দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোলে জাল ম্যানিফেস্ট ব্যবহার করে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকির চাঞ্চল্যকর অভিযোগ উঠেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, দীর্ঘদিন ধরে সংঘবদ্ধ একটি চক্র কৌশলে একই ম্যানিফেস্ট একাধিকবার ব্যবহার করে ভারত থেকে বিপুল পরিমাণ পণ্য আমদানি করছে। এ প্রক্রিয়ায় জাতীয় অর্থনীতি যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনি বৈধ আমদানিকারকরা প্রতিযোগিতায় টিকতে হিমশিম খাচ্ছেন।
আমদানি বা রপ্তানি পণ্যের নাম, পরিমাণ, ওজন, উত্স দেশ, গন্তব্য এবং আমদানিকারকের তথ্যকে কার্গো ম্যানিফেস্ট বলা হয়।এই নথির ভিত্তিতেই আমদানি-রপ্তানির সময় শুল্ক আরোপ করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, বেনাপোলে ওই নথির তথ্য জালিয়াতির মাধ্যমে উচ্চ শুল্কের পণ্য, বিশেষ করে কসমেটিকস ও ফেব্রিকস অবৈধভাবে আমদানি করা হচ্ছে।বেনাপোল কাস্টমসের নথি অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ৫০১টি ম্যানিফেস্টের বিপরীতে কোনো বিল অব এন্ট্রি জমা পড়েনি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দাখিল হওয়া ৮৯১টি ম্যানিফেস্টের মধ্যে সঠিক ছিল মাত্র ২১৭টি।বাকি ৬৭৪টি ম্যানিফেস্ট কাস্টমসের ‘অ্যাসাইকুডা’ সিস্টেমে মেলেনি।জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) গত ১৭ ফেব্রুয়ারি এবং ৫ মে দুটি আলাদা চিঠিতে বেনাপোল কাস্টম হাউসের কাছে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়েছে। তবে সন্তোষজনক জবাব এখনো পাওয়া যায়নি। এনবিআরের নির্দেশে অভ্যন্তরীণ অডিট ও তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে, যদিও কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এখনো দৃশ্যমান ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।স্থানীয় ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে বলেন, কিছু প্রভাবশালী কর্মকর্তার যোগসাজশে নিয়মিতভাবেই কাগজপত্র ছাড়াই পণ্যবোঝাই ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। ফলে বৈধ পথে আমদানিকারকরা প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছেন না। শুল্ক ফাঁকি দেওয়া পণ্য বাজারে কম দামে পাওয়া যায়, যা দেশীয় শিল্পের জন্য বড় ধরনের হুমকি তৈরি করছে।সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান হবি বলেন, একই ম্যানিফেস্ট দুই থেকে পাঁচবার, এমনকি দশবারও ব্যবহার করা হয়েছে। এতে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হয়েছে।বিশেষ করে উচ্চ শুল্কের পণ্য আমদানিতে এ ধরনের অনিয়ম বেশি হয়েছে।বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি খাইরুজ্জামান মধু বলেন, ‘ভারতীয় কাস্টমস সাইডের এক্সপোর্ট জেনারেল ম্যানিফেস্ট (ইজিএম) যাচাই করলে কতগুলো ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে, কী পণ্য এসেছে আর ওজন কত ছিল এসব তথ্য সহজেই বের হয়ে আসবে। আমরা চাই প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হোক।’বেনাপোল স্থলবন্দরের পরিচালক মো. শামীম হোসেন বলেন, ‘কিছু ম্যানিফেস্টে পুনরাবৃত্তি পাওয়া গেছে। বিষয়টি আমরা গুরুত্ব দিয়ে দেখছি এবং ভবিষ্যতে যেন আর কেউ এ ধরনের অসত্ পন্থা অবলম্বন করতে না পারে, সে জন্য সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে।’অন্যদিকে বেনাপোল কাস্টম হাউসের সহকারী কমিশনার মো. রাজন হোসেন জানান, কিছু ম্যানিফেস্ট দাখিল হলেও বিল অব এন্ট্রি জমা হয়নি। অনিয়ম ধরা পড়ায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কার্যক্রম চলমান।