এটা বরং সমাজের গভীর ক্ষত; নাগরিকের মৌলিক অধিকার পূরণে রাষ্ট্রের ব্যর্থতার ফোঁড়। সম্মানজনক কর্মসংস্থানের অভাব, ক্ষুধার তাড়না ও নারীপাচারের ঘটনা ছাড়া কোনো নারী স্বেচ্ছায় এ পেশায় আসেন না। নারীর সম্ভ্রম ও আত্মমর্যাদার পরিবর্তে শরীর বিক্রিকে প্রাধান্য দিয়ে নারীসত্তার চরম অবমাননা করেছে ওই নারীবাদী কমিশন। আমরা আবারও তীব্র নিন্দা জানাই।
সমাবেশ সম্পর্কে সংগঠনটির যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক সাক্ষাত্কারে বলেছেন, ‘নারী সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব ইসলামের শাশ্বত বিধান আল্লাহর কোরআনের সঙ্গে সরাসরি সংঘর্ষিক। শুধু সংঘর্ষিকই নয়, বরং কোরআনকে কটাক্ষকারী প্রস্তাব। আমাদের দেশে আবহমানকাল থেকে যে সমাজব্যবস্থা গড়ে উঠেছে, পরিবারভিত্তিক সমাজব্যবস্থা; এই প্রস্তাবের মূল কথা হলো, আমাদের দেশের চলমান পরিবার ও সমাজ ব্যবস্থা ভেঙে পাশ্চাত্যের একটি সমাজব্যবস্থা, পরিবারবিহীন কালচার গড়ে তোলা, এলজিবিটিকিউ বা সমকামিতার বৈধতা দেওয়ার পরিবেশ সৃষ্টি করা। মোট চার দফা দাবিতে শনিবার মহাসমাবেশ হতে যাচ্ছে। এই দাবির সঙ্গে দেশের সব ইসলামপন্থী একমত ও সবার অভিন্ন দাবি।’
নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন বাতিল ছাড়া আরো তিনটি দাবির মধ্যে রয়েছে সংবিধানে বহুত্ববাদের পরিবর্তে আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস পুনর্বহাল, ফ্যাসিবাদের (শেখ হাসিনার) আমলে করা সব মামলা প্রত্যাহার, শাপলা চত্বরসহ সব গণহত্যার বিচার, ফিলিস্তিন ও ভারতে মুসলিম গণহত্যা ও নিপীড়ন বন্ধের দাবি।
সমাবেশের প্রস্তুতি সম্পর্কে হেফাজতে ইসলামের আরেক যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সমাবেশে সারা দেশ থেকে লোক আসবে। অন্তত পাঁচ হাজার বাসে তারা আসবে। এ নিয়ে আমাদের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। আশা করি সফলভাবে মহাসমাবেশ শেষ করতে পারব।’
এসব দাবি পূরণ না করা হলে ঢাকাসহ সারা দেশ অচল করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সিনিয়র সহসভাপতি ও ঢাকা মহানগর সভাপতি মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব। গতকাল জুমার নামাজের পর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ হুঁশিয়ারি দেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের দাবি না মানা হলে আগামীকাল ঢাকা অচল হয়ে যাবে।’ সমাবেশ সফল করার লক্ষ্যে গতকাল বিক্ষোভ সমাবেশ করে সংগঠনের পল্টন জোন। সমাবেশে সারা দেশ থেকে মানুষ অংশগ্রহণ করবে জানিয়ে জুনায়েদ আল হাবীব বলেন, এরই মধ্যে দিনাজপুর থেকে ৪২টি বাস আসার জন্য প্রস্তুত হয়েছে। চার থেকে সাড়ে হাজার মানুষ বরিশাল থেকে লঞ্চে আসবে।
সমাবেশ সফল করতে তিনি সবাইকে শনিবার ফজরের নামাজের পর মিছিল নিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জড়ো হওয়ার আহ্বান জানান। হেফাজতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির মাওলানা মহিউদ্দিন রব্বানী বলেন, আগামীকাল (আজ শনিবার) আলটিমেটাম দেওয়া হবে। হেফাজতের নেতাদের নামে, আলেমদের নামে থাকা মামলা প্রত্যাহার এবং নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন বাতিল না হলে প্রয়োজনে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।
জানা গেছে, শুধু চট্টগ্রাম থেকেই সমাবেশে অর্ধলক্ষাধিক হেফাজত নেতাকর্মী যোগ দেবেন বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন। সমাবেশ সফল করতে দেশে সংগঠনের নেতাকর্মীরা জোর প্রস্তুতি নিয়েছেন জানিয়ে সংগঠনের দায়িত্বশীল নেতারা জানান, নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের কোরআন-সুন্নাহবিরোধী প্রতিবেদনসহ কমিশন বাতিল, সংবিধানে আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস পুনর্বহাল, আওয়ামী ফ্যাসিবাদের আমলে করা সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে সংঘটিত গণহত্যাসহ সব হত্যার বিচার এবং ফিলিস্তিন ও ভারতে মুসলিম গণহত্যা ও নিপীড়ন বন্ধের চার দফা দাবিতে এই মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ সূত্রে জানা গেছে, মহাসমাবেশ সফল করতে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের সব জেলা, উপজেলায় এবং মাদরাসাকেন্দ্রিক প্রস্তুতিসভা করেছেন সংগঠনের নেতাকর্মীরা। মহাসমাবেশ সফল করতে এবং ভারতে প্রণীত ওয়াক্ফ আইন ও ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের গণহত্যার বিরুদ্ধে জনমত তৈরি করতে গত ২২ এপ্রিল থেকে সারা দেশে গণসংযোগ করেছে সংগঠনটি।
গত শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) জেলা-উপজেলা সদরে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। সব কর্মসূচিতে আসন্ন মহাসমাবেশের প্রস্তুতিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংগঠনের নেতারা। হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মীর ইদ্রিস গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা সব স্তরে, একেবারে তৃণমূল পর্যায়ে মহাসমাবেশের প্রচারণা চালিয়েছি। আমরা দেখতে পেয়েছি, মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে সবার মধ্যে একটা জাগরণ তৈরি হয়েছে। আমরা কমপক্ষে পাঁচ লাখ লোকের সমাবেশ করতে পারব বলে আশা করছি।’
চট্টগ্রাম থেকেই অর্ধলক্ষাধিক নেতাকর্মী মহাসমাবেশে যোগ দেবেন বলে জানিয়েছেন হেফাজতের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা নাছির উদ্দীন মুনির। হেফাজতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ও হাটহাজারী মাদরাসার সিনিয়র মুফতি এবং মুহাদ্দিস মাওলানা জসিমুদ্দিন বলেন, নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন যে প্রস্তাব দিয়েছে তা কোরআন ও সুন্নাহর সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এ প্রস্তাব সরকারকে বাতিল করতেই হবে, পাশাপাশি বিতর্কিত এ নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনও বাতিল করতে হবে।