রুটে নিশ্চিত করেন, যুক্তরাষ্ট্র ন্যাটোর মাধ্যমে ইউক্রেনকে ব্যাপকভাবে প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহ করবে এবং ইউরোপীয় দেশগুলো এই খরচ বহন করবে। ট্রাম্প বলেন, ইউরোপীয় দেশগুলো ইউক্রেনকে তাদের নিজস্ব প্যাট্রিয়ট এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম দেবে এবং যুক্তরাষ্ট্র সেইসবের বদলে নতুন প্রতিস্থাপন পাঠাবে। রুটে জানান, এই চুক্তির আওতায় ক্ষেপণাস্ত্র ও গোলাবারুদ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। যদিও ট্রাম্প বা রুটে সরাসরি কোনো অস্ত্র পাঠানো হবে, তা বিস্তারিত বলেননি।তবে ট্রাম্প জানান, অত্যাধুনিক অস্ত্র দ্রুত যুদ্ধক্ষেত্রে পৌঁছে দেওয়া হবে এবং এর মূল্য বিলিয়ন ডলারের বেশি হবে।রুটে বলেন, ‘যদি আমি আজ ভ্লাদিমির পুতিন হতাম… আমি ইউক্রেন নিয়ে আলোচনাকে আরো গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করতাম। এই মন্তব্যের সময় ট্রাম্প মাথা নাড়েন। এদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এ জানান, ট্রাম্পের সঙ্গে তার কথা হয়েছে এবং তিনি ইউক্রেনকে সমর্থন দেওয়ার ইচ্ছার জন্য ধন্যবাদ জানান।তিনি বলেন, ‘আমরা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে প্রয়োজনীয় সমাধান নিয়ে আলোচনা করেছি যাতে রুশ হামলা থেকে মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায় এবং আমাদের অবস্থান আরো জোরালো হয়।’ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, আগামী ৫০ দিনের মধ্যে যদি শান্তিচুক্তি না হয়, তাহলে রাশিয়ার সঙ্গে ব্যবসা করা দেশগুলোর ওপর ১০০ শতাংশ ‘সেকেন্ডারি ট্যারিফ’ আরোপ করা হবে। যেমন, যদি ভারত রাশিয়া থেকে তেল কেনা চালিয়ে যায়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয় পণ্য আমদানির সময় ১০০ শতাংশ শুল্ক গুণতে হবে। যা পণ্যের দাম এতটাই বাড়িয়ে দেবে যে, মার্কিন ব্যবসায়ীরা অন্য দেশ থেকে কেনাকাটা করতে বাধ্য হবেন। এতে ভারতের আয় হ্রাস পাবে এবং রাশিয়ার অর্থনীতিও ধাক্কা খাবে।রাশিয়ার রপ্তানির ৬০ শতাংশ এবং রাজস্বের প্রায় এক-তৃতীয়াংশই আসে তেল ও গ্যাস থেকে, তাই এই শুল্ক ব্যবস্থা মস্কোর অর্থনীতিতে বড় ধাক্কা দিতে পারে। তবে ট্রাম্পের এই ঘোষণার পর মস্কো স্টক এক্সচেঞ্জের সূচক ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। এটি ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা দেওয়ার প্রথম ঘোষণা। একই সঙ্গে পুতিনের প্রতি তার ভাষা আরো কঠোর হয়েছে।তবে ট্রাম্প এক পর্যায়ে ইঙ্গিত দেন, ইউক্রেনও আক্রমণের জন্য আংশিক দায়ী ছিল।পুতিনের সঙ্গে সম্পর্ক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা অনেকবার কথা বলেছি, তবে কথা বলার পরপরই ইউক্রেনে ভয়াবহ হামলা হয়েছে। তখন বোঝা যায়, কথা অর্থহীন।’ তিনি বলেন, ‘আমি তাকে (পুতিন) ঘাতক বলতে চাই না, তবে তিনি একজন কঠোর মানুষ। বহু বছর ধরে প্রমাণিত হয়েছে – তিনি ক্লিনটন, বুশ, ওবামা, বাইডেন – সবারই ভুল ধারণা দিয়েছেন। তবে আমাকে নয়।’রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে শান্তি আলোচনার দুটি দফা এই বছর অনুষ্ঠিত হয়েছে, তবে পরবর্তীতে আর কোনো আলোচনা হয়নি। মস্কো এর দায় চাপিয়েছে কিয়েভের ওপর। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বর্তমানে কিয়েভে যুক্তরাষ্ট্রের দূত কিথ কেলগের সঙ্গে বৈঠক করছেন এবং তাকে ট্রাম্পের সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। মস্কোর পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য আসেনি, তবে রুশ রাজনীতিবিদ ও বিশ্লেষকদের প্রতিক্রিয়ায় মিশ্র প্রতিফলন দেখা গেছে।পুতিনের সাবেক উপদেষ্টা সের্গেই মারকভ বলেছেন, ট্রাম্পের শুল্ক হুমকি ‘একটি ব্লাফ’ এবং এর মানে হলো ‘তিনি ইউক্রেনে শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা থেকে সরে এসেছেন।’ রুশ সিনেটর কনস্তান্তিন কোসাচেভ মন্তব্য করেন, ‘যদি ইউক্রেন নিয়ে ট্রাম্পের এটাই সবকিছু হয়, তবে এটা অনেক নাটক, কিন্তু বাস্তবে কিছু নয়।’ডেমোক্র্যাট সেনেটর জিন শাহিন বলেন, ‘ইউরোপীয় অংশীদারদের বিনিয়োগের ফলে ইউক্রেনে প্যাট্রিয়ট মিসাইল পাঠানোর সিদ্ধান্ত এসেছে – এটি বহু প্রাণ রক্ষা করবে।’ তিনি একে ইতিবাচক হলেও বিলম্বিত পদক্ষেপ বলে অভিহিত করেন।