বরগুনার তালতলীর বড়বগী ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মাওলানা আনোয়ার হোসেন ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আলী আহমদ ফরাজীকে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে মো. ফোরকান গাজী নামের উপজেলা বিএনপির এক সদস্যের বিরুদ্ধে।
ওই ঘটনায় ভুক্তভোগী সদস্যরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। পরে ইউএনও অভিযুক্ত বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তালতলী পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন।এর আগে শনিবার (২৪ মে) বিকেল ৩টার দিকে তালতলী উপজেলার মালিপাড়া স্লুইসগেট এলাকায় ওই মারধরের ঘটনা ঘটে।ভুক্তভোগীরা জানান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর বিভিন্ন সময় বড়বগী ইউনিয়নের স্বাভাবিক কার্যক্রমে অযাচিত হস্তক্ষেপ করে বিভিন্ন অনৈতিক সুবিধা দাবি করেন উপজেলা বিএনপির সদস্য মো. ফোরকান গাজী। তিনি ইউনিয়ন পরিষদের বিভিন্ন সরকারি বরাদ্দের ভাগ চেয়ে সদস্যদের হুমকি-ধামকি দিতেন। বিষয়টি অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছালে ইউনিয়ন পরিষদের ১১ জন সদস্য মো. ফোরকান গাজীর বিরুদ্ধে ইউএনওর কাছে নালিশ ও লিখিত অভিযোগ দেন। এতে ক্ষুব্ধ হন ফোরকান গাজী।পরে শনিবার দুপুরে বড়বগী ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মাওলানা আনোয়ার হোসেন পরিষদ থেকে বের হয়ে বাসায় যাওয়ার পথে তাকে মালিপাড়া স্লুইসগেট এলাকায় তুলে নিয়ে যান ফোরকান গাজী ও তার লোকজন। ওই সময় ঘটনাস্থল থেকে আরেক ইউপি সদস্য আলী আহমদ ফরাজী অটোরিকশায় যাওয়ার সময় তাকেও পথরোধ করে আটকে রেখে উভয়কে মারধর করেন তারা। এতে রক্তাক্ত হন প্যানেল চেয়ারম্যান মাওলানা আনোয়ার হোসেন। পরে স্থানীয়রা আহত অবস্থায় তাদের উদ্ধার করে তালতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যান।আহত ইউপি সদস্য আলী আহমদ ফরাজী বলেন, গত ৫ আগস্টের পর থেকে বিএনপি নেতা ফোরকান গাজী পরিষদে গিয়ে হতদরিদ্রদের বরাদ্দকৃত চালসহ বিভিন্ন ধরনের সরকারি বরাদ্দের ভাগ দাবি করেন। কিন্তু তার এই অনৈতিক আবদার আমরা পূরণ করতে না পারায় তিনি পরিষদের সকল সদস্যদের গালমন্দ করেন এবং প্রাণনাশের হুমকি দেন। তার এমন আচরণে আমরা অতিষ্ঠ হয়ে ইউএনওর কাছে নালিশ ও লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। এর জের ধরে আজকে তিনি আমাদের প্যানেল চেয়ারম্যান ও আমাকে মারধর করেছেআহত বড়বগী ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মাওলানা আনোয়ার হোসেন বলেন, ইউএনওর কাছে ফোরকানের বিরুদ্ধে পরিষদের সকল ইউপি সদস্য মিলে নালিশ ও অভিযোগ দেওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে আমাদেরকে মারধর করেছেন।তালতলী উপজেলা বিএনপি সদস্য মো.. ফোরকান গাজী বলেন, তাদের সঙ্গে আমার লোকজনের হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। ওই সময় প্যানেল চেয়ারম্যান নাকে আঘাত পেয়েছেন। কিন্তু কোনো মারধরের ঘটনা ঘটেনি। বিষয়টি উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এবং ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মাহবুবুল আলম মামুন ভাই জানেন। তিনিই বিষয়টি সমাধান করে দেবেন।তবে ওই বিষয়ে জানতে মাহবুবুল আলম মামুনের ব্যবহৃত মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।তালতলী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক শহীদুল হক বলেন, ফোরকান আমার দলের সদস্য তা ঠিক, কিন্তু তিনি আমার নিয়ন্ত্রণে নেই। তিনি উপজেলা বিএনপির বহিষ্কৃত এক নেতার অনুসারী। তার কথায় চলে এবং তার সঙ্গে নৈতিক-অনৈতিক, নানাভাবে সখ্যতা রয়েছে ফোরকানের।তিনি আরো বলেন, দুই ইউপি সদস্যকে মারধরের বিষয়টি জেনেছি। তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে জেলা বিএনপির দলীয় ফোরামে সুপারিশ করা হবে।তালতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহজালাল বলেন, বিষয়টি জেনেছি। আহত দুই ইউপি সদস্যকে থানার এসে ওই বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দিতে বলেছি। তারা অভিযোগ দিলে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।তিনি আরো বলেন, ওই বিএনপি নেতা ফোরকানের বিরুদ্ধে বড়বগী ইউনিয়ন পরিষদের ১১ জন সদস্যের স্বাক্ষরিত একটি অভিযোগ ইউএনও আমাকে দিয়েছেন। তিনি আমাকে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব।তালতলী ইউএনও মোসা. উম্মে সালমা বলেন, দুই ইউপি সদস্যকে মারধরের বিষয়টি জেনেছি। যারা ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছি।