধ করে দেয়ায় একটি মহল পূর্বাচল আর্মি ক্যাম্পে আমার ও আমার মামাতো ভাইয়ের (সৈকত সরকার) নামে বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছিল। কিন্তু, আর্মি অফিসাররা যখন এলাকায় আসলো তখন তারা এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন- সড়কে নির্বিঘ্ন ও নিরাপদ চলাচলের স্বার্থেই এলাকাবাসীর সিদ্ধান্তে অটোরিক্সা বন্ধ করা হয়েছে। এই সত্যটি জানতে পেরে সেদিন সেনা অফিসাররাও আমাদেরকে ধন্যবাদ দিয়ে যায় এবং ভবিষ্যতেও সহযোগিতার আশ্বাস জানান তারা।

ছবি: ভয়েস অব লিডার্সে কথা বলছেন জাহিদ ইকবাল।
নিকুঞ্জে কারা অটোরিক্সা চালু করতে সে সময় তৎপরতা দেখিয়েছিল— জানতে চাইলে জাহিদ ইকবাল লিডার্সকে বলেন, এরা ছিল বেশকিছু অটোরিক্সা মালিক। এদের পেছনে এমন একটা মহল ছিল যারা এসব রিক্সা গ্যারেজ মালিক থেকে কাঁচা টাকার (চাঁদা) ভাগ পেত। মূলত, অটোরিক্সা বন্ধ হয়ে যাওয়াতে টাকা আসাও বন্ধ হয়। তাই তারা আমাদের নামে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে আমাদেরকে হয়রানি করতে চেয়েছিল। এতে তারা প্রশাসনের কাছ থেকে উল্টো জবাব পেয়েছে।
লিডার্সকে জাহিদ ইকবাল বলেন, এলাকায় অটোরিক্সা বন্ধে প্রশাসন আমাদেরকে অনেক সহযোগিতা করেছেন। বিশেষ করে খিলক্ষেত থানার ওসি সাজ্জাদ হোসেন এ কাজে অনেক বেশি সহযোগিতা করেছেন। তিনি এলাকাবাসীর মতামতকে সম্মান জানিয়েছে আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল।
বর্তমানে নিকুঞ্জ এলাকার বিভিন্ন সড়কে টানানো হচ্ছে ‘অটোরিক্সামুক্ত এলাকা’ সম্বলিত সাইনবোর্ড। ভবিষ্যতে এলাকায় অটোরিক্সার মতো এই বিপদযান চলাচল বন্ধ অব্যাহত রাখার ব্যাপারে মি. ইকবাল ভয়েস অব লিডার্সকে বলেন, আমাদের শরীরে এক ফোটা রক্ত থাকতে অটোরিক্সা নামক এই বিপদযান-মরণযানকে আমাদের এলাকায় আর চালু করতে দিব না। এ বিষয়ে আমরা নাগরিকরা ঐক্যবদ্ধ আছি।