দীর্ঘমেয়াদি স্নায়ুজনিত রোগ ও পক্ষাঘাতগ্রস্ত রোগীদের সর্বাধুনিক চিকিৎসাসেবা দিতে বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএমইউ) সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে সর্বাধুনিক রোবটিক রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার চলু করা হয়েছে।রবিবার (৩১ আগস্ট) এ সেন্টারের উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম।বিএমইউ’র উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলমের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান, বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. সাইদুর রহমান।বিএমইউ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের বেইজমেন্টে স্থাপিত দেশের প্রথম সর্বাধুনিক রোবটিক রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার পরিদর্শন ও উদ্বোধন করেন।প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম বলেন, রোবটিক রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টারকে যতটা সম্ভব বিকেন্দ্রীকরণ করা প্রয়োজন। বিশেষ করে আরো তিন-চারটি জেলায় যাতে এটা ছড়িয়ে দেওয়া যায়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় একটি বড় হাসপাতাল। এখানে অনেক বড় কিছু হওয়ার সম্ভাবনা আমরা দেখি।রোবটিক রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার প্রতিষ্ঠায় সহায়তার জন্য চায়না সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞা প্রকাশ করে তিনি বলেন, দায়িত্ব নেওয়ার পর আমরা যখন হাসপাতাল ভিজিট করে দেখলাম অনেক মানুষের হাত-পা অকেজো হয়ে আছে, তখন তাদের উন্নত চিকিৎসার কথা ভাবলাম। আমরা চীনকে বলেছিলাম আমাদের ১০-১৫টা রোবট দিতে পারলে আমরা চিকিৎসা কার্যক্রমটা চালাতে পারতাম, তারা আমাদের ৫৭টি রোবট দিয়েছেন। এছাড়া চীনের প্রতিনিধিরা রোবটের মেইনটেনেন্স সক্ষমতার জন্য আমাদের ২৯ জনকে ট্রেনিং দিয়েছেন।বিশেষ অতিথির বক্তব্যে চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেন, বন্ধু রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাত উন্নয়নে চীন সরকার সব ধরনের সহায়তা করে যাবে।সম্প্রতি বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন রোগীদের, বিশেষ করে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান দুর্ঘটনায় আহতদের চিকিৎসায় চীন অতি দ্রুত সহায়তা প্রদান করেছে।তিনি বলেন, চীনে বাংলাদেশিরা যাতে স্বল্প খরচে উন্নত চিকিৎসা সেবা পান, সেই ব্যবস্থা নিয়েছে চীন সরকার। সাথে সাথে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা খাতের উন্নয়নেও সহায়তা অব্যাহত রেখেছে। বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু হিসেবে ভবিষ্যতে এ সহায়তা অব্যাহত রাখবে চীন।প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস চীন সফর করায় তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন।বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের চিকিৎসাখাতে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি স্থানান্তরে বা আনয়নে বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় একটি গুরুত্বপূর্ণ হাব হয়ে ওঠবে। এখান থেকেই বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তিসমূহ দেশের সর্বত্র চিকিৎসাখাতে ছড়িয়ে পড়বে বলে আমরা প্রত্যাশা রাখি।সভাপতির বক্তব্যে বিএমইউ’র উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম বলেন, বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আজ একটা ঐতিহাসিক দিন। রোবটিক রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার উদ্বোধনের মাধ্যমে দেশে এআই ভিত্তিক চিকিৎসাসেবা শুরু হলো। এই সেন্টারকে ‘ট্রেনিং অব দ্য ট্রেনার্স’ হিসেবে গড়ে তোলা হবে। বিএমইউকে স্মার্ট ও এআই ভিত্তিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা হবে।অনুষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শনীসহ রোবটিক রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টারের কার্যক্রম বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন ফিজিক্যাল মেডিসিন এন্ড রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুস শাকুর।