মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন:
“وَبَشِّرِ ٱلصَّـٰبِرِينَ ٱلَّذِينَ إِذَآ أَصَـٰبَتْهُم مُّصِيبَةٌ قَالُوٓا۟ إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّآ إِلَيْهِ رَٰجِعُونَ”
‘আর ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দিন; যারা বিপদে পড়লে বলে: ‘নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর জন্য এবং নিশ্চয়ই তাঁর দিকেই প্রত্যাবর্তনকারী।’
এই আয়াত সন্তান হারানোর গভীর ক্ষতেও এক অনন্য আশার বার্তা দেয়। আল্লাহ তায়ালা পরবর্তী আয়াতে বলেন:
“أُو۟لَـٰٓئِكَ عَلَيْهِمْ صَلَوَٰتٌۭ مِّن رَّبِّهِمْ وَرَحْمَةٌۭ ۖ وَأُو۟لَـٰٓئِكَ هُمُ ٱلْمُهْتَدُونَ”
‘তাদের প্রতি তাদের প্রভুর পক্ষ থেকে রয়েছে দরুদ ও অনুগ্রহ, এবং তারাই সৎপথপ্রাপ্ত।
“ إِذَا مَاتَ وَلَدُ الْعَبْدِ قَالَ اللَّهُ لِمَلاَئِكَتِهِ قَبَضْتُمْ وَلَدَ عَبْدِي . فَيَقُولُونَ نَعَمْ . فَيَقُولُ قَبَضْتُمْ ثَمَرَةَ فُؤَادِهِ . فَيَقُولُونَ نَعَمْ . فَيَقُولُ مَاذَا قَالَ عَبْدِي فَيَقُولُونَ حَمِدَكَ وَاسْتَرْجَعَ . فَيَقُولُ اللَّهُ ابْنُوا لِعَبْدِي بَيْتًا فِي الْجَنَّةِ وَسَمُّوهُ بَيْتَ الْحَمْدِ ”
কোনো বান্দার কোনো সন্তান মারা গেলে তখন আল্লাহ্ তা’আলা তার ফেরেশতাদের প্রশ্ন করেন, তোমরা আমার বান্দার সন্তানকে কি ছিনিয়ে আনলে? তারা বলে, হ্যাঁ। পুনরায় আল্লাহ্ তায়ালা প্রশ্ন করেন, তোমরা তার হৃদয়ের টুকরাকে ছিনিয়ে আনলে? তারা বলে, হ্যাঁ। পুনরায় তিনি প্রশ্ন করেন, তখন আমার বান্দা কী বলেছে? তারা বলে, সে আপনার প্রতি প্রশংসা করেছে এবং ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ পাঠ করেছে। আল্লাহ্ তায়ালা বলেন, জান্নাতের মধ্যে আমার এই বান্দার জন্য একটি ঘর তৈরি কর এবং তার নাম রাখ “বাইতুল হামদ” বা প্রশংসালয়। (তিরমিজি, হাদিস: ১০২১)
যে সন্তান হয় জান্নাতে পথপ্রদর্শক
এ হাদিসটি দেখুন-
عَنْ أَبِي حَسَّانَ، قَالَ: قُلْتُ لِأَبِي هُرَيْرَةَ: إِنَّهُ قَدْ مَاتَ لِي ابْنَانِ، فَمَا أَنْتَ مُحَدِّثِي عَنْ رَسُولِ اللَّهِ ﷺ بِحَدِيثٍ تُسَرُّ بِهِ أَنْفُسُنَا عَنْ مَوْتَانَا؟ قَالَ: نَعَمْ، صِغَارُهُمْ دَعَامِيصُ الْجَنَّةِ، يَلْقَى أَحَدُهُمُ أَبَاهُ – أَوْ قَالَ: أَبَوَيْهِ – فَيَأْخُذُ بِثَوْبِهِ – أَوْ قَالَ: بِيَدِهِ – كَمَا آخُذُ أَنَا بِصَنِفَةِ ثَوْبِكَ هَذَا، فَلَا يَتَنَاهَى – أَوْ قَالَ: فَلَا يَنْزِعُهُ – حَتَّى يُدْخِلَهُ اللَّهُ وَإِيَّاهُ الْجَنَّةَ.
‘আবু হাসসান বলেন,আমি আবু হুরায়রা (রা.)-কে বললাম, ‘আমার দুটি সন্তান মারা গেছে। আপনি কি আমাদের জন্য রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর পক্ষ থেকে এমন কোনো হাদিস বলবেন, যা আমাদের মনকে সান্ত্বনা দেবে?’ তিনি বললেন, ‘ছোট ছোট শিশুরা জান্নাতের মাঝে বিচরণকারী। তাদের একজন তার পিতা (বা বলেন, তার পিতা-মাতা)-কে দেখলে তার কাপড় ধরে রাখে। ঠিক যেমন আমি এখন তোমার কাপড় ধরে রেখেছি এবং সে থামে না যতক্ষণ না আল্লাহ তাকে এবং তার পিতা-মাতাকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দেন।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৬৩৫ )
এ যেন মৃত্যুর মর্মন্তুদ বেদনার মাঝেও এক অপার্থিব সান্ত্বনা। যে সন্তানকে হারানো হলো, সে-ই হবে জান্নাতের পথপ্রদর্শক।
প্রিয় পিতা-মাতা, আপনি যদি সন্তান হারিয়ে থাকেন, তবে আপনি জান্নাতের পথে চলার অন্যতম সৌভাগ্যবান মানুষ। আপনি রাসুল (সা.)-এর মতোই দুঃখ ভোগ করেছেন, আল্লাহর দরবারে আপনিও সেইসব বান্দার কাতারে আছেন, যাদের জন্য রয়েছে “বায়তুল হামদ”।
আপনার দুঃখ হোক, অশ্রু হোক, বুকের গহীনে জ্বালাময় রাত হোক। কিন্তু মনে রাখবেন আপনি আল্লাহর রহমতের বাইরে নন। আপনার সন্তান জান্নাতে আছেন এবং ইনশাআল্লাহ একদিন আপনি তার সঙ্গে আবার মিলিত হবেন।
মহান আল্লাহ বলেন:
“وَٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ وَٱتَّبَعَتْهُمْ ذُرِّيَّتُهُم بِإِيمَـٰنٍ أَلْحَقْنَا بِهِمْ ذُرِّيَّتَهُمْ…”
‘যারা ঈমান এনেছে এবং তাদের সন্তানরাও ঈমানে তাদের অনুসরণ করেছে, আমি তাদের সঙ্গে তাদের সন্তানদেরকে মিলিয়ে দেব…’
(সুরা আত-তূর, আয়াত : ২১)
কাজেই আমাদের শোক সংযমে রূপান্তরিত হোক, অশ্রু হয়ে উঠুক ইবাদতের ফোয়ারা, আর হারানো সন্তান হোক জান্নাতের ঠিকানায় আপন আলো…।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে সবর করার মাধ্যমে শোককে নববী উপায়ে শান্তনায় রুপান্তরিত করে জান্নাতের বাইতুল হামদ এর হকদার হওয়ার তাওফিক দান করুন।