প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া ৪২টি চূড়ান্ত ছবির মধ্যে এ ছবিটিকেই সেরা হিসেবে বেছে নেওয়া হয়। প্রতিবছরের মতো এবারও আমস্টারডামভিত্তিক ‘ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটো ফাউন্ডেশন’ আয়োজিত এই প্রতিযোগিতায় জমা পড়েছিল ১৪১টি দেশ থেকে তিন হাজার ৭৭৮ আলোকচিত্রীর ৫৯ হাজার ৩২০টি ছবি।পুরস্কারজয়ী ছবিটিতে দেখা যায়, ৯ বছর বয়সী মাহমুদ আজজুর; ইসরায়েলি বোমা হামলায় যার দুটি হাতই শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।২০২৩ সালের মার্চে হামলার সময় মাহমুদ তার পরিবার নিয়ে পালাচ্ছিল। এ সময় পরিবারের অন্য সদস্যদের তাড়া দিতে ফিরে তাকাতেই ঘটে বিস্ফোরণ। এতে ঘটনাস্থলেই তার একটি হাত শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং অন্যটি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।পরে সেই হাতও কেটে ফেলতে হয়।ছবিটি প্রথম প্রকাশিত হয় মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসে। পরে মাহমুদ ও তার পরিবারকে চিকিৎসার জন্য কাতারের দোহায় সরিয়ে নেওয়া হয়। চিকিৎসা শেষে এখন সে নিজের পা দিয়ে ফোনে গেম খেলা, লেখা এবং দরজা খোলা শিখছে।উল্লেখ্য, প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত তালিকায় বাংলাদেশি আলোকচিত্রীর তোলা গত বছরের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানেরও ছবি ছিল।গাজার সেই হতভাগা শিশু মাহমুদের সাক্ষাৎকার নিয়েছে আলজাজিরা। শিশু মাহমুদ করুণ সুরে জানতে চেয়েছে, ‘এভাবে আমি কী করে বাঁচব বলুন?’ সেদিনের ঘটনা সম্পর্কে বলে, ‘প্রথমে বুঝতে পারিনি আমি আহত হয়েছি। মনে হয়েছে হাতটি শরীর থেকে খসে পড়ে গেছে। আশপাশে তাকিয়ে কোনো কিছুর হিসাব মেলাতে পারছিলাম না।উড়ে যাওয়া হাতটি আমার ডান পাশেই পড়েছিল। আমার মা-ই জানালেন যে আমার এক হাত বোমার আঘাতে উড়ে গেছে। তখনই আমার চোখে জল এলো। হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলাম। তখন কেমন লাগছিল, তা বোঝাতে পারব না।’চেতনানাশক ওষুধ ছাড়াই যখন মাহমুদের অপারেশন চলছিল, তখন সে ভীষণ ভড়কে যায়। ‘ডাক্তার যখন অপারেশন করছিলেন, তখন সবটাই আমি টের পেয়েছি। ব্যথাটা ছিল অসহ্য। চিৎকার করে কাঁদছিলাম।’মাহমুদের মতো পরিণতি গাজার অনেক শিশুর। দখলদার ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচারে বোমা হামলায় এসব শিশু শরীরের কোনো না কোনো অঙ্গ হারিয়েছে। গাজার গণহত্যায় হাজারের বেশি শিশু প্রাণও হারিয়েছে।মাহমুদ এখন কাতারের রাজধানী দোহার একটি স্কুলে পড়লেও সব সময় ভাবে, কখন তার দেহে দুটি কৃত্রিম হাত লাগিয়ে দেওয়া হবে।মাহমুদ বলেন, ‘নিজের হাতে খেতে না পারার কষ্ট মনের মধ্যে সব সময় গেঁথে থাকে। তবে গাজায় ফেরার স্বপ্ন সে কখনোই ত্যাগ করেনি। তার আশা, যুদ্ধ শেষ হলে সে আবার গাজায় ফিরতে পারবে।’