জানাজায় অংশ নেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, এনসিপির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। এ ছাড়াও পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক আবু হাসানাত মোহাম্মদ আরেফীন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাজেদুল ইসলাম, জেলা বিএনপির আহবায়ক আবদুর রশিদ চুন্নু মিয়া, গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদের সদস্য শহিদুল ইসলাম ফাহিম এবং স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।নামাজে জানাজা শেষে লামিয়াকে তার বসতবাড়ির উঠানে জুলাই বিপ্লবে শহীদ পিতা জসিম উদ্দিনের কবরের পাশে দাফন করা হয়।এর আগে রবিবার সন্ধ্যায় লামিয়ার লাশবাহী গাড়িটি পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার পাংগাশিয়া ইউনিয়নের নিজ গ্রামে পৌঁছালে শোকের ছায়া নেমে আসে। পাংগাশিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে তাকে বাবার কবরের পাশে সমাহিত করা হয়।
লামিয়ার মা রুমা বেগম জানান, ঘটনার পর লামিয়াকে বিভিন্ন স্বজনদের বাসায় নিয়ে যাওয়া হতো যাতে কারো বাজে কোনো মন্তব্য শুনতে না হয়। এ ছাড়াও সামনে এসএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি যাতে ভালোভাবে নিতে পারে। মেয়েকে এক মুহূর্তের জন্য একা রাখেননি। একপর্যায়ে তার ঢাকার বাসায় নিয়ে যান। তাকে মানসিক ডাক্তার দেখানো হচ্ছিল নিয়মিত। ডাক্তার এবং পরিবারের সদস্যরা কাউন্সিলিং করত নিয়মিত। লামিয়ার আত্মহত্যার ওইদিন বিকেলে জুলাই ফাউন্ডেশনের সাবরিনা সেবন্তি তাদের (লামিয়া) বাসায় গিয়ে কাউন্সিলিং করে জীবন সম্পর্কে পজিটিভ ধারণা দেয় এরপর অনেক আদরও করে লামিয়াকে। সন্ধ্যা ৭টায় লামিয়ার মা ছোট দুই সন্তান নিয়ে স্বল্প সময়ের জন্য বাহিরে যায়। ফিরে দেখে লামিয়া গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আছে। তখন তার চিৎকারে প্রতিবেশীরা এসে উদ্ধার করে সহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। কর্তব্যরত চিকিৎসক লামিয়াকে দেখে মৃত ঘোষণা করেন।
রাতেই হাসপাতালে জুলাই ফাইন্ডেশনের নেতারা
লামিয়ার মৃত্যুর খবর পেয়ে ওই রাতেই সহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ছুটে যান জুলাই ফাইন্ডেশনের মুজাহিদুল ইসলাম শাহীন, স্নিগ্ধ, সেবন্তি, সারজিস আলম। তারা লামিয়ার মাকে সমবেদনা জানান। এরপর লাশ বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার জন্য একটি ফ্রিজিং অ্যাম্বুল্যান্স এবং একটি মাইক্রোবাস ভাড়া করে দেন জুলাই ফাউন্ডেশনের নেতারা।
স্থানীয়রা যা বললেন
লামিয়ার নিহতের দাদা সোবাহান হাওলাদার বলেন, ‘যদি ধর্ষকদের ওই ঘটনা সহ্য করতে না পেরে আমার নাতনি আত্মহত্যা করেছে। এ ছাড়া ওর আত্মহত্যার কোনো কারণ ছিল না। ঘটনার পর সর্ব মহলের সহযোগিতা পেয়েছি। আমি ওই অপরাধীদের ফাঁসি চাই।’ স্থানীয় বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘যাদের কারণে মেয়েটি আত্মহত্যার করেছে তাদেরকে এমন বিচারের আওতায় আনা হোক যাতে কেউ কোনোদিন এরকম কাজ করার সাহস না পায়।’ স্থানীয় ইউপি সদস্য রানা হাওলাদার বলেন, ‘লামিয়ার আত্মহত্যার পেছনে যারা জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’
অতীত ঘটনা
উল্লেখ্য, ২০২৪ এ ফ্যাসিস্ট বিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়ে ১৯ জুলাই ঢাকার মোহাম্মদপুরে গুলিবিদ্ধ হয়ে ২৯ জুলাই প্রাণ হারান লামিয়ার বাবা জসিম উদ্দিন। গত ১৮ মার্চ সন্ধ্যার দিকে বাবার কবর জিয়ারত শেষে নানা বাড়ি যাওয়ার পথে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে যায় পাঙ্গাসিয়া এলাকার দুর্বৃত্ত সাকিব মুন্সি ও সিফাত মুন্সি। ঘটায় ধর্ষণের ঘটনা। এ ঘটনায় দেশ জুড়ে ব্যাপক আলোচনা হয়। লামিয়া ও তার পরিবারের পাশে দাঁড়ায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, দলের শীর্ষ নেতা এবং প্রশাসনের লোকজন। ঘটনার পর সাহসিকতার সঙ্গে থানায় গিয়ে ধর্ষকদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন লামিয়া। মামলাটি বর্তমানে তদন্তাধীন রয়েছে এবং পাশাপাশি পলাতক দুই আসামি সাকিব ও সিফাতকে দুমকি থানা পুলিশ দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করে।শনিবার রাতে লামিয়া আত্মহত্যা করে জীবন বিসর্জন দেন। রাজধানীর শেখেরটেক এলাকার ৬ নম্বর রোডের একটি ভাড়া বাসা থেকে গলায় ফাঁস দেওয়া ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করে সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।