এর আগে গত ১১ মার্চ একই অফিসে অভিযান চালিয়ে দুদক আলমগীর কবিরের বিরুদ্ধে ১৫১টি ফাইল আটকে রাখার প্রমাণ পেয়েছিল।দুদকের তথ্য মতে, নতুন এমপিওভুক্তির জন্য ১৫৫টি আবেদন জমা পড়ে। এসব আবেদনের ফাইল প্রথমে পরিচালক মোহা. আছাদুজ্জামানের কাছে দাখিল করা হয়। এর মধ্যে শর্ত পূরণ করতে না পেরে ৪৭টি বাতিল হয়। এরপর তিনি সহকারী পরিচালক আলমাস উদ্দিনের কাছে পাঠান।আলমাস উদ্দিন তা উপপরিচালক আলমগীর কবিরের কাছে পাঠান। আলমগীর কবির ৯২টি ফাইল আটকে রেখে সেগুলো আর পরিচালকের কাছে পাঠাননি। অথচ এই ফাইল পাঠানোর জন্য মাত্র দুই দিন সময় রয়েছে।অভিযোগ রয়েছে, এমপিওভুক্তি ও বদলির ক্ষেত্রে ৫০ হাজার থেকে লাখ টাকা ঘুষ আদায় করেন উপপরিচালক আলমগীর কবির।তাকে টাকা না দিলে ফাইল পাঠানো হয় না পরিচালকের কাছে।মাউশির রাজশাহী আঞ্চলিক কার্যালয়ের পরিচালক মোহা. আছাদুজ্জামান বলেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ফাইল পাঠাতে বললেও তিনি নানা তালবাহানায় সেটা করেন না।দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় রাজশাহীর সহকারী পরিচালক আমির হোসাইন জানান, ঘুষের জন্য ফাইল আটকে রাখেন এমন অভিযোগ পেয়ে অভিযান চালানো হয়েছে। ৯২টি ফাইল আটকে রাখার প্রমাণ পাওয়া গেছে। জব্দ করা হয়েছে ১৫৫টি ফাইল।এর আগে ১৫১টি ফাইল আটকে রাখার প্রমাণ পেয়েছিল দুদক। তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ঢাকায় প্রতিবেদন পাঠান হবে।এদিকে, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষার (মাউশি) রাজশাহী কার্যালয়ের পরিচালকের পদ ফাঁকা হলে তৎকালীন উপপরিচালক (ডিডি) আলমগীর কবীরকে পরিচালক পদে পদায়নের জন্য সুপারিশ করেছিলেন আওয়ামী লীগ সরকারের তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। তবে সরকার পরিবর্তনের পর সেই পদে তাকে পদায়ন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ।গত বছরের ১৮ নভেম্বর এ আদেশ জারি করা হয়। এর আগে দুর্নীতির অভিযোগে এই কর্মকর্তাকে রাজশাহী থেকে তাৎক্ষণিক বদলি করা হয়েছিল। বদলির ৫ মাস ৭ দিনের মাথায় আবার তাকে রাজশাহীতে পদায়ন করা হয়। অথচ আলমগীর কবীর সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। মাউসি সূত্র মতে, ডিগ্রি স্তরের তৃতীয় শিক্ষকের এমপিওভুক্তির (মান্থলি পেমেন্ট অর্ডার) বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সুস্পষ্ট নির্দেশনা ছিল- ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বরের পরে নিয়োগপ্রাপ্ত তারা এমপিওভুক্ত হবেন না। কিন্তু আগেরবার উপপরিচালক থাকাকালে সরকারের এই পরিপত্র লঙ্ঘন করে আলমগীর কবীর প্রাপ্য না হলেও তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত ও পদোন্নতি প্রদান করেন।এ ব্যাপারে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ৫ জুন মাউশির মহাপরিচালককে তদন্তের নির্দেশ দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের শৃঙ্খলা বিষয়ক শাখা। সেই সঙ্গে তাকে তাৎক্ষণিক বদলির আদেশ দেওয়া হয়। ২২তম বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের এই কর্মকর্তাকে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে বদলি করা হয়। কিন্তু গত বছরের নভেম্বরে আবারো তাকে একই পদে পদায়ন করা হয়।রাজশাহী মাউশির একটি সূত্র জানায়, পরিচালক অধ্যাপক মো. মাহবুবুর রহমান শাহ গত বছরের ১০ জানুয়ারি অবসরপূর্ব (পিআরএল) ছুটিতে যান। সে সময় দাপ্তরিক কোনো আদেশ ছাড়াই উপপরিচালক আলমগীর কবীর ভারপ্রাপ্ত পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। অনুমোদন ছাড়াই আর্থিক ক্ষমতাও ব্যবহার করেন সেসময় তিনি। এরপর ওই বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি স্ববেতনে পরিচালক হওয়ার আবেদন করেন। তার আবেদনে সুপারিশ করেছিলেন তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। কিন্তু কাম্য যোগ্যতা না থাকায় পরিচালক হতে পারেননি আলমগীর।এই সময় তার বিরুদ্ধে জাল সনদে এমপিওভুক্তি, বিধি লঙ্ঘন করে তৃতীয় শিক্ষককে এমপিওভুক্তির বিষয়ে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় রাজশাহীর নিউ গভ. ডিগ্রি কলেজের উপাধ্যক্ষ মো. মতিউর রহমানের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের একটি কমিটিকে। একই সঙ্গে আলমগীর কবীরকে তাৎক্ষণিক বদলি করা হয়।এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে আলমগীর কবীর বলেন, আমি কোনো অনিয়ম করিনি। ঘুষ নেওয়ার অভিযোগও সঠিক নয়। কেন ফাইল জব্দ করা হয়েছে বলতে পারব না।