অনৈতিক সম্পর্কের কথা প্রচার করায় আসামিরা অলি মিয়াকে খুন করে লাশ আট টুকরা করেন। বালিশচাপায় শ্বাসরোধে হত্যার পর হেক্সো ব্লেড দিয়ে ঠাণ্ডা মাথায় লাশ আট টুকরা করে তা দুটি ব্যাগে ভরে রাস্তায় ফেলে দেন খুনিরা।
গাজীপুরের টঙ্গীতে উদ্ধার আট টুকরা লাশের দায় স্বীকার করে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে আসামিরা পুরো ঘটনার বর্ণনা দেন।আজ মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) টঙ্গী পূর্ব থানা পুলিশ ও আদালত সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।আসামিদের দেওয়া তথ্য মতে, ৮ আগস্ট টঙ্গী পূর্ব থানা পুলিশ টঙ্গী স্টেশন রোডের হাজী বিরিয়ানি হাউসের সামনে থেকে সন্দেহজনকভাবে দুটি ট্রাভেল ব্যাগ উদ্ধার করে। ব্যাগ খুলে ভেতরে একটি মানবদেহের আটটি অংশ পাওয়া যায়। কিন্তু লাশের মাথা ছিল না। পাওয়া যায়নি লাশের পরিচয়ও।পরে লাশের আঙুলের ছাপ থেকে পরিচয় উদ্ধার করে। সে অনুযায়ী পরিবারে খবর দেওয়া হলে নিহতের স্ত্রী এসে স্বামীর লাশ শনাক্ত করেন। নিহত ব্যক্তির নাম অলি মিয়া (৩৫)। তিনি নরসিংদী সদর থানার করিমপুর এলাকার সুরুজ মিয়ার ছেলে।এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী বাদী হয়ে টঙ্গী পূর্ব থানায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা ও লাশ গুমের মামলা করেন। এরপর টঙ্গী পূর্ব থানা পুলিশ মামলার তদন্তে নেমে ব্যাগ রাখার স্থানের সিসিটিভি ফুটেজ থেকে প্রধান অভিযুক্ত আপেল মাহমুদ সাদেক ও সাজ্জাদ হোসেন রনিকে শনাক্ত করে। তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় আসামিদের অবস্থান ও আসামিদের সঙ্গে যোগাযোগ থাকা জনৈক বাপ্পীকে শনাক্ত করা হয়। এরপর টঙ্গী পূর্ব থানা পুলিশ গাজীপুরের গাছা এলাকা থেকে বাপ্পীকে আটক করে টঙ্গীর বনমালা রোডে সাদেকের বাসা শনাক্ত করে। বাসায় অভিযান করে পুলিশ টয়লেটের ফলস ছাদ থেকে অলির মাথা, কাপড়চোপড় ও হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দেশি অস্ত্রসহ নানা সরঞ্জাম উদ্ধার করে।সরঞ্জামের মধ্যে মোড়কজাত করার কাজে ব্যবহৃত কালো পলিথিন ৫০ পিস, একটি ছোট পাটের বস্তা, দুটি ধারালো ছুরি, একটি কাঁচি, একটি ফ্রেমসহ রেত, রক্তমাখা পোশাক, কাপড়ের বেল্ট ও হেক্সো ব্লেড। এর মধ্যে হত্যায় ব্যবহৃত সরঞ্জাম টঙ্গীর চেরাগআলী বাজার থেকে কেনেন আসামিরা।এদিকে চট্টগ্রাম থেকে আসামি আপেল মাহমুদ সাদেক, সাজ্জাদ হোসেন রনি ও সাদেকের স্ত্রী শাওন বেগমকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, আাসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ ও স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে হত্যাকাণ্ডের লোমহর্ষক বর্ণনা পাওয়া যায়। আসামি, ভুক্তভোগী ও বাদী সবার বাড়ি নরসিংদী সদর থানার করিমপুর এলাকায় হওয়ায় তারা পরস্পরের পরিচিত। তাদের নামে একাধিক মাদকের মামলাও ছিল। তাই পারস্পরিক সম্পর্ক থাকলেও তাদের সুনির্দিষ্ট কোনো পেশা ছিল না। টঙ্গীর বনমালা রোডে সাদেকের ভাড়া বাসা ঘিরেই ছিল তাদের সমস্ত অপরাধ কর্মকাণ্ড। আসামিদের দেওয়া তথ্যমতে, অলি, রনি এবং জনৈক সাকিব ও রুস্তমের অবাধ যাতায়াত ছিল সাদেকের বাসায়। সাদের স্ত্রীর সঙ্গে রুস্তমের ও সাকিবের স্ত্রীর সঙ্গে রনির অনৈতিক সম্পর্কের খবর প্রচার করেন অলি। এতে অলির প্রতি ক্ষিপ্ত হন সাদেক ও রনি।জবানীতে আরো বলা হয়, সাদেকের ভাগিনা করিমপুরের হৃদয়কে পূর্বশত্রুতার জেরে অলিকে হত্যার পরিকল্পনা করেন বলে জানতে পারেন সাদেক। সব মিলিয়ে ক্ষোভের মাত্রা বেশি হওয়ায় সাদেক ও রনি কৌশলে ৬ আগস্ট টঙ্গীতে সাদেকের বাসায় অলিকে ডেকে আনেন এবং বনমালা রেললাইন এলাকায় ট্রেনের নিচে ফেলে হত্যার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। অবশেষে সাদেকের বাসায় অলিকে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করেন সাদেক ও রনি। এরপর হেক্সো ব্লেড দিয়ে লাশ কেটে ৮ টুকরা করে দুটি ট্রাভেল ব্যাগে রাখেন তারা। ৮ আগস্ট ভোরে একটি অটোরিকশায় করে টঙ্গী স্টেশন রোডে ব্যাগ দুটি ফেলে পালিয়ে যান সাদেক ও রনি।টঙ্গী পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহম্মদ ফরিদুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আমরা আসামি ও তাদের অবস্থান শনাক্ত করতে সক্ষম হই। আমরা সাদেকের পরিচিত জনৈক বাপ্পীকে নিয়ে ঘটনাস্থল শনাক্ত করে ভুক্তভোগীর মাথা, পোশাক ও হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত সব আলামত উদ্ধার করি। আসামিরা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে এখন কারাগারে রয়েছেন।