দর পতন থেকে বের হতে পারছে না শেয়ারবাজার। গত সপ্তাহের চার কর্মদিবসের প্রতিদিন ঢাকার শেয়ারবাজারে সূচক কমে যায়। চলতি সপ্তাহের প্রথম দুই দিনেও একই অবস্থা। প্রতিদিনই বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ সব শেয়ার বিক্রি করে লোকসান নিয়ে বাজার ছাড়ছেন। এ নিয়ে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত টানা ষষ্ঠ দিনের দর পতনে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই)
প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ১৬০ পয়েন্ট কমেছে। পতনের হার ৩ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। সূচক নেমেছে
৫০৪৪ পয়েন্টে। এর আগে গত বছরের নভেম্বরের দ্বিতীয় ও তৃতীয় সপ্তাহ মিলে এমন দর পতন হয়।
গত ছয় দিনে তালিকাভুক্ত ৩৬০ কোম্পানির মধ্যে ২৮৬টির বা ৭৯ শতাংশের দর পতন হয়েছে।
এ ছাড়া তালিকাভুক্ত ৩৭ মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর হারিয়েছে ৩২টি। লেনদেন কমে গতকাল নেমেছে ৩০০ কোটি টাকার ঘরে।
কয়েকটি ব্রোকারেজ হাউসের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বাজারে আসা ছেড়ে দিয়েছেন। এখনও যাদের শেয়ার আছে, এমন বিনিয়োগকারীরা জানতে চাচ্ছেন, এ বাজার আদৌ ‘ভালো’ হওয়ার সম্ভাবনা আছে কিনা। বিনিয়োগকারীদের তারা কোনো উত্তর দিতে পারছেন না।
ডিএসইর ব্রোকারদের সংগঠন ডিবিএ সভাপতি সাইফুল ইসলাম সমকালকে বলেন, বিনিয়োগকারী বাড়ানো বা কতজন বিনিয়োগকারী আসবে, তার লক্ষ্য নির্ধারণ করা বিএসইসির কাজ নয়। বিএসইসির কাজ হলো, বাজার মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ে সম্মিলিতভাবে এমন পরিবেশ তৈরি করা, যেখানে বিনিয়োগকারীরা স্বচ্ছন্দে বিনিয়োগ করতে আস্থা পান। দুঃখজনক হলেও সত্য, এমন পরিবেশ বিএসইসি তৈরি করতে পারেনি। বিনিয়োগ পরিবেশ ঠিক নেই বলে বাজারও ঠিক নেই।
এ বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির সঙ্গে কথা হয়েছে কিনা– জানতে চাইলে সাইফুল ইসলাম বলেন, গত আট মাসে কয়েকবার কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে তারা বাজার নিয়ে উদ্বেগের কথা বলেছেন। কিন্তু কমিশনের কোনো উদ্যোগ দেখছেন না। উদ্যোগ না থাকার কারণ হতে পারে, কমিশন ঠিকমতো কাজ করতে পারছে না। গত মাসে বিএসইসিতে কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার মধ্য দিয়ে এর কিছুটা প্রকাশ হয়েছে। বিনিয়োগকারীরা এসব বিষয় পর্যবেক্ষণ করছেন। এর কোনো সমাধান হয়েছে কিনা– খোদ কমিশন থেকে তেমন কোনো বার্তা নেই। ফলে বিনিয়োগকারীরা যা বোঝার বুঝে নিচ্ছেন। তিনি মনে করেন, বর্তমান কমিশনের কর্মকর্তারা কর্মকর্তা না হয়ে যদি শুধু বিনিয়োগকারী হতেন, তাহলেও তারাও এমন বাজারে বিনিয়োগ করতেন না বা বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে নিতেন।
করণীয় জানতে চাইলে দীর্ঘ অভিজ্ঞ এ ব্রোকার বলেন, সময় কখনও শেষ হয়ে যায় না। বর্তমান অবস্থায় বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে নিয়ন্ত্রক সংস্থাসহ সব অংশীজনের একসঙ্গে বিনিয়োগকারীদের এই বলে আশস্ত করতে হবে, তারা বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে আছেন। বিনিয়োগকারী জানেন, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। তারা শুধু এটাই দেখতে চান, তাদের বিনিয়োগ সুরক্ষিত রাখতে সংশ্লিষ্টরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছেন এবং বিনিয়োগ থেকে মুনাফা পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এ জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে এবং এটা আগে অনুধাবন করতে হবে, যে বাজার নিয়ে তারা কাজ করছেন, তা ঠিক নেই।